
চ্যাম্পিয়নস লিগে লামিনে ইয়ামালকে ছাপিয়ে এস্তেভাওয়ের নায়ক হয়ে ওঠার রাতে বার্সেলোনাকে বিধ্বস্ত করেছে চেলসি। লিগ পর্বের ম্যাচে গতকাল মঙ্গলবার রাতে চেলসির মাঠ স্টামফোর্ড ব্রিজে নেমেছিল বার্সেলোনা। দুই দলই সাম্প্রতিক সময়ে ছন্দে থাকায় আশা করা হচ্ছিল হাড্ডাহাড্ডি এক লড়াইয়ের। কিন্তু চেলসির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি ১০ জনের বার্সা। বিধ্বস্ত হয়েছে ৩–০ গোলের হারে।
এই ম্যাচে সব আলো নিজের দিকে টেনে নেন চেলসির ব্রাজিলিয়ান তরুণ এস্তেভাও। ৫৫ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে মনে করিয়ে দিয়েছেন কেন তাঁকে লিওনেল মেসির সঙ্গে তুলনা করে ‘মেসিনিও’ নামে ডাকা হয়।
সেই গোলের মুহূর্তটিই যেন পুরো ম্যাচে বার্সেলোনার ওপর চেলসির ছড়ি ঘোরানোর প্রতিচ্ছবি। এস্তেভাওয়ের আগে ২৭ মিনিটে আত্মঘাতী গোলে চেলসিকে এগিয়ে দেন বার্সার ডিফেন্ডার জুলস কুন্দে। ৪৪ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন বার্সা অধিনায়ক রোনালদ আরাউহো। ম্যাচের তৃতীয় ও শেষ গোলটি চেলসি স্ট্রাইকার লিয়াম দালেপের, ৭৩ মিনিটে।
কাছাকাছি বয়স ও প্রতিভার কারণে চেলসি–বার্সা ম্যাচে আলোচনা ছিল এস্তেভাও ও ইয়ামালকে নিয়ে। কিন্তু ম্যাচ শুরু হতেই দুজনকে পাওয়া গেল দুই বিপরীত বিন্দুতে। ইয়ামালকে এই ম্যাচে একরকম বোতলবন্দী করে রাখেন চেলসির স্প্যানিশ ডিফেন্ডার মার্ক কুকুরেয়া।
ইয়ামাল অবশ্য চেষ্টা করেছিলেন চেলসি ডিফেন্ডারের জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার। ম্যাচের সবচেয়ে সফল ড্রিবলার (৪) ও ‘ডুয়েল’ জেতা (১২) খেলোয়াড়ও তিনি। কিন্তু অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে আর পেরে ওঠেননি। পুরো ম্যাচে সব মিলিয়ে নিতে পেরেছেন মাত্র একটি শট। ইয়ামালের ব্যর্থতার রাতে নিজেকে আরও উজ্জ্বল করে তোলেন এস্তেভাও। দুটি শট নিয়ে একটিতে করেছেন অনিন্দ্যসুন্দর এক গোল, যা আরও অনেক দিন মনে রাখার মতোই।
৫৫ মিনিটে চেলসির দলীয় সমন্বয়ে দৃষ্টিনন্দন পাসিং থেকে শুরু হয়েছিল আক্রমণ। সে ধারাবাহিকতায় ডান প্রান্তে বল পান এস্তেভাও। দ্রুতগতিতে বক্সের ভেতর ঢুকে প্রথমে কাটান বার্সার ডিফেন্ডার পাও কুবারসিকে। এস্তেভাওয়ের কাছে কুবারসি যেভাবে নাকাল হয়েছেন, সেটা স্প্যানিশ ডিফেন্ডারকে অনেক দিন তাড়া করে বেড়াবে। এগিয়ে আসা বার্সার আরেক ডিফেন্ডার আলেহান্দ্রো বালদেকেও কাছে ঘেঁষতে না দিয়ে দুর্দান্ত এক শটে গোল করেন ব্রাজিলিয়ান তরুণ। এই গোলের পরই মূলত মানসিকভাবে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বার্সা।
চ্যাম্পিয়নস লিগে তৃতীয় ‘টিনএজ’ (কিশোর) হিসেবে নিজের প্রথম তিন ম্যাচে গোল করলেন এস্তেভাও। এই গোল করার সময় তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর ২১৫ দিন। এর আগে ১৮ বছর ১১৩ দিনে কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং ১৯ বছর ১০৭ দিনে গোল করেন আর্লিং হলান্ড।
চলতি মৌসুমে ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ১০ গোল করলেন এস্তেভাও। গতকাল রাতের গোলটি এস্তেভাওয়ের ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত সেরা। শুনুন তাঁর মুখেই, ‘আমি কেমন অনুভব করছি, সেটা বলার ভাষা আমার নেই। এটা নিখুঁত একটা রাত ছিল। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ সবকিছুর জন্য।’
এস্তেভাও আরও বলেন, ‘সবকিছু আমার জন্য খুব দ্রুতই ঘটেছে। আমি বুঝে ওঠার আগেই যেন সব হয়ে গেল। শুধু একটু জায়গা খুঁজে পেলাম, কোনোমতে সেখান দিয়ে বেরিয়ে গেলাম এবং তারপর গোলটা করলাম। এটা ছিল আমার ক্যারিয়ারের জন্য খুবই বিশেষ একটি মুহূর্ত। আশা করি আরও অনেক গোল করব।’
এই গোলের পর এস্তেভাওকে অনেকে আবারও মেসির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেছেন। যদিও তাতে আগ্রহ নেই চেলসি কোচ এনজো মারেসকার। তিনি চান না এমন তুলনা হোক। জয়ের পর চেলসি কোচ বলেন, ‘সে ও লামিন (ইয়ামাল) দুজনেই খুব তরুণ। মাত্র ১৮ বছর বয়স। আর আপনি যদি তাদের সঙ্গে মেসি বা (ক্রিস্টিয়ানো) রোনালদোর তুলনা করা শুরু করেন, তাহলে আমার মনে হয় এটা তাদের মতো তরুণদের জন্য অনেক বেশি চাপের।’
মারেসকা বলেন, ‘১৮ বছর বয়সে তাদের শুধু খেলা উপভোগ করা দরকার, অনুশীলনের মাঠে হাসিখুশি হয়ে পৌঁছানো দরকার। কিন্তু যখন আপনি তাদের মেসি বা রোনালদোর সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন, তখন আমার মনে হয় এটা তাদের জন্য খুব বেশি চাপের হয়ে যায়।’
এদিকে এই হারের পর ৫ ম্যাচ শেষে ৭ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার ১৫ নম্বরে নেমে গেছে বার্সা। আর সমান ম্যাচে ১০ পয়েন্ট ৫ নম্বরে আছে চেলসি।