পিএসজিকে লিগ শিরোপা জিতিয়ে কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের বলেছিলেন, তিনি আরেক মৌসুম দলে থাকার সুযোগ পাওয়ার যোগ্য। অনুমান করতে কষ্ট হয় না, দল থেকে ছাঁটাই হওয়ার আশঙ্কা থাকার কারণেই নিজেকে এই ধরনের কথা বলেছিলেন পিএসজি কোচ। পিএসজির চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায়ের পর থেকেই শোনা যাচ্ছিল গালতিয়েরের ছাঁটাই হওয়ার গুঞ্জন। তবে মাঝ মৌসুমে আর কোচ বদলের পথে হাঁটেনি প্যারিসের ক্লাবটি। গালতিয়েকে দিয়েই মৌসুম শেষ করতে যাচ্ছে তারা। কিন্তু এরপর?
গালতিয়ের কি নিজের কাঙ্ক্ষিত দ্বিতীয় সুযোগটি পাবেন, নাকি নতুন কাউকে দলে নিয়ে আসবে পিএসজি? এই মুহূর্তে ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর দেওয়া তথ্য বলছে, গালতিয়েরের ওপর আস্থা রাখার বদলে নতুন কোচ সন্ধানে ব্যস্ত সময় পার করছে ক্লাবটি। যেখানে তাদের সম্ভাব্য পছন্দের তালিকায় আছে জোসে মরিনিও, মার্সেলো গালার্দো, লুইস এনরিকে, থিয়াগো মোতা ও আবেল ফেরেইরার মতো কোচের নাম।
Also Read: পিএসজির উৎসব ফেলে নেইমার ফর্মুলা ওয়ানে
তবে নতুন যিনি কোচ হিসেবে আসবেন, তাঁর জন্য চ্যালেঞ্জও কম নয়। প্রথমত, লিওনেল মেসি ও নেইমার যদি পিএসজি ছেড়ে যান তবে তাঁদের বাদ দিয়ে দল সাজাতে হবে নতুন কোচকে। যা ইউরোপিয়ান মঞ্চে পিএসজির স্বপ্নপূরণের চ্যালেঞ্জকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। তবে নির্দিষ্ট তালিকার বাইরে থেকেও যে কেউ চলে আসতে পারেন ডাগআউটে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।
জোসে মরিনিও
গালতিয়েরে স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব নাম শোনা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে জোসে মরিনিও উল্লেখযোগ্য। স্বল্প বাজেটের এএস রোমাকে নিয়ে এরই মধ্যে দারুণ চমক দেখিয়েছেন মরিনিও। পরপর দুইবার ইউরোপীয় মঞ্চে ফাইনালে তুলেছেন রোমের ক্লাবটিকে। গত বছর রোমাকে কনফারেনস লিগের শিরোপা জেতানোর পর এবার ইউরোপা লিগের ফাইনালে তুলেছেন দলকে।
ফাইনালে আজ রাতে সেভিয়াকে হারাতে পারলেই নিজের ইউরোপিয়ান সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক লাগাতে পারবেন মরিনিও। ইউরোপে মরিনিওর সাফল্যের ঠিক উল্টোরথে পিএসজি। এখন পর্যন্ত ইউরোপে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে রীতিমতো হন্যে হয়ে ছুটছে প্যারিসের ক্লাবটি। কিন্তু মেসির মতো তারকা এসেও পিএসজিকে কাঙ্ক্ষিত সেই শিরোপা এনে দিতে পারেননি।
তাই সাফল্যের নিশ্চয়তা পেতে পিএসজি হয়তো মরিনিওর দিকে হাত বাড়াতে যাচ্ছে। ইউরোপে সাফল্য পাওয়ার টোটকা তাঁর চেয়ে আর কে ভালো জানে। এর আগে অবশ্য মরিনিওকে পর্তুগাল ও ব্রাজিলও নাকি কোচ হিসেবে চেয়েছিল। যদিও এই দুই জাতীয় দলকে নিষেধ করে দিয়েছেন তিনি নিজেই। এমনকি পিএসজির প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টিও হাস্যরসিকতায় উড়িয়ে দিয়েছিলেন এই পর্তুগিজ কোচ।
ফুটবলের দলবদলে শেষ কথা বলে কিছু নেই। পিএসজি যদি বড় অঙ্কের অর্থ নিয়ে মাঠে নামে, তবে পরিস্থিতি বদলেও যেতে পারে। আর মরিনিও যদি শেষ পর্যন্ত রোমা ছাড়েন তবে শুধু পিএসজিই নয়, তাঁকে পাওয়ার লড়াইয়ে আরও অনেক ক্লাবকে দেখা যেতে পারে। সৌদি লিগের ক্লাবও নাকি মরিনিওকে নিয়ে যেতে চাইছে। তাই শেষ পর্যন্ত নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে মরিনিও কী সিদ্ধান্ত নেন, তা জানতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
মার্সেলো গালার্দো
বিশ্ব ফুটবলে এখন আর্জেন্টাইন কোচদের জয়জয়কার। যে কারণে পিএসজির সম্ভাব্য কোচের তালিকায় থাকা মার্সেলো গালার্দোকেও উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। রিভার প্লেটকে অনেকগুলো শিরোপা জিতিয়ে সেখান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছেন। কোচ হিসেবে তাঁর গুরুত্ব পাওয়ার আরেকটি কারণ ফ্রান্সের পূর্ব অভিজ্ঞতা। ২০০৭–০৮ মৌসুমে পিএসজির হয়ে খেলে গিয়েছেন গালার্দো।
তাঁর আগে খেলেছিলেন মোনাকোর হয়েও। ফ্রান্সের খেলোয়াড় হিসেবে লাভ করা অভিজ্ঞতা এখন কোচ হিসেবে কাজে লাগানোর সুযোগ আছে গালার্দোর। তবে গালার্দো যদি ইউরোপে আসার সিদ্ধান্ত নেন, সে ক্ষেত্রে আরও একাধিক ইউরোপিয়ান ক্লাব তাঁকে নিয়ে আগ্রহ দেখাতে পারে। প্রিমিয়ার লিগের একাধিক ক্লাব নাকি গালার্দোকে পেতে চায়। তবে শেষ পর্যন্ত এই আর্জেন্টাইন কোচের ভবিষ্যৎ কোথায় নির্ধারিত হয়, তা জানতে আরেকটু ধৈর্য ধরতেই হচ্ছে।
লুইস এনরিকে
বিশ্বকাপে স্পেনের বিদায়ের পর থেকে নতুন ক্লাবের সন্ধানে আছেন লুইস এনরিকে। বিভিন্ন সময় তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে ব্রাজিলসহ একাধিক দলের কথা শোনা গেছে। কিন্তু কোনো গুঞ্জন এখন পর্যন্ত সত্যি হয়নি। এনরিকে এখনো নতুন ক্লাবের অপেক্ষাতেই আছেন। এর মাঝে অবশ্য একবার শোনা গিয়েছিল, সৌদি আরবের লিগে কোচ হিসেবে যোগ দিতে যাচ্ছেন এই স্প্যানিশ কোচ। সেটিও অবশ্য গুজব হয়েই থেকে গেছে।
Also Read: সৌদি আরবের পথে মেসিদের সাবেক কোচ এনরিকেও
নতুন খবর হচ্ছে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে এবার পিএসজি নাকি এনরিকের দ্বারস্থ হতে যাচ্ছে। গালতিয়েরের ইউরোপিয়ান ব্যর্থতাকে শোধরাতে তারা সাহায্য চান এনরিকেকে দিয়ে। এর আগে বার্সেলোনার হয়ে চ্যম্পিয়নস লিগ শিরোপা জেতার অভিজ্ঞতা আছে এনরিকের। দলের ওপর এনরিকের নিয়ন্ত্রণও থাকে বেশ। এসব কারণই মূলত পিএসজি কর্তৃপক্ষকে তাঁর ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে পারে। তবে স্পেন ছেড়ে এনরিকে ফ্রান্সে যাবেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। শেষ পর্যন্ত এনরিকে পিএসজিতে গেলে আগামী মৌসুমে ক্লাবটির খেলার কৌশল দেখার মতো ব্যাপারই হবে।
থিয়াগো মোতা
ফুটবলার থিয়াগো মোতার ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় কেটেছে পিএসজিতে। ২০১২ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্যারিসের ক্লাবটির হয়ে খেলে গেছেন এই ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত ইতালিয়ান ফুটবলার। নিজের কোচিং ক্যারিয়ারও মোতা শুরু করেছিলে পিএসজিতে। ২০১৮–১৯ মৌসুমে পিএসজি অনূর্ধ্ব–১৯ দলকে কোচিং করিয়েছেন মোতা। এরপর জেনোয়া, স্পেৎসিয়া ও বোলোনার মতো ক্লাবের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন ইতালির জাতীয় দলের হয়ে ৩০ ম্যাচ খেলা এই মিডফিল্ডার।
Also Read: এমবাপ্পের ‘পিএসজি–স্বপ্ন’র দাম ১৫ কোটি ইউরো
তাঁকে নাকি কোচ হিসেবে পিএসজির মালিক নাসের আল খেলাইফির বিশেষ পছন্দ। দলের ভাগ্য বদলে ক্লাবের পরীক্ষিত এই নামটিতেই নাকি আস্থা রাখতে চান খেলাইফি। তবে মোতাকে পাওয়ার কাজটি পিএসজির জন্য মোটেই সহজ হবে না। এরই মধ্যে তাঁর সঙ্গে জড়িয়ে শোনা গেছে নাপোলির নাম। ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা নাকি ক্লাব ছেড়ে যাওয়া লুসিয়ানো স্পালেত্তির বিকল্প হিসেবে মোতাকে নিয়ে আসতে চায়। এ ছাড়া আরেক ফরাসি ক্লাব নিসও নাকি তাঁকে কিনতে চায়।
তবে পিএসজির সঙ্গে তাঁর পুরোনো সম্পর্ক ও টাকার অঙ্ক হিসাব বদলে দিতে পারে। মোতার পিএসজিতে আসার পথে আরেকটি বড় বাধা অবশ্য থেকে গেছে। সেটি হলো তার ইউরোপিয়ান সাফল্য। এখনো ইউরোপে বিশেষ কোনো অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে পিএসজি হয়তো শেষ পর্যন্ত তাঁকে কেনার দৌড় থেকে পিছিয়ে যেতে পারে। এরপরও ফুটবলের দলবদল বলে কথা। চূড়ান্ত ঘোষণা আসার আগপর্যন্ত তাই নিশ্চিত করে কিছু বলার সুযোগও নেই।
আবেল ফেরেইরা
গালতিয়েরকে সরিয়ে যারা পিএসজির ডাগআউটে নিজেদের রাজত্ব শুরু করতে পারেন, তাদের মাঝে আবেল ফেরেইরাও একজন। সাহসী এবং দৃঢ়তার জন্য কোচ হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত ফেরেইরা। পিএসজি কর্তৃপক্ষের ধারণা, তিনি এলে ক্লাবের পরিস্থিতি আমূল বদলে যেতে পারে। তবে মোতার মতো তাঁর অভিজ্ঞতাও খুব বেশি নয়। কোচ হিসেবে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব পালমেরাইসকে কোচিং করানো ছিল তাঁর বড় অভিজ্ঞতা।
যা শেষ পর্যন্ত ক্লাবটিকে তাঁকে কেনার পথ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। তবে মেসি–নেইমারের মতো তারকারা চলে গেলে, পিএসজিকে তখন নতুন করে দল গঠন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ক্লাবটির জন্য দারুণভাবে কার্যকর হতে পারেন ফেরেইরা। তবে মরিনিও, এনরিকে ও মোতাদের সঙ্গে লড়াই করে পিএসজির মতো ক্লাবের দায়িত্ব নেওয়াটা ফেরেইরার জন্য মোটেই সহজ হবে না।