বাংলাদেশে কি কারও নাম নেইমার? লিওনেল মেসি বা জিনেদিন জিদান?
সম্ভাবনা আছে, বেশ ভালোই আছে। বাংলাদেশ তো ফুটবলপাগল দেশ। এখানে ভিনদেশি তারকাদের নামে সন্তানের নাম রাখা একেবারে অচেনা কিছু নয়। তাহলে ভাবুন, ব্রাজিলে কেমন অবস্থা! বাংলাদেশের চেয়ে আরও বেশি ফুটবল-উন্মাদ দেশ সেটা। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তারা—‘ইট ফুটবল, ড্রিংক ফুটবল, স্লিপ ফুটবল’—এ কথাটার জীবন্ত উদাহরণই যেন ব্রাজিল।
ব্রাজিলের ভূগোল ও পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট (আইবিজিই) গত মঙ্গলবার এমন এক তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে দেশটির সর্বশেষ ২০২২ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় নামগুলো বের করা হয়েছে। সেই তথ্য ঘেঁটে সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো’ খুঁজে বের করেছে, কোন ফুটবল তারকার নামে সবচেয়ে বেশি মানুষের নাম রাখা হয়েছে।
ফলটা দেখে বোঝা যায়—ফুটবল আর বিশ্বকাপ ব্রাজিলিয়ানদের জীবনে কত গভীরভাবে গাঁথা। সন্তানদের নাম রাখার সময়ও ফুটবলারের নাম বা পদবি ব্যবহার করা তাঁদের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার। যেমন কেউ যদি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ভক্ত হন, তবে পুরো নামটা নয়—‘ক্রিস্টিয়ানো’ বা ‘রোনালদো’ রাখাই যথেষ্ট মনে করেন।
গ্লোবোর তথ্যমতে, ব্রাজিলে ‘নেইমার’ নামে নিবন্ধিত মানুষের সংখ্যা ২ হাজার ৪৪৩। এর মধ্যে ৫০ জন আবার নারী।
নেইমার ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারেননি। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চোটে পড়েই সময় কেটেছে তাঁর। তবু ব্রাজিলিয়ানদের হৃদয়ে তাঁর স্থান কত গভীর, সেটা এই সংখ্যাই বলে দেয়। নেইমারের জনপ্রিয়তা সময়ের সঙ্গে বেড়েছে—এটাও দেখা যায় পরিসংখ্যানে। ২০০৯ সালে সান্তোসের হয়ে তাঁর অভিষেকের আগে ব্রাজিলে ‘নেইমার’ নামধারী মানুষের সংখ্যা ছিল এক শরও কম। এখন গড় বয়স ১১ বছর—অর্থাৎ নেইমারের উত্থানের সময়ই জন্ম তাদের। গত তিন বিশ্বকাপে শিরোপা না পেলেও, ব্রাজিলিয়ানদের মনে নেইমারের প্রভাব স্পষ্ট।
ব্রাজিলের ২৭টি রাজ্যেই নেইমারের নামে মানুষ আছেন। সবচেয়ে বেশি মিনাস গেরাইসে (৩৭২ জন)। এরপর সাও পাওলো (৩৪০), আমাজোনাস (২৩৯) ও বাহিয়া (২৩২)।
তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ফুটবলারের নামে নাম রাখায় ব্রাজিলে নেইমার সবচেয়ে জনপ্রিয় নন। এমনকি আর্জেন্টিনার এক সাবেক ফুটবলারও তাঁকে ছাড়িয়ে গেছেন—হুয়ান রোমান রিকেলমে!
আইবিজিই–এর তথ্যমতে, ব্রাজিলে ‘রিকেলমে’ নামধারী মানুষ ২৫ হাজার ৯৪২ জন। তবে ‘রিকেলমে’ পদবি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। আরও মজার বিষয়, ব্রাজিলে ‘রিকুয়েলমে’ নামেও আছেন ৩৩৮ জন।
নতুন প্রজন্ম হয়তো রিকেলমেকে চেনে না। তিনি এখন বোকা জুনিয়র্সের সভাপতি। মেসির আগে আর্জেন্টিনার ১০ নম্বর জার্সি ছিল তাঁর গায়ে। ‘অলস সৌন্দর্য’—এই নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন আর্জেন্টাইন ফুটবলে। সেই অলস সৌন্দর্যের ভক্ত ব্রাজিলেরও অন্তত ০.০১ শতাংশ মানুষ, যাদের নাম রাখা হয়েছে তাঁর নামে। তাদের গড় বয়স ১২ বছর।
’৯০ দশকের শুরুর দিকে ব্রাজিলে ‘রিকেলমে’ নামধারী ছিলেন মাত্র ২২৮ জন। কিন্তু ২০০০ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে, অর্থাৎ রিকেলমের উজ্জ্বল সময়ে, সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ২২০! তখন তিনি বোকা জুনিয়র্সকে তিনবার (২০০০, ২০০১, ২০০৭) জিতিয়েছেন দক্ষিণ আমেরিকার শীর্ষ ক্লাব প্রতিযোগিতা কোপা লিবার্তোদোরেস। শুধু সাও পাওলো রাজ্যেই রিকেলমে নামধারী ৩ হাজার ৭৯৮ জন; দ্বিতীয় অবস্থানে বাহিয়া, ৩ হাজার ৭৭৩ জন নিয়ে।
ব্রাজিলে ‘মেসি’ নামধারী মানুষ ৩৬৩ জন, ‘ম্যারাডোনা’ ১২৮ জন। নামের উপাধি হিসেবে ধরলে ‘মেসি’ আছেন ৭৫৫ জন, ‘ম্যারাডোনা’ ৪৪৭ জন, আর ‘রিকেলমে’ উপাধিধারীর সংখ্যা ৫ হাজার ৫১৭।
ব্রাজিলিয়ানদের কাছে বিশ্বকাপ মানে আবেগের পরাকাষ্ঠা। সেটা বোঝা যায় ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর ‘রোমারিও’ নামের উত্থান দেখে। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এই নামধারী ছিলেন ৯ হাজার ২১১ জন। কিন্তু ’৯০ দশকে গিয়ে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ হাজার ১১০! তাঁর সতীর্থ বেবেতো নামধারী ২৪৭ জন। আসলে বেবেতো তাঁর ডাকনাম; আসল নাম জোসে রবার্তো গামা দে অলিভেইরা। রোমারিও ও বেবেতো নামধারীদের গড় বয়স এখন ২৯ বছর।
ব্রাজিলে শুধু নাম নয়, ডাকনামও হয়ে গেছে আনুষ্ঠানিক নাম। যেমন ১৮৭ জন ‘রোনালদিনিও’, ১২১ জন ‘কাকা’ ও ৫৮২ জন ‘জিকো’। আশির দশকের ‘সাদা পেলে’ জিকো নামধারীদের গড় বয়স ৪১ বছর, রোনালদিনিওদের ২৪ এবং কাকাদের ১৬।
আর পেলে? তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সেই কিংবদন্তির নামে ব্রাজিলে নিবন্ধিত আছেন ৭৫ জন। গড় বয়স ৪৭ বছর। আরও ১৫৪ জনের উপাধিও ‘পেলে’।
ফুটবলে ব্রাজিলিয়ানরা শুধু জেতে না, বাঁচেও। নামেই তার প্রমাণ।