
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৭১ ওভারে ২২০/৮ (প্রথম দিন শেষে)
বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থেকেছে দুই ঘণ্টারও বেশি। সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠের উইকেটেও বোলারদের জন্য কিছু নেই। কিন্তু ব্যাটিং উইকেট মানেই তো এই নয় যে বলে বলে চালাতে হবে! এভাবে খেললে আউট হতে উইকেটে কিছু থাকা লাগেও না। বৃষ্টির সময়টা বাদ দিয়ে কলম্বো টেস্টের প্রথম দিনে আজ বাকি যেটুকু খেলা হলো, তাতেই তাই বাংলাদেশের ইনিংস প্রায় শেষ।
টেস্টের আগের দিনই কলম্বোর উইকেটে গলের ব্যাটিং উইকেটের ছায়া দেখতে পেয়েছিল বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা দুই দল। আজ সকালে টসে জিতে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাটিং নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। উদ্দেশ্য ছিল শ্রীলঙ্কার সামনে বড় সংগ্রহ দাঁড় করানো। তৃতীয়, চতুর্থ দিনে উইকেট থেকে স্পিনাররা সহায়তা পেতে পারেন; তিন স্পিনারের সুবিধা কাজে লাগাতে পরে বোলিং করতে চাওয়ার সেটাও একটা কারণ নিশ্চয়ই।
উইকেট নিয়ে ধারণাটা ভুল ছিল না। সকালের কিছু সিম মুভমেন্ট বাদ দিলে প্রথম দিনে উইকেট থেকে আসলে কিছুই পাননি শ্রীলঙ্কার বোলাররা। এমন উইকেটেও অকারণ তাড়াহুড়া, অতিরিক্ত ও বাজে শট খেলার মাশুল দিয়ে একের পর এক ফিরে গেছেন ব্যাটসম্যানরা। দিনের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আসিতা ফার্নান্দোর বলে বোল্ড হওয়া নাঈম হাসান ছাড়া আর কেউই ভালো কোনো বলে আউট হননি।
পরিণতিতে প্রথম দিনটা শেষ হয়েছে ৮ উইকেটে ২২০ রান তুলে। বাংলাদেশের পাঁচজন ব্যাটসম্যান ভালো শুরু পেয়েছেন, তবু দিন শেষে ফিফটি নেই একটিও। অবশ্য জুটিতেই ‘ফিফটি’ মাত্র একটি, পঞ্চম উইকেটে মুশফিক-লিটনের ৬৭।
২৬ ওভারে ৭১ রান করতে লাঞ্চে যাওয়ার আগেই হারাতে হয় ওপেনার এনামুল হক আর মুমিনুল হকের উইকেট। এনামুলের আউট নিয়ে অবশ্য নতুন করে কিছু বলার নেই। উইকেটে এসে আগের মতোই ধুঁকছিলেন। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আসিতার সামান্য ভেতরে ঢোকা বল ব্যাটের কানায় লাগিয়ে বোল্ড। ১০ বল খেলে নামের পাশে ‘০’। আউট হওয়ার আগেও দুবার স্লিপে ক্যাচের মতো তুলেছিলেন এনামুল।
পরের দিকে শ্রীলঙ্কান ফিল্ডারদের হাত থেকে যেভাবে ক্যাচ পড়েছে তাতে অবশ্য তাঁর দেওয়া সুযোগগুলো হারিয়ে যাচ্ছে আড়ালে। লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম দুজনই দুবার করে জীবন পেয়েও লম্বা করতে পারেননি ইনিংস। লিটন বেঁচেছেন ফাঁকা জায়গায় ক্যাচ তুলে। পরে দুজনকেই আউট করেছেন শ্রীলঙ্কার হয়ে অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা বাঁহাতি স্পিনার সোনাল দিনুশা। ভালো কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়েও ৩৫ আর ৩৪ রানে শেষ হয়েছে মুশফিক, লিটনের ইনিংস। সুইপ শট খেলে একবার জীবন পাওয়া মুশফিক আউটও হয়েছেন সুইপ খেলেই মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে।
মুশফিক চলে যাওয়ার পর নাঈমকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু তিনিও পারেননি দিন পার করে আসতে। দলের রান ২০০ পেরোনোর আগেই বিশ্ব ফার্নান্দোর বলে ক্যাচ দেন স্লিপে।
এনামুলের পর লাঞ্চের আগে বিদায় নিয়েছেন মুমিনুলও। ১৭তম ওভারে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার নিচু হয়ে আসা প্রথম বলেই কাভারে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ওপেনার সাদমান ইসলামের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ভরসাই দিচ্ছিলেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। মুমিনুলের ২১ রানের সংগতে ৩৮ রানে পৌঁছেছিল জুটিটি। অবশ্য লাঞ্চের আগে শেষ বলে রান আউট হয়ে যেতে পারতেন সাদমান নিজেও। বেঁচে যান নিশাঙ্কার থ্রো স্টাম্পে না লাগায়।
লাঞ্চের আগে ২ উইকেট, চা বিরতির আগে পড়েছে আরও ৩টি, আর শেষ সেশনে ৭৬ রান আসে ৩ উইকেট হারিয়ে। নাজমুল এবং শুরু থেকে ইতিবাচক ব্যাটিং করা সাদমান আউট হয়েছেন লাঞ্চের পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওভারের শেষ বলে।
নাজমুলকে করা বিশ্ব ফার্নান্দোর ভেতরে আসা বলটা স্টাম্পের বাইরে দিয়েই যেত। তবু বিবেচনার ভুলে শেষ মুহূর্তে তাতে ব্যাট ছুঁইয়ে কট বিহাইন্ড হয়ে যান নাজমুল। আর সাদমান স্লিপে ক্যাচ হয়েছেন থারিন্দুর করা উইকেটের অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ সাত বাউন্ডারিতে করা সাদমানের ৪৬।
সব মিলিয়ে দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডটা রইল অস্বস্তিরই।