বিদ্রোহী ফুটবল ক্লাব ‘এফসি ইউনাইটেড অব ম্যানচেস্টার’, বছরে চাঁদা মাত্র ২৫ পাউন্ড

খেলার মাঠে খেলা তো হয়ই, এর বাইরে হয় বিচিত্র অনেক কিছুই। মাঠে ও মাঠের বাইরের বিচিত্র সব ঘটনা নিয়েই এ আয়োজন।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি এরিক ক্যান্টোনা একবার বলেছিলেন, ‘আপনি স্ত্রী পাল্টাতে পারেন, রাজনীতি পাল্টাতে পারেন, এমনকি ধর্মও পাল্টাতে পারেন, কিন্তু কখনোই ফুটবল দল পাল্টাতে পারবেন না।’

কিন্তু ক্যান্টোনার দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিছু সমর্থকই তাঁকে ভুল প্রমাণ করেছেন। ইউনাইটেড ছেড়ে তাঁরা আরেক ইউনাইটেড বানিয়েছেন। আর আশ্চর্যের ব্যাপার, তাঁরা সেই ক্যান্টোনাকেও নিজেদের দলে টেনেছেন।

২০০৫ সালে গ্লেজার পরিবার ইউনাইটেড কিনে নেওয়ার পর ক্লাবটির সমর্থকদের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বাণিজ্যিকীকরণ, ঋণের বোঝা আর ক্লাবের আত্মপরিচয় হারিয়ে ফেলার ভয়ে তাঁদের মনে প্রশ্ন জাগে—এই ক্লাব কি আর আমাদের মতো ভক্তদের হাতে আছে? গ্লেজার পরিবার ইউনাইটেডের দায়িত্ব নেওয়ার পরের দিনই কিছু ক্ষুব্ধ সমর্থক শহরের এক কারি হাউসে বৈঠক করেন। সেখান থেকে মেথডিস্ট হল, তারপর সাড়ে তিন হাজার আসনের অ্যাপোলো থিয়েটার—এভাবেই বৈঠকের পর বৈঠকে গড়ে ওঠে নতুন ক্লাবের কাঠামো।

অবশেষে সে বছরের ১৪ জুন আইনি স্বীকৃতিসহ প্রতিষ্ঠিত হয় এফসি ইউনাইটেড অব ম্যানচেস্টার। ক্লাবটির নীতিমালা ছিল স্পষ্ট—এটা হবে সমর্থকদের মালিকানাধীন ক্লাব। প্রত্যেকে সদস্য হতে পারবেন, সবার ভোটের মূল্য সমান। কোনো রকম বাণিজ্যিকীকরণের জায়গা নেই এখানে।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক ফরাসি তারকা এরিক ক্যান্টোনা এখন এফসি ইউনাইটেড অব ম্যানচেস্টারের সদস্য

প্রতিষ্ঠার এক মাসের মধ্যেই ১৬ জুলাই স্থানীয় ক্লাব লি আরএমআইয়ের বিপক্ষে খেলতে নামে এফসি ইউনাইটেড। আগস্টে যোগ দেয় নর্থ-ওয়েস্ট কাউন্টিস লিগে। শুরুতে নিজস্ব মাঠ ছিল না, তাই বেরি এফসির গিগ লেনে খেলত দলটি।

সেই এফসি ইউনাইটেডের সদস্যসংখ্যা এখন দুই হাজারের বেশি। দলটি এখন খেলে ইংলিশ ফুটবলের সপ্তম স্তর নর্দার্ন প্রিমিয়ার লিগে। এরিক ক্যান্টোনা নিজে ও তাঁর পরিবারও এ বছরের এপ্রিলে সদস্য হয়েছেন। বছরে মাত্র ২৫ পাউন্ড চাঁদা দিয়ে সবাই সমান ভোটাধিকার পান। ক্লাবের বোর্ড সদস্যরাই বেছে নেন চেয়ারম্যান। জার্সির রং অবশ্য চিরায়ত লালই থাকতে হবে—এ নিয়ে কোনো আপস নেই।

এফসি ইউনাইটেডের গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ নীতি যেন একেবারেই বিপরীত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বর্তমান পরিস্থিতির। সেখানে মালিকানায় নতুন যুক্ত হওয়া জিম র‌্যাটক্লিফ ফুটবল অপারেশনের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শত শত কর্মী ছাঁটাই আর কাটছাঁট চলছে। বাণিজ্যিক বাস্তবতায় ক্লাব হারাচ্ছে মানবিক স্পর্শ, আর ঠিক তখনই ভক্তদের হাতে গড়ে ওঠা এই নতুন ক্লাব ফুটবলের পুরোনো রোমান্টিকতাকে আবার ফিরিয়ে দিচ্ছে।