বুয়েনস এইরেসে আর্জেন্টিনা ফুটবলের সদর দপ্তর
বুয়েনস এইরেসে আর্জেন্টিনা ফুটবলের সদর দপ্তর

অর্থ পাচার অভিযোগের তদন্তে আর্জেন্টিনা ফুটবলের সদর দপ্তরে পুলিশের অভিযান

অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সদর দপ্তর এবং কয়েকটি বড় ক্লাবে অভিযান চালায় দেশটির পুলিশ। বার্তা সংস্থা এএফপিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের একজন কর্মকর্তা।

সূত্র জানায়, এক বিচারকের নির্দেশে একযোগে এই অভিযান চালানো হয়। বুয়েনস এইরেসের দক্ষিণে এএফএর সদর দপ্তর, জাতীয় দলের অনুশীলন মাঠ এবং প্রথম বিভাগের রেসিং ক্লাব, সান লরেঞ্জো, ইন্দিপেন্দিয়েন্তে ও ব্যানফিল্ডেও অভিযান চালান কর্মকর্তারা। অভিযান–সম্পর্কিত এই সূত্র বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দলগুলো এবং ব্যক্তিগত বাসায় ২৫ থেকে ৩০টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে।’

তদন্তকারীরা খুঁজছিলেন এমন সব হিসাব–নিকাশের তথ্য, যা ‘সুর ফিনাঞ্জাস’ নামের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিষ্ঠানটি আর্জেন্টিনার বেশ কয়েকটি দলের স্পন্সর। বেআইনি কর্মকাণ্ডের অভিযোগে এখন এটি সন্দেহের মধ্যে। তদন্তাধীন ক্লাবগুলোর ব্যাংকিং গোপনীয়তাও বাতিল করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক।

গত মাসে আর্জেন্টিনার কর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ৫৫ কোটি আর্জেন্টাইন পেসো কর ফাঁকির অভিযোগ দায়ের করে। আর্জেন্টাইন ফুটবলে প্রতিষ্ঠানটির বেশ কিছু ব্যবসায়িক চুক্তি রয়েছে এবং এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিয়েল ভ্যালেজো এএফএ সভাপতি ক্লদিও তাপিয়ার ঘনিষ্ঠজন। সুর ফিনাঞ্জাস গত বছর আর্জেন্টাইন ফুটবল লিগ এবং জাতীয় দলের স্পন্সরও ছিল।

পুলিশ অভিযান চালায় আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সদর দপ্তরে

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ক্লাবগুলোকে ঋণ দেওয়ার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রচারস্বত্বের সুবিধা পেয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যেসব ক্লাবে অভিযান হয়েছে, বুয়েনস এইরেসের আতলেতিকো এক্সকুশিনিস্তাস তাদের একটি। তারা বিবৃতিতে জানিয়েছে, তদন্তাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি সাধারণ স্পন্সরশিপ চুক্তি ছাড়া আর কোনো আর্থিক সম্পর্ক নেই।

রেসিং ক্লাব জানিয়েছে, ২০২৩ সালে তারা সুর ফিনাঞ্জাসের সঙ্গে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি করে, যার মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর। সেটি ছিল বিজ্ঞাপন ও স্পন্সরশিপ চুক্তি। ক্লাবটির দাবি, সুর ফিনাঞ্জাস বরং তাদের কাছে আর্থিকভাবে ঋণী।

২০২২ বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনার ঘরোয়া ফুটবলে সাম্প্রতিক কিছু বিতর্ক এএফএ সভাপতি তাপিয়ার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ২০১৭ সাল থেকে তিনি এএফএর সভাপতি। হাভিয়ের মিলেই সরকারের সঙ্গেও তাঁর টানাপোড়েন চলছে। মিলেই সরকার দেশের ফুটবল ক্লাবগুলোকে খেলাধুলার কোম্পানিতে রূপান্তর করতে চায়। কিন্তু এএফএর নিয়মে তার অনুমোদন নেই।

এএফএ সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া

গত মাসে এএফএ আরও একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেয়। তারা হঠাৎ করে নতুন একটি চ্যাম্পিয়নশিপ চালু করে, যা মৌসুমের দুটি প্রধান লিগের পয়েন্ট যোগ করে গড়া হয়েছে। এতে আনহেল দি মারিয়ার ক্লাব রোজারিও সেন্ট্রাল চ্যাম্পিয়ন হয়, যদিও টুর্নামেন্টের ফাইনাল তখনো বাকি। আগামী শনিবার রেসিংয়ের মুখোমুখি হবে এস্তুদিয়েন্তেস। রোজারিওর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খেতাব তারা মানেনি। এএফএর শৃঙ্খলা ট্রাইব্যুনাল ক্লাবটির সভাপতিকে ছয় মাসের জন্য সাসপেন্ড করেছে।

ব্যারাকাস সেন্ট্রালেও অভিযান হয়। দুই দশক ধরে এই ক্লাবের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন তাপিয়া। পরে তাঁর সন্তান দায়িত্ব নেন। এই ক্লাবের প্রতি রেফারির পক্ষপাতের অভিযোগে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আর্জেন্টাইন ফুটবলে অস্থিরতা বেড়েছে।

তাপিয়া অবশ্য এসব বিতর্কের মাঝেও নিজের জায়গা ধরে রেখেছেন। এএফএ সভাপতি হিসেবে তাঁর বর্তমান মেয়াদ শেষ হবে ২০২৮ সালে। দুই সপ্তাহ আগে এ নিয়ে তাপিয়া বলেছিলেন, ‘আমি আর্জেন্টাইন ফুটবলের নেতৃত্ব দিতে শুরু করার পর এই ৯ বছরে আর্জেন্টিনা তিনজন প্রেসিডেন্ট দেখেছে। কিন্তু আমার সামনে এখনো অনেক বছর বাকি।’