
• বাংলাদেশে আফ্রিকানদের ছড়াছড়ি।
• দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁরা ফুটবলার পরিচয়ে খেলে থাকেন।
• বেশির ভাগ আফ্রিকানেরই নেই ভিসার মেয়াদ।
• বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁদের নাম।
‘ভাই দুইটা ব্যাগি (ডিফেন্ডার), তিনটা মাঝমাঠ ও দুজন ওপরের খেলোয়াড় (স্ট্রাইকার) পাঠাবেন। তয় হইতো হইবো বিদেশি’—গ্রাম থেকে এভাবেই ফোন আসে ঢাকার নামকাওয়াস্তে তৃণমূল ফুটবল সংগঠকদের কাছে। তাদের হাতে মজুতও থাকে বিদেশি খেলোয়াড়। ব্যস, কাজটা শুধু একটা মাইক্রোবাস ঠিক করে উঠিয়ে দেওয়া।
ফুটবল মৌসুমে এভাবেই প্রতিদিন গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েন শ খানেক ‘বিদেশি ফুটবলার’। আসলে ফুটবলার না বলে বলা ভালো আফ্রিকান মানুষ। কেননা, পেশাদার ফুটবলের সঙ্গে তাঁরা একেবারেই যোগাযোগবিহীন। জেলা শহর ও গ্রামগঞ্জে খেলার জন্য তাঁদের একমাত্র যোগ্যতা তাঁরা আফ্রিকান। ফুটবলে লাথি দিতে পারা না-পারাটা কোনো প্রশ্নই নয়।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল ও ঢাকার ফুটবল মরা গাঙ হলেও জেলা শহর ও গ্রামগঞ্জের ফুটবল বরাবরই রমরমা। বৃষ্টির মৌসুম শুরু ও ধান কাটা শেষ হলেই স্থানীয় মাতব্বরদের সৌজন্যে ধুম পড়ে যায় ফুটবল টুর্নামেন্টের। দর্শকে টইটম্বুর হয়ে ওঠে খেলার মাঠ। যার অন্যতম আকর্ষণ আফ্রিকান ফুটবলার। তাঁদের দাপটে স্থানীয় ফুটবলারদের মাঠে নামারই সুযোগ হয় না। তাই জেলা শহরগুলো থেকে প্রচুর উঠতি ফুটবলারের অভিযোগ থাকে ভাড়াটে আফ্রিকানদের বিপক্ষে।
বাংলাদেশের অন্যতম ধনী জেলা সিলেট যেন আফ্রিকান ফুটবলারদের অভয়ারণ্য। সেখানে খেলতে পারলেই পাওয়া যায় কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। কোনো কোনো ম্যাচে দেখা যায় দুই দল মিলিয়ে ২২ জনই আফ্রিকান ফুটবলার। অনেকে ঠিকমতো লাথিও দিতে পারেন না ফুটবলে। মজার বিষয় হলো, এঁরা বাংলাদেশে ঢুকেছেন বিভিন্ন ক্লাবের চিঠি নিয়েই। অথচ তাঁদের না হয়েছে কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষা, না আছে ভিসার মেয়াদ। বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছে তাঁদের নাম। কিছুদিন আগে বিদেশ থেকে পুরস্কারের কথা বলে এক চিত্রশিল্পীর কাছ থেকে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে আটক হয়েছেন পাঁচ নাইজেরিয়ান। শঙ্কার বিষয় হলো, তাঁদের মধ্যে মরিস, হ্যানরি ও অ্যান্থনিকে দেখা গেছে বিভিন্ন খেলার মাঠেও। এমন অপরাধীরাই ফুটবলের নামে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। ভাবা যায়!
এই ভাড়াটে আফ্রিকানদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। খেলার মাঠে মারামারিসহ নিজ দলের কর্তাদের ব্ল্যাকমেল করার মতো অভিযোগও আছে তাঁদের নামে। বিষয়গুলো নাকি অনেক দিন ধরেই দেখে আসছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের স্ট্রাইকার জাহিদ হাসান এমেলি, ‘আমি প্রায় ১০-১৫ বছর ধরে এ অবস্থা দেখে আসছি। নিজের জেলাতেও প্রচুর মানহীন আফ্রিকানদের খেলতে দেখেছি। যাঁদের জন্য এলাকার উঠতি ফুটবলারদের সুযোগ হয় না। এ ছাড়া জেলা শহরের অনেক ফুটবলার আছেন, যাঁরা খেপ খেলেই সংসার চালিয়ে থাকেন। কিন্তু তাঁরাও এখন খেলতে পারছেন না। আবার এই আফ্রিকানরাই মাঠে নেমে স্থানীয় খেলোয়াড়দের সঙ্গে মারামারি করছেন। দর্শকদের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন। মনে হচ্ছে দেশটা ওদেরই।’
এমেলির অভিযোগগুলো পুরোনো বলেই কয়েক বছর আগে জেলা শহর ও গ্রামগঞ্জে আফ্রিকান ফুটবলার নিষিদ্ধ করেছিল ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি। মাঝে অল্প কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবার কয়েক বছর ধরে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে মানহীন আফ্রিকানরা।
বিষয়টি নিয়ে এত দিন নীরব ভূমিকা পালন করে আসছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। কিন্তু এ ধরনের আফ্রিকানদের নামে এতটাই অভিযোগ উঠেছে যে বাফুফে তাঁদের একটি মিটিংয়ে এজেন্ডাতেই রেখেছেন আফ্রিকান ফুটবলারদের বিষয়টি, ‘কীভাবে বিষয়টি রোধ করা যায়, সে বিষয়ে আমরা ভাবছি। আমরা এপ্রিল মাসে জেলা ফুটবল সংস্থাগুলোর (ডিএফএ) সঙ্গে বিদেশি ফুটবলারদের বিষয় নিয়ে বসব। তাঁদের একটা ভালো গাইডলাইন দেওয়া হবে বিদেশিদের ব্যাপারে।’ বলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ।
ধীরে ধীরে যেভাবে আফ্রিকানদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাচ্ছে, ঠেকাতে না পারলে বিপদ বাড়বেই!