যে দুই গোল বদলে দিয়েছিল জিনেদিন জিদানের জীবন

বল পায়ে জিনেদিন জিদানকে মনে পড়লেই অনেকের চোখে ভেসে ওঠে ব্যালে নৃত্যের ছবি। এত সুন্দর নিয়ন্ত্রণ, এত মোহময় ড্রিবলিং—মায়াপুরীর বিভ্রম ছড়ানো এমন দৃশ্য ফুটবলে খুব কমই দেখা গেছে। ফরাসি এই জাদুকর শুধু ফ্রান্সের সর্বকালের সেরা নন, সর্বকালের সেরাদের সংক্ষিপ্ত তালিকায়ও তাঁর নাম অনিবার্য।১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী, ২০০৬ বিশ্বকাপের রানার্সআপ, আর অবশ্যই সেই ফাইনালে ঢুস মেরে লাল কার্ড দেখা—ক্লাব ফুটবলের সাফল্য বাদ দিলেও এ ঘটনাগুলোই জিদানকে ফুটবল ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে। তাঁর জীবনী নিয়ে প্যাট্রিক ফোর্ট ও জ্যাঁ ফিলিপ লিখেছেন জিদান নামের বই। বইটির একটি অধ্যায়—টু গোলস দ্যাট চেঞ্জড আ লাইফ—১৯৯৮ বিশ্বকাপ ফাইনালে জিদানের জোড়া গোল আর তারপর জীবনটা যেভাবে পাল্টে গেল, সেই গল্প।

কী লেখা হয়েছে ‘টু গোলস দ্যাট চেঞ্জড আ লাইফ’ অধ্যায়ে

ফ্রান্স-ব্রাজিল। স্বপ্নের ম্যাচ।

তবে সেটা ফ্রান্স বনাম ব্রাজিল, ব্রাজিল বনাম ফ্রান্স নয়।

পার্থক্য? অনেক।

ফ্রান্স খেলবে নিজেদের মাঠে। গোটা ফ্রান্স! দেশজুড়ে সাজ সাজ রব। কারণটা ফাইনাল, কারণটা প্রতিপক্ষও। ছুটির দিনগুলোর জন্য অনেক ফরাসির গ্রীষ্মকালীন অবকাশ শুরু হয়েছিল একটু আগেভাগেই। প্রাত্যহিক কাজের বাইরে মনটাকে একটু ঘুরিয়ে আনতে বিশ্বকাপ ফাইনালের চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে! বিশুদ্ধবাদীরা ’৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে ফ্রান্স-ব্রাজিল ম্যাচের মতো আরেকটি ম্যাচ দেখার অপেক্ষায়। সেবার কিংবদন্তি কোচ টেলে সান্তানার ব্রাজিল বাদ পড়ে কোয়ার্টার ফাইনালে।

ব্রাজিল। ব্রাসিল!

একটি স্বপ্ন।

একটি ছবি। আর একটি গান; ‘অ্যাকুয়ারেলা দো ব্রাসিল’। অন্য খেলোয়াড়, পরিচালক ও কোচদের মতোই জিজুও সুরটি মাথায় নিয়ে বাসে পেছনের দিকে বসলেন। ক্লেয়ারফঁতে থেকে স্তাদে দে ফ্রান্সে যাওয়ার পথে রাস্তার দুই প্রান্তেই উল্লসিত জনতা।

১৯৯৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে জিনেদিন জিদানের প্রথম গোল

জিদানের পরিবার তাঁর বাবা-মায়ের বাসায়। লুকাকে দেখে রাখতে হয়। ভেরোনিকা ও এনজো গ্যালারিতে। কিছু বন্ধুবান্ধবও আছে। সবাই জিদানের জয় দেখার অপেক্ষায়। আর জিদান কী ধাতুতে তৈরি, তা দেখতে চাইছেন বিশেষজ্ঞরা। ওই বিশ্বকাপে তখন পর্যন্ত দুগারে গোল করেছেন, লিজারাজু গোল করেছেন, শুধু জিদানই পারেননি। ইতালির বিপক্ষে পেনাল্টি শুটআউটে লক্ষ্যভেদকে তো আর গোল বলা যায় না।

ফাইনালে উঠে আসার আগে ১২ গোল করেছে ফ্রান্স, ব্রাজিল ১৪টি। কিন্তু ব্রাজিলের ৭ গোল হজমের তুলনায় ফ্রান্স মাত্র ২ গোল হজম করেছে এই পথে। একটি ম্যাচও ব্রাজিল হেরেছেও। নরওয়ের বিপক্ষে। ব্রাজিলিয়ানদের যে ধারাবাহিকতা নেই, তার প্রমাণ ওই হার।

‘লা ব্লুজ’দের দুশ্চিন্তার কিছু ছিল না। ব্যক্তিগত ও দলগতভাবে তাদের খেলোয়াড়েরা মাঠে অনেক দুর্বলতা দেখিয়েছেন। জিজু এটা জানতেন। এটাও জানতেন এই দুর্বলদের তালিকায় তিনিও আছেন। যদিও দলের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাবান ছিলেন তিনিই।

ব্রাজিলের মাঝমাঠে গুরুত্বপূর্ণ জুটি জুনিয়র বাইয়ানো ও আলদাইর একসঙ্গে তেমন কার্যকর হতে পারেনি, যেমনটা চার বছর আগে আগের বিশ্বকাপে মার্সিও সান্তোস ও আলদাইর হয়েছিলেন। রবার্তো কার্লোস নিজের খ্যাতি ও সহজাত প্রতিভায় কিছুটা লক্ষ্যচ্যুত হয়ে পড়েছিলেন। সেই টুর্নামেন্টেই প্রথমবার আলোচনায় আসেন দেনিলসন। বেতিসে যোগ দিয়ে তিনি তখন বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার। ১৯৯৮ সালের সেই ব্রাজিল দলে দেনিলসন ছিলেন এক বিলাসবহুল বদলি, যেখানে আরও অনেক বিশ্বমানের তারকা ছিল। যেমন রাইট ব্যাক তাদের একজন। মাঝমাঠের আরেক তারকা লিওনার্দো দলে নিয়মিত মুখ। প্লে–মেকার রিভালদোও বড় তারকা, তবে কোচ মারিও জাগালোর কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত আস্থাটা পেতেন না।

জিনেদিন জিদান যখন রিয়াল মাদ্রিদের কোচ

আর ছিলেন রোনালদো। অনন্য এক খেলোয়াড়। শতাব্দীর অন্যতম সেরা প্রতিভা। এমন এক খেলোয়াড়—শুধু যাঁর উপস্থিতিই প্রচুর মানুষ টেনে আনতে পারে।
ব্রাজিল দলে হয়তো কিছুটা অস্থিরতা ছিল। কিন্তু খেলার ঝলক কমেনি এতটুকু। বিশ্বকাপ জিতেছে সর্বোচ্চ চারবার, ষষ্ঠবারের মতো ফাইনালে উঠে ছুঁয়ে ফেলে ১৯৯০ বিশ্বকাপে জার্মানির গড়া রেকর্ড।

তবে এই ব্রাজিলের এই দলটির বেশ কিছু দুর্বলতাও ছিল। রক্ষণ ও মাঝমাঠে বেশ দুর্বল ছিল তারা। আর ফরাসিদের বড় শক্তি ছিল মনোযোগ। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। অজেয় এক অনুভূতি।

ওদিকে পর্দার আড়ালে ব্রাজিলিয়ানদের পটভূমি ছিল ভিন্ন।

অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের সবচেয়ে বড় তারকা রোনালদোকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এতে ব্রাজিলিয়ানদের খেলায় আর মনোযোগ ছিল না। তার রুমমেট রবার্তো কার্লোসের ভাষ্য ছিল, রোনালদো একদম নিশ্চল হয়ে পড়েছিলেন।

১৯৯৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে দ্বিতীয় গোলের পর জিনেদিন জিদান

(ব্রাজিলের কোচ) জাগালোর খেলায় একঘেয়েমি ছিল। সেটপিসে দক্ষতা ও রোনালদোর প্রতিভার ওপর নির্ভর করতেন তিনি। কিন্তু রোনালদো কি খেলতে পারবে? পরিস্থিতি যেমনই হোক, সে খেলতে চেয়েছিল। সে জন্য কতটা মরিয়া ছিল, তা বোঝা গেল তাঁর স্টেডিয়ামে পৌঁছানোর পর। সতীর্থদের বেশ পরে পৌঁছেছিল। ব্রাজিলের দল ঘোষণার সময় সেখানে তাঁর নাম ছিল না। তাঁর জায়গায় নেওয়া হয় খামখেয়ালি প্রবণ প্রতিভাবান এডমুন্ডোকে।

রোনালদোর অসুস্থতা নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। দুর্দান্ত এক ফুটবলারের প্রতিক্রিয়াতেই ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে যায়। জিকো! একসময় পৃথিবীর সেরা খেলোয়াড়। বিশ্বকাপের আগে তিনি জাগালোর সহকারী টেকনিক্যাল কো–অর্ডিনেটর হিসেবে দলের সঙ্গে যোগ দেন। রোনালদোর অবস্থা দেখে তিনি কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। চিকিৎসকদের রায় ছিল—অন্তত ৪৮ ঘণ্টা বিশ্রামে থাকতে হবে।

দ্বিতীয় গোলের পর জিদান

ব্রাজিলের টিম ম্যানেজমেন্টকে জিকো কথাটা জানালেও রোনালদো খেলার জন্য অনড় ছিলেন। তাঁর জায়গায় থাকলে আমাদের মধ্যে কজনের ড্রেসিংরুমে বসে থাকার সাহস হতো? শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত দল ঘোষণা করা হলো ব্রাজিলের। এডমুন্ডো নেই। রোনালদো খেলবেন। জিকো কিছু না বলে নীরবে ড্রেসিংরুম ছেড়ে চলে যান। দলীয় চেতনার জায়গা থেকে ভাবলে ব্রাজিল আসলে আগেই হেরে গিয়েছিল।

১২ জুলাই, ১৯৯৮। ব্রাজিল সেদিন অতটা সৃষ্টিশীল ছিল না। তাদের প্রতিপক্ষ দলের চেয়েও অগোছালো ছিল। তাদের মনের ভেতর সন্দেহ ঢুকে গিয়েছিল। প্রায় পুরো গ্যালারির সমর্থন পাওয়া গোছালো একটা দলকে তারা কীভাবে হারাবে? রোনালদোর একক প্রতিভায় পার পাবে? রোনালদো তখন দলের মধ্যে সবচেয়ে বাজে অবস্থায়। ব্রাজিল হয়তো আগেই হেরে গিয়েছিল। কিন্তু ফ্রান্স তো তখনো জয় পায়নি।

তবে সেটা ছিল শুধুই সময়ের ব্যাপার।

ব্রাজিলের রক্ষণভাগ স্বাভাবিকের চেয়ে আরও ভঙ্গুর ছিল। তাদের আক্রমণেও তীব্রতা ছিল না। খেলোয়াড়দের পজিশনিংও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

ম্যাচের তখন ২৭ মিনিট।

রবার্তো কার্লোস আবারও অ্যাক্রোবেটিক ভঙ্গিতে সেই একই ভুল করলেন। যে ভুলের কারণে কোয়ার্টার ফাইনালে ডেনমার্ক তাদের বিপক্ষে সমতায় ফিরেছিল। পরে তিনি অবশ্য দাবি করেন ফাউলের শিকার হয়েছিলেন। আসলে সাবধান ছিলেন না। যাহোক, একইভাবে এবার একটি কর্নার উপহার দেন ফ্রান্সকে।

কর্নার থেকে বলটি উড়ে এল। রোনালদোর পেছন দিক থেকে গিয়ে ডিফেন্সের সামনে চলে আসেন জিদান। লিওনার্দোর চেয়ে বেশি উচ্চতায় লাফিয়ে হেড করলেন। বল জালে এবং গোল! ক্যারিয়ার ঘুরে যেতে সময় লাগল কত, মাত্র ১ সেকেন্ড!
শুধু স্টেডিয়াম নয় গোটা ফ্রান্সই যেন গর্জনে ফেটে পড়ল।

গোলটি উদ্‌যাপনে জিদান ভেতরের আনন্দ–উচ্ছাস খুব একটা প্রকাশ করেননি। সরু চোখে জার্সিটি একটু তুলে অ্যাডভার্টাইজিং বোর্ডের সামনে দিয়ে দৌড়ে যান।

জিদান ধৈর্য ধরে ছিলেন। আরেকটি গোল করার জন্য। মোক্ষম পরিস্থিতিটা তৈরি হলো প্রথমার্ধের একদম শেষ মুহূর্তে—৪৫ মিনিট শেষ হওয়ার ৪৫ সেকেন্ড আগে। আরেকটি কর্নার। এবার মাঠের অন্য প্রান্ত থেকে। কর্নারটি জিদান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইউরি জুয়োরকায়েফ নেন। জিদান যেন আরেকটি গোল পান, সেই সুযোগটা করে দিতে চেয়েছিলেন।

প্রথম গোলের পর ক্রিস্তিয়ান কারেম্বু (মাঝে) ও ইমানুয়েল পেতির সঙ্গে জিদানের গোল উদ্‌যাপন

জোরকায়েফের নিখুঁত কর্নারটি ছিল ব্রাজিলের কফিনে শেষ পেরেক।

জিজু দুঙ্গাকে ঠেলে সরিয়ে বলের দিকে ছুটে যান। থুরাম তাঁকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জায়গা করে দেন। বলটা এবার একটু নিচু হয়ে এলেও তাঁর হেডে ফলটা পাল্টাল না—গোল!

আরেকটি সেকেন্ডের মহিমা। এবার আর শুধু ক্যারিয়ার নয়, জিদানের জীবনটাই পাল্টে গেল।

প্রথমার্ধেই ফ্রান্স ২–০ গোলে এগিয়ে। দুটি গোলই জিদানের। (তখন) মাত্র সাতজন খেলোয়াড় এই অর্জনের দেখা পেয়েছে। জিদান সমর্থকদের দিকে দৌড় দেওয়ার পথে চুমু খেলেন জার্সিতে। এবার তাঁর মুখে হাসি।

বিরতির পর জিদানের খেলাটা ছিল একটু ঢিলেঢালা। অনেকটাই ব্রাজিলিয়ান স্টাইলে। আর ব্রাজিল ততক্ষণে মাঠে হারিয়ে গেছে। ফ্রান্সের জয় ৩–০ গোলে। ভিয়েরার পাস থেকে শেষ গোলটি ইমানুয়েল পেতির।

উদ্‌যাপন শুরু হলো রাতে। অনেক দীর্ঘ এক উদ্‌যাপন। মাঠের সেই প্রতীক্ষার প্রহর যেন ফুরোচ্ছিল না। কাপটা! সেটা যখন হাতে এল—১৮ ক্যারেট—পৃথিবীর সব সোনার চেয়েও সেটা দামি।

বিশ্বকাপ ট্রফিতে চুমো খাচ্ছেন জিনেদিন জিদান

খেলোয়াড়েরা কাপ একে অপরের হাতে দেওয়ার সময় কেঁদেছে। ভেরোনিকা ও এনজোকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল জিদান। এনজোও কাঁদতে শুরু করল। পিতা সন্তানকে কোলে তুলে নিল। তখন ক্লান্তি মুছে গেছে।

জিজু কাপটি বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আলোকচিত্রীরা খুব ব্যস্ত তখন। কাপটিকে সে শিশুর মতো আদর করছিল। অনেক কষ্টের ধন, অনেক ত্যাগ–তিতিক্ষার ফসল।

প্যারিসের শঁজ এলিজেতে তখন মানুষের ভিড়। সবাই জিদানের নামে স্লোগান ধরেছে। ‘মার্সি জিজু! মার্সি জিজু!’—গোটা ফ্রান্সই যেন তাঁর নামে চিৎকার করছিল। ওদিকে মাঠেও ভিড়ের মধ্যে কেউ একজন জিদানকে ডাকল ‘ইয়াজিদ’ (জিদানের নাম)। তারা জিদানের বন্ধু। জিদান ছুটে গেলেন তাদের কাছে। উদ্‌যাপন শেষে জিদান পরিবারের সঙ্গে একটু সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছেন ক্লেয়ারফন্তেইনে। অবশেষে!

তখন কি মঁসিয়ে ভ্যারাদকে (জিদানকে খুঁজে বের করা স্কাউট) মনে পড়েছে? ভ্যারাদ নিশ্চয়ই খুশি হয়েছেন। নিজেকে হয়তো পরিপূর্ণ মানুষ মনে হয়েছে তাঁর। ওই দুটি গোল, এত দিন ধরে ফ্রান্সের সব পাস, সব গোলের চেয়েও মূল্যবান।

সেই জয়ের পর জিদান আর একা থাকতে পারেননি। পরবর্তী আরও কয়েকটি বছর বিশ্ব তাঁকে নিয়ে মেতে ছিল। ফ্রান্সে তো আরও অনেক বছরব্যাপী, হয়তো সামনেও থাকবে। জিদান আর কখনোই আগের দিনগুলোয় ফিরে যেতে পারেনি। ফুটবল তখন (ফ্রান্সে) আর শুধু খেলা নেই। সমাজের একটা অংশ হয়ে গেছে। গোলস্কোরাররা ল্যান্সেলট (কিং আর্থারের নাইট) ও জোয়ান অব আর্কের মতোই কিংবদন্তি। জিদানও তা–ই।

জিনেদিন জিদান এখন। এ মাসের ১৪ তারিখে ফ্রান্সের এক স্কুলে

জিজুর জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়ছিল। সবাই তাঁর মুখটা ব্যবহার করতে চায়। এমনকি সুপারমার্কেটের শপিং ব্যাগেও। জিজু জানতেন তিনি কী চান আর কী চান না। তাই বলেছিলেন, ‘ব্যাগ কখনো কখনো মাটিতেও পড়ে থাকে। আমি চাই না লোকে আমাকে মাড়িয়ে দিক।’

জিদান সঠিক ভেবেছিলেন। আর তাই দিনে দিনে তিনি যতটা উচ্চতায় উঠেছেন, তারকাখ্যাতি ততই ভুলে গেছেন। তার আর প্রমাণের কিছু ছিল না। নামটা জিদান হলেও মনে মনে তিনি তখনো ইয়াজিদ। আর এটাই তার জীবনের সেরা অর্জন।

পাঠকের জন্য

জিনেদিন জিদান সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন। বিশ্বকাপজয়ী। ব্যালন ডি’অরজয়ী। তিনবার ফিফার বর্ষসেরা। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ফুটবলারও হয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদে। সেখানে জেতেন চ্যাম্পিয়নস লিগও। ফ্রান্সের হয়ে ১০৮ ম্যাচে ৩১ গোল করলেও এই পরিসংখ্যান তাঁর মহিমার কিছুই বোঝাতে পারে না। জিদান—মানেই জাদু, মোহ জাগানো সব কারুকাজ মাঝমাঠে। ব্যাপারটা আরও ভালোভাবে জানতে জিজ্ঞেস করতে পারেন ২০০৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সেই অল–স্টার দলকে। কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের একাই হারিয়ে দিয়েছিলেন জিদান!