
যশপ্রীত বুমরা বিমান নামিয়ে দেওয়ার উদ্যাপন করেন। পেশাদারিত্বের মোড়কে ঢেকে থাকা প্রেসবক্স ভাসে করতালির উচ্ছ্বাসে। ক্রিকেটীয় লড়াইটাও বন্দী হয় এই উচ্ছ্বাস–উদ্বেগের অদ্ভুত বৃত্তে। উড়তে থাকা পাকিস্তান ৩৩ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে নেমে যায় তলানিতে। ডুবতে থাকা ভারত ২০ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেও ম্যাচ জেতে ২ বল আর ৫ উইকেট হাতে রেখে।
আনন্দ–বেদনার কাব্যের সেই অনুভূতি ছুঁয়ে যায় দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারিকেও। ১৮তম ওভারের শেষ বলে হারিস রউফের বলে শিবম দুবের শটটা গ্যালারিতে আছড়ে পড়লে সমীকরণ হয়ে যায় ১২ বলে ১৭ রানের, গ্যালারির দুই দলের দর্শকেরা তখন মুখের বিবাদ থেকে জড়িয়ে পড়েন হাতাহাতিতে।
চিন্তা বাড়ে মাঠেও। ফাহিম আশরাফ বল করতে গিয়ে থমকে যান, ৮ মিনিট বন্ধ থাকে খেলা। গল্পে নতুন মোড় আবার। যে গল্পটা শুরু থেকেই ছুটেছে একেবারেই আপন গতিতে। ‘ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা’ ছাড়া আর কোনো বাস্তব তত্ত্বই মেনে চলেনি তা। তবে শেষের আনন্দটা সঙ্গী হয়েছে ভারতেরই। ওয়ানডে, টি–টোয়েন্টি মিলিয়ে নবমবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা জিতল ভারত, টি–টোয়েন্টি সংস্করণের এশিয়া কাপে তা এল দ্বিতীয়বারের মতো। ওয়ানডে সংস্করণের এশিয়া কাপেও তারাই বর্তমান চ্যাম্পিয়ন।
এর আগে সূর্যকুমারকে উত্তেজনা সঙ্গী করে কথা বলতে দেখা গেছে সতীর্থদের সঙ্গে, মাইক হেসন বার্তা পাঠিয়েছেন প্রায় প্রতি ওভার শেষেই। শুরুতে ওয়াইড না দিলেও পরে রিপ্লে দেখে ওয়াইড দিলে শাহিন শাহ এগিয়ে গিয়ে হারিস রউফকে বলেছেন মাথা ঠান্ডা রাখতে। উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে উঠেছে কখনো, কখনো বরফ শীতল সময়ও এসেছে।
টস হেরে ব্যাট করতে নামার পর পাকিস্তানের শুরুটাই চিন্তা করুন। ৮৪ রানে গিয়ে তাঁরা হারায় প্রথম উইকেট। প্রায় পুরো টুর্নামেন্টে রান তুলতে কষ্ট করে যাওয়া দলটা ফাইনালে এমনই এক শুরু পেয়ে যায়, পাঁচ দলের টুর্নামেন্টে এর আগে যা দেখেনি কোনো দেশই।
বুমরা–ভীতি কাটিয়ে তাতে নেতৃত্ব দেওয়া সাহিবজাদা ফারহান হাফ সেঞ্চুরি পান। গড়েন এমন এক কীর্তি—যা বুমরার বিপক্ষে করতে পারেননি অনেক বড় বড় ব্যাটসম্যানও। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁকে মারেন তিন ছক্কা। অথচ তাঁর গড়ে দেওয়া এমন ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে পাকিস্তান যা করল, তা হয়তো করতে পারে কেবল তারাই। ১১৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানো দলটাই কিনা ৩৩ রানে শেষ ৯ উইকেট হারিয়ে অলআউট ১৪৬ রানে!
কুলদীপ যাদবেরই তাতে কৃতিত্ব বেশি। প্রথম দুই ওভারে ২৭ রান হজম করা এই বোলার পরের দুই ওভারে ৭ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েই ইনিংস শেষ করে পাকিস্তান। তখনই সবাই ধরে নিয়েছিলেন এশিয়া কাপ ফাইনালে সহজ জয়ই পেতে যাচ্ছে ভারত।
সেটি শেষ পর্যন্ত হয়েছেও। তার আগে ম্যাচের বাঁক বদলেছে বারবারই। শুরুটা ম্যাচের আগে থেকেই আলোচনার তুঙ্গে থাকা বুমরা–অভিষেক শর্মা লড়াইয়ে। শাহিন লড়াইটা জিততে পারেননি ঠিকই; তবে তাঁর ৫ বলে কোনো বাউন্ডারি মারতে না পারা চাপে ফেলে দেয় টুর্নামেন্টে দুই শর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা অভিষেককে। ফাহিম আশরাফের পরের ওভারের প্রথম বলেই তিনি ফিরে যান ড্রেসিংরুমে।
ভারত ২০ রানের মধ্যে হারিয়ে ফেলে সূর্যকুমার যাদব আর শুবমান গিলকেও। পাকিস্তানের মনে যেন স্বপ্নের দুয়ার খোলে। মাঝখানে অনেক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও সেটি জেগে ছিল রউফকে মারা দুবের ছক্কা পর্যন্ত। ১৯তম ওভারের শেষ বলে দুবে আউট হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে একটু আশাও জাগে তাদের।
কিন্তু হুসেইন তালাত ক্যাচ ছেড়ে দেওয়ার পর জীবন পাওয়া তিলক বর্মা তখন পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলেন এক প্রান্তে। ৫৩ বলের ইনিংসে ৩ চার ও ৪ ছক্কার ইনিংসে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান দলকে।
কিন্তু নিয়তি বড়ই অদ্ভুত। পুরো টুর্নামেন্টে একটা ম্যাচ খেলার অপেক্ষায় থাকা রিংকু সিংই বল বাউন্ডারি ছাড়া করে ম্যাচ জিতিয়ে দেন ভারতকে। তখনই নন–স্ট্রাইক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা তিলক আনন্দে দৌড় শুরু করেন ড্রেসিংরুমের দিকে। হতাশ পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা হাঁটা শুরু করেন গ্যালারির দিকে।
রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের শেষ দৃশ্যেও হাত মেলানোটাই রীতি ছিল এই এশিয়া কাপের আগে। তবে এখন অন্তত ভারত–পাকিস্তান ম্যাচে সে আশা না করাই ভালো।