টি–টোয়েন্টিতে বছরটা ভালো কেটেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল
টি–টোয়েন্টিতে বছরটা ভালো কেটেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

টি–টোয়েন্টিতে কেমন গেল বাংলাদেশের ২০২৫ সাল

বিপিএল ভালো করা কারও কি বিশ্বকাপ দলে ঢোকার সুযোগ আছে? গত পরশু আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শেষের সংবাদ সম্মেলনে সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দেননি অধিনায়ক লিটন দাস। কিন্তু তাঁর বিশ্বাস, ফেব্রুয়ারির বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দল প্রস্তুতই আছে। এ বছর খেলা ৩০ টি-টোয়েন্টিতে রেকর্ড ১৫ জয়ের পথে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পর এখন তাঁদের চোখ বিশ্বকাপে।

এ বছর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে না বাংলাদেশ। বিপিএলের পরই ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বকাপের চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জের আগে দেখে নেওয়া যাক বছরটা টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের কেমন কেটেছে।

ছক্কায় ছক্কায়

এ বছর বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে ছক্কা মারার সামর্থ্যে। টি-টোয়েন্টিতে এক পঞ্জিকাবর্ষে এক শর বেশি ছক্কা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা এর আগে একবারই মেরেছিলেন, ২০২৩ সালে তাঁদের ব্যাট থেকে এসেছিল ১২২ ছক্কা।

সেটিকে ছাড়িয়ে এ বছর তাঁরা গেছেন আরও অনেক দূরে। ২০২৫ সালে রেকর্ড ২০৬টি ছক্কা মেরেছেন। এত ছক্কা মারা প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের রান তোলার গতিতেও। বছরজুড়ে ১২৫.৯৭ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন তাঁরা, অন্তত ৫ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন—এমন বছরগুলোর মধ্যে ব্যাটসম্যানদের এটিই সর্বোচ্চ রান তোলার গতি।

তানজিদ হাসান ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছেন

তানজিদ যেখানে আলাদা

গত বছরের মে মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয় তানজিদ হাসানের। পরের বছরটাতেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের বেশ কয়েকটি রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। বছরজুড়ে ওপেনিংয়ে তিনি ভরসা হয়েছেন দলের জন্যও।

এবার বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কত বেশি ছক্কা মেরেছেন, তার একটি ধারণা পাওয়া যাবে একটা তালিকার দিকে তাকালেই—এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডটা এত দিন ছিল জাকের আলীর। ২০২৪ সালে ২১টি ছক্কা মেরেছিলেন তিনি। অথচ এ বছর শেষে তিনি চলে গেছেন ৫ নম্বরে।

লিটন দাস (২৩), সাইফ হাসান (২৯), পারভেজ হোসেন (৩৪) নিজেদের নাম জাকেরের ওপরে তুলেছেন এ বছর। তাঁদের তিনজনকেও ছাড়িয়ে গেছেন ওপেনার তানজিদ হাসান, এ বছর ২৭ ইনিংসে ৪১ ছক্কা এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে।

এক পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কা মারার রেকর্ডটি এখন তাঁরই। শুধু ছক্কাই নয়, এই সংস্করণে এক পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানও এখন তাঁর। ২০২৫ সালে ২৭ ইনিংসে ১৩৫–এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ৭৭৫ রান করেছেন তানজিদ।

মিডল অর্ডারে শামীম হোসেনরা প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন

মিডল–অর্ডার দুশ্চিন্তা

ব্যাটিংয়ে টপ অর্ডারে কমবেশি ধারাবাহিকতা ছিল বছরজুড়েই। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা হয়ে থেকেছে মিডল অর্ডার। বিশ্বকাপে এসব জায়গায় কে খেলবেন, সেটিও এখনো স্পষ্ট নয়। বছরজুড়ে ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে জাকের আলী-শামীম হোসেন-তাওহিদ হৃদয়-নুরুল হাসানদের চেষ্টা করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে তাঁরা রান করলেও পুরোপুরি আস্থা জোগাতে পারেননি।

প্রায় পুরো বছর টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন বাংলাদেশের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টিতে চারে নেমে পারভেজ হোসেনের ২৬ বলে ৩৪ রানের ইনিংসের পর এখন তাঁদের স্ট্রাইক রেট তৃতীয় সর্বনিম্ন। বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হতে পারে মিডল অর্ডারের ব্যাটিং।

বোলিংয়ে ভরসা

কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের জন্য বড় ভরসা হয়ে উঠেছেন বোলাররা। এবারও সেটির ব্যতিক্রম হয়নি। বাংলাদেশের জন্য এ বছর বাড়তি প্রাপ্তি লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের পারফরম্যান্স। ২৫ ম্যাচ খেলে ৮.২৫ স্ট্রাইক রেটে ৩৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাকি দুই স্পিনার নাসুম আহমেদ ও মেহেদী হাসানও বাংলাদেশকে ম্যাচ জিতিয়েছেন। ভালো পারফরম্যান্সের পরও তাঁদের ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে খেলাতে হয়েছে।

দলের ভরসা মোস্তাফিজুর রহমান

পেস বোলিংয়ে বাংলাদেশের নেতৃত্বটা আছে মোস্তাফিজুর রহমানের কাছেই। কৃপণ বোলিংয়ের সঙ্গে নিয়মিত উইকেট নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন তিনিও। এ বছর ৬.০৯ গড়ে ওভারপ্রতি রান দিয়ে ২৬ উইকেট নিয়েছেন। তাসকিন আহমেদ-শরীফুল ইসলাম-তানজিম হাসানদের পারফরম্যান্স নিয়েও সন্তোষই আছে দলের। তাঁদের সামনে চ্যালেঞ্জ বিশ্বকাপেও সেটি ধরে রাখা