ফ্রান্সের জার্সিতে কিলিয়ান এমবাপ্পে
ফ্রান্সের জার্সিতে কিলিয়ান এমবাপ্পে

বিশ্বকাপ ফাইনাল

সেদিন আর্জেন্টিনার জয় প্রাপ্য ছিল, বললেন এমবাপ্পে

অনেকের চোখে যা লটারি, সেই টাইব্রেকারেই মীমাংসা হয়েছিল ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ ফাইনালের। আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স ১২০ মিনিটের খেলায় ৩-৩ গোলে সমতা থাকার পর টাইব্রেকারে জিতেছিল লিওনেল মেসির দল। প্রায় তিন বছর পর ফ্রান্স ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে বললেন, ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ালেও সেদিন আর্জেন্টিনারই জয় প্রাপ্য ছিল।

২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে ফ্রান্সের হয়ে ৩টি গোলই করেছিলেন এমবাপ্পে। দুর্দান্ত খেলেও হেরে যাওয়ার সেই দুঃখ তিনি ভুলতে চান না, কারণ সামনেই আসছে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ।

২৬ বছর বয়সী এমবাপ্পে তাঁর বেড়ে ওঠা, ফুটবল ক্যারিয়ার, জীবনদর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জর্জ ভালদানোকে। মুভিস্টার প্লাসে প্রচারিত ‘ইউনিভারসো ভালদানো’ নামের অনুষ্ঠানে তিনি ২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালে নিজের হ্যাটট্রিক নিয়ে বলেন, ‘ফাইনালে আপনি গোল করার কথা ভাবেন না, ভাবেন জেতার কথা। ওটা ছিল এক পাগলাটে ম্যাচ। আর্জেন্টিনার জয় প্রাপ্য ছিল। কারণ, ম্যাচজুড়ে তারা ভালো খেলেছিল।’

২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালে মেসির আর্জেন্টিনার কাছে হেরেছিল এমবাপ্পের ফ্রান্স

সেদিনের ফাইনালে আর্জেন্টিনা প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে এমবাপ্পে তা দুই মিনিটের মধ্যে শোধ করে দেন। পরে অতিরিক্ত সময়ে আর্জেন্টিনা আবার এগিয়ে যাওয়ার পর ১১৮ মিনিটে এমবাপ্পে সমতা নিয়ে আসেন। শেষ পর্যন্ত তো টাইব্রেকারের হতাশায় পুড়তে হয়েছে এমবাপ্পেকে, ‘ম্যাচের একটা সময় আমরা ভালো খেলেছি। কিন্তু পুরোটা যদি দেখেন, তাহলে (ওদের জয়) প্রাপ্যই ছিল। এটা কষ্টদায়ক। তবে আমাদের ভুলে যাওয়া চলবে না। কারণ, সামনের ২০২৬ আসরে আমরা আরেকবার এমন কষ্টের সমাপ্তি চাই না।’

এমবাপ্পের সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তাঁর অনুপ্রেরণা আর মুগ্ধতার কথাও, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সব সময়ই আমার আদর্শ, আমার জন্য এক অনুকরণীয় উদাহরণ। আমি সৌভাগ্যবান যে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারি—তিনি আমাকে পরামর্শ দেন, সাহায্য করেন...আমার কাছে তিনি এক নম্বর।’

২০১৮ সালে রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার আগে ক্লাবটির হয়ে ৪৫০ গোল করেছেন রোনালদো। বর্তমানে একই ক্লাবে খেলা এমবাপ্পে পর্তুগিজ তারকার কীর্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের জন্য তিনি এমন এক দৃষ্টান্ত, যিনি ক্লাবের জন্য অনেক কিছু করেছেন। ভক্তরা এখনো ক্রিস্টিয়ানোর স্বপ্ন দেখেন। তবে আমি আমার নিজস্ব পথেই হাঁটতে চাই।’

রোনালদো-এমবাপ্পে যখন অধিনায়ক হিসেবে মুখোমুখি

রোনালদো তাঁর আদর্শ হলেও কখনো তাঁর সঙ্গে খেলা হয়নি এমবাপ্পের। যেটা হয়েছে মেসির সঙ্গে। ২০২১ সালে বাধ্য হয়ে বার্সেলোনা ছাড়ার পর মেসি নাম লিখিয়েছিলেন পিএসজিতে, সেখানে দুই মৌসুম একসঙ্গে খেলেছেন এমবাপ্পে-মেসি। সাবেক আর্জেন্টাইন ও রিয়াল খেলোয়াড় ভালদানোর সঙ্গে এমবাপ্পে বলেন, মেসির সঙ্গে খেলাটা তাঁর জন্য কী অর্থ বহন করেছিল, ‘মেসির সঙ্গে খেলতে পারা ছিল এক বিশেষ সৌভাগ্য। আমি কখনো ভাবিনি, আমার ক্যারিয়ারে এমন কিছু ঘটবে। সব সময় আমার স্বপ্ন ছিল রিয়াল মাদ্রিদে খেলা, আমি কখনো বার্সেলোনায় যাওয়ার কথা ভাবিনি। আমি ধরে নিয়েছিলাম, মেসি তাঁর পুরো ক্যারিয়ার সেখানেই (বার্সেলোনায়) কাটাবেন।’

আচমকাই মেসি পিএসজিতে যাওয়ার পর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল জানিয়ে এমবাপ্পে বলেন, ‘যখন আপনি বিখ্যাত হন, তখন অনেকেই আপনাকে নানা নামে চিহ্নিত করতে শুরু করে। একজন মানুষ হিসেবে আবার একজন খেলোয়াড় হিসেবেও। কিন্তু মেসি সম্পূর্ণ বিনয়ী, তিনি সবাইকে সম্মান করেন। আর তিনি একেবারেই অনন্য এক খেলোয়াড়। আপনার দলে যদি তাঁর মতো কেউ থাকে, তাহলে শুধু তাঁর কাছাকাছি থাকাটাই যথেষ্ট, দেখে যাবেন তিনি কীভাবে সবকিছু করেন। তাঁর পাশে থাকা আমাকে খেলোয়াড় হিসেবে অনেক সাহায্য করেছে, খেলা আরও গভীরভাবে বুঝতে শিখেছি।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে রিয়ালের ফরাসি ফরোয়ার্ড বলেন, ‘তাঁর কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি, আর এ জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। ওটা ছিল দুইটা অসাধারণ বছর। এমন এক অনন্য খেলোয়াড়কে পাশে পাওয়া ছিল সত্যিকারের সুবর্ণ সুযোগ।’