গোল: যেখানে দারিদ্র্যকে হার মানায় ফুটবল-স্বপ্ন

সিনেমায় খুব চেনা প্লটগুলোর একটি হলো, চরম দারিদ্র্য থেকে খ্যাতি ও সম্পদশালী হয়ে ওঠার গল্প। যেকোনো পর্যায়ের কিংবা প্রান্তের মানুষের এমন গল্প পছন্দ। কারণ, নিজের স্বপ্নকে তাড়া করতে প্রেরণা লাগে। পেশাদার ফুটবলার হয়ে ওঠার স্বপ্ন পুষে রাখা মানুষদের জন্য ‘গোল! দ্য ড্রিম বিগিনস’ সিনেমা তেমনই এক গল্প।

সিনেমায় ‘র‌্যাগস টু রিচেস’ প্লটে গল্প মোটামুটি একই ধারায় বলা হয়। সেই একই মোচড়, একই ক্লিশে। ‘গোল’ ট্রিলজির প্রথম কিস্তিতে সান্তিয়াগো মুনেজের উঠে আসার চিত্রনাট্যেও আলাদা কিছু নেই। হোঁচট খেতে খেতে সেই উঠে দাঁড়ানোর গল্পই। তবু খেলাধুলা নিয়ে বানানো অন্যান্য ‘ক্ল্যাসিক’ সিনেমার মতো এর রেশটা থেকে যায়। হয়তো আবেগের চমৎকার উপস্থাপনের সঙ্গে গল্পও চেনা ঘরানার হওয়ায় খেলাধুলায় উঠতিদের কাছে মনে হয়, আরে, এ তো আমারই স্বপ্ন!

খেলাধুলা নিয়ে বানানো সিনেমা যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁদের কাছে ‘গোল! দ্য ড্রিম বিগিনস’ ক্ল্যাসিক গোত্রীয়। ফুটবলপ্রেমীদের কাছে হয়তো আরেকটু বেশি প্রিয়। ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর সিনেমাটি ব্রিটেনে মুক্তি পাওয়ার পর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সে মৌসুমে সপ্তম হওয়া নিউক্যাসল ইউনাইটেডের জনপ্রিয়তা হঠাৎ করেই বেড়ে গিয়েছিল।

মেক্সিকান ২০ বছর বয়সী মুনোজ লস অ্যাঞ্জেলসে অবৈধ অভিবাসী। স্থানীয় একটি চায়নিজ রেস্তোরাঁয় কাজ করে। দক্ষ ফুটবলার হওয়ায় মনের মধ্যে তার পেশাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন। একদিন স্থানীয় এক ম্যাচে দেখা হয়ে যায় নিউক্যাসলের এক স্কাউটের সঙ্গে…।

নিউক্যাসলের স্কাউটের চরিত্রে অভিনয় করেন স্টিফেন ডিলান

গল্পটা তারপর যেভাবে এগিয়েছে, ইউরোপিয়ান ফুটবলে কারও পেশাদার হয়ে ওঠার পথটা কেমন, কী কী ঘাত-প্রতিঘাত, বন্ধুত্ব ও শত্রুতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেসব বিষয়ে উৎসাহীদের আগ্রহ বেশ মিটবে। লন্ডনের পার্টিতে ডেভিড বেকহাম যখন মুনেজকে বলেন, ‘সান্তিয়াগো, দারুণ খেলেছ আজ’—মুহূর্তটি মনে রাখবেন অনেকেই। ক্যামেরার কাজও চমৎকার। সেন্ট জেমস পার্কের ওপর থেকে নেওয়া হেলিকপ্টার শটগুলো স্রেফ অসাধারণ। কলোসিয়ামের ভেতরে মুনেজকে মনে হয় ফুটবলের গ্ল্যাডিয়েটর।

মুনেজের চরিত্রে মেক্সিকান অভিনেতা কুনো বেকের বেশ ভালো করেছেন। যদিও বেকেরের দেশেরই অভিনেতা ডিয়েগো লুনাকে প্রথমে পছন্দ করা হয়েছিল। ফিফার সংশ্লিষ্টতায় বানানো আন্তর্জাতিক পেশাদার ফুটবলারদের সংস্থা ফিফপ্রোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, বাজেট ও বিজ্ঞাপনী প্রচারণায় প্রযোজনা সংস্থাকে পাঁচ কোটি ডলার দিয়েছিল ক্রীড়া সরঞ্জাম নির্মাণ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস।

মুক্তির পর সমালোচকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পায় সিনেমাটি। খেলাধুলার মধ্যে মুহূর্তগুলো চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলায় প্রশংসা পাওয়ার পাশাপাশি ক্লিশে বলেও অভিযুক্ত করেন সমালোচকেরা। বক্স অফিসেও সাফল্য খুব মোটা অঙ্কের ছিল না। বিশ্বব্যাপী মোট আয় ছিল ২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। কিন্তু সময়ের সঙ্গে ফুটবলপ্রেমীদের কাছে এটি কাল্ট ঘরানার সিনেমাও।

মুনেজের চরিত্রে কুনো বেক অভিনয় করেন

টিভি সিরিজে সফল ব্রিটিশ পরিচালক ডেভিড ড্যানি ক্যানন মেলোড্রামাটিক ভঙ্গিতে গল্পটা বলায় নাটকীয়তাগুলো ফুটেছে ভালোভাবে। পরের দুই কিস্তিতে (গোল টু: লিভিং দ্য ড্রিম, গোল থ্রি: টেকিং দ্য ওয়ার্ল্ড) অবশ্য ছিলেন না ‘আই স্টিল নো হোয়াট ইউ ডিড লাস্ট সামার’–এর এই পরিচালক। ‘গোল’ সিরিজে অ্যালান শিয়ারার থেকে বেকহাম, রাউল গঞ্জালেস, জিনেদিন জিদানদের দেখে রোমাঞ্চ জাগতে পারে। মুনেজ তাঁর স্বপ্নকে তাড়া করতে করতে পৌঁছে যান ওই অবধি। ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফাও এই সিরিজের সঙ্গে কাজ করেছে এবং সিনেমাটির প্রশংসা করেছে।

মেক্সিকোর বয়সভিত্তিক দলে খেলা ফরোয়ার্ড সান্তিয়াগো মুনোজকে ২০২১ সালে সই করায় নিউক্যাসল। ‘গোল’ সিরিজের মুনেজের গল্পের সঙ্গে যদিও মুনোজের কোনো মিল বা সংশ্লিষ্টতা নেই।

গোল! দ্য ড্রিম বিগিনস (২০০৫)

পরিচালক: ডেভিড ক্যানন

চিত্রনাট্য: ডিক ক্লেমেন্ত, ইয়ান লা ফ্রেনাইস

অভিনয়: কুনো বেকের, আলেহান্দ্রো নিভোলা, স্টিফেন ডিলানে, মার্সেল লুরেস

আইএমডিবি রেটিং: ৬.৭/১০

রানটাইম: ১ ঘণ্টা ৫৮ মিনিট।