
বাঁহাতি স্পিনার। ব্যাট করেন চার–পাঁচে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে এর আগেও এমন ক্রিকেটার এসে কিংবদন্তি হয়েছেন এবং তাঁর নামের শুরু ‘স’ দিয়ে। যে তরুণের কথা বলা হচ্ছে, তাঁর নামও তা–ই।
যাঁর কিংবদন্তি হয়ে ওঠার কথা বলা হলো, এতক্ষণে তাঁর নামটা আন্দাজ করে ফেলার কথা—সাকিব আল হাসান। যে ছেলেটির কথা বলা হলো, তাঁর নাম সামিউন বাসীর। সামিউনের গল্প একটু পরে বলা যাক। কারণ, মিরপুর একাডেমি মাঠে আজ সকালে সামিউনের সঙ্গে আলাপচারিতার মাঝেই হাজির আরেকজন, তিনি সামিউনেরই সতীর্থ।
একাডেমি ভবনের নিচতলায় সামিউনের সঙ্গে কথা বলার সময় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দলের পেস বোলিং অলরাউন্ডার রিজান হোসেনের সঙ্গেও দেখা হয়ে যায়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে পেস বোলিং অলরাউন্ডারের জাতটা বিরল। রিজানের কাছে জানতে চাওয়া হলো, আপনি কার মতো হতে চান? মুখের চওড়া হাসিতে উত্তর এল, ‘ভাই, আমার প্রিয় তো বেন স্টোকস…।’
কেন ইংল্যান্ডের এই ক্রিকেটার তাঁর প্রিয়, সে ব্যাখাও দিলেন, ‘দেখলেন না, বিশ্বকাপে–অ্যাশেজে কীভাবে চাপ সামলে জিতিয়ে দিল ইংল্যান্ডকে!’ স্টোকসের একটা ছবি টাঙানো আছে রিজানের রুমে, ফোনও ভর্তি স্টোকসের ছবিতে। স্টোকস যখন, যেখানে খেলতে নামেন, রিজানের চোখ দুটো তাঁকে অনুসরণ করে।
স্টোকসের চাপ সামলে নেওয়ার অভ্যাস রপ্ত করেছেন রিজানও। জিম্বাবুয়েতে ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কালই ফিরেছেন বাংলাদেশে—দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফাইনালে ৯৫ রানের ইনিংসের পাশাপাশি ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা রিজান।
স্টোকসের মতো চাপের মধ্যে খেলা কি আপনারও প্রিয়? রিজানের উত্তর, ‘হ্যাঁ, তখন সুন্দরভাবে খেলা গুছিয়ে দলকে আস্তে আস্তে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে নেওয়া, পরিকল্পনামাফিক খেলা যায়—এসব খুব উপভোগ করি।’ রিজান যে ক্রিকেটারের মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখে বেড়ে উঠছেন, সেই স্টোকসের সঙ্গে কোনো দিন দেখা হলে তাঁর কাছে এ বিষয়ে পরামর্শও নিতে চান তিনি, ‘স্টোকসের সঙ্গে কখনো দেখা হলে এটাই জানতে চাইব, এত চাপ কীভাবে সামলে নেন!’
রিজানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাঙ্গাইলে। তাঁরা দুই ভাই–ই ক্রিকেট খেলেন। বাবা কোচ। রিজানের ক্রিকেটের হাতেখড়িও বাবার হাত ধরে। টাঙ্গাইল স্পোর্টস একাডেমি হয়ে নানা ধাপ পেরিয়ে এখন যুব ক্রিকেটে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন রিজান। তবে তাঁর স্বপ্নের দুয়ারটা আরও অনেক দূর বিস্তৃত, ‘আমি তো চাই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার হতে।’
এ কাজটা যে সহজ হবে না, তা জানা আছে রিজানেরও, ‘পেস বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিং করা তো সহজ কাজ নয়। আমি চেষ্টা করছি যে গাইডলাইনগুলো দেওয়া হচ্ছে, সেসব মেনে চলার।’
পাশে দাঁড়িয়ে তখন রিজানের কথাগুলো শুনছিলেন সামিউন। তাঁর বেড়ে ওঠা কুষ্টিয়ায়, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের নামে গড়া একাডেমিতে। তাঁর বড় ভাই কাজী ইকরামুল বাশারের কোচিংয়ে বেড়ে ওঠা সামিউনের এরই মধ্যে অভিষেক হয়েছে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে।
এ বছর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে অভিষেকে ৫ উইকেট নেন সামিউন। অনূর্ধ্ব–১৯ দলের হয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজেও ব্যাটে–বলে ভালো করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১ রানের নাটকীয় জয়ের ম্যাচে ৩৯ বলে ৪৫ রানের অপরাজিত ছিলেন।
ক্রিকেটের সঙ্গে সামিউনের সখ্য কলেজশিক্ষক বাবার হাত ধরে। এলাকার বড় ভাইদের সঙ্গে খেলতে খেলতে একসময় ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পথ বেছে নেন। তখন থেকেই তাঁর স্বপ্নে ঢুকে যান সাকিব আল হাসান। মিরপুরে অনূর্ধ্ব–১৭ দলের ক্যাম্প করার সময় সাকিবকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন সামিউন।
সাকিবের সঙ্গে ছবি তোলেননি—এ প্রশ্নে একটু লজ্জা পেয়েই সামিউন বলেন, ‘নাহ ভাই, আমার কারও সঙ্গে ছবি তুলতে ভালো লাগে না।’ তাই বলে সাকিবের সঙ্গেও না? এবার মুখে হাসি এনে বললেন, ‘ওনার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা আছে। আবার যদি দেখা হয়ে যায় কখনো…।’ দেখা না হলেও সামিউনের স্বপ্নজুড়ে আছেন সাকিবই, ‘কখনো যদি জাতীয় দলে ঢুকতে পারি, তাহলে আমার স্বপ্ন—অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে নামটা আমার হবে!’
একটু পর আলোকচিত্রী এসে সামিউন ও রিজানকে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে ছবি তুললেন। শুরু হয় দুজনের খুনসুটি আর বন্ধুত্বের গল্পও। একাডেমি মাঠের এমন ছোট ছোট স্বপ্ন এগিয়ে নেয় বাংলাদেশের ক্রিকেটকেই। সামিউন সাকিবের মতো হতে চান, রিজান হতে চান বেন স্টোকসের মতো। তাঁরা কি পারবেন?
উত্তর দেবে সময়।