জাতীয় দলের হয়ে গোল করা অনেক ফুটবলারের স্বপ্ন। দলের হয়ে খেলা এবং গোল করে দল জেতানোকে ক্যারিয়ারের গৌরবময় মুহূর্ত মনে করেন তাঁরা। কারণ, কাজটা সহজ নয়। তবে কেউ কেউ এমনও আছেন, যাঁরা জাতীয় দলের হয়ে গোল করাকে অভ্যাসে পরিণত করেছেন। যে তালিকায় সবার আগে আসে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নাম।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোল করা রোনালদো এখনো গোল করে চলেছেন। ‘সিআর সেভেন’–এর ঠিক পেছনেই আছেন সর্বকালের আরেক সেরা তারকা লিওনেল মেসি। রোনালদো ও মেসির আগে লম্বা সময় এ তালিকায় শীর্ষে থাকা ইরানের আলী দাইয়িও আছেন এ তালিকায়। একনজরে এবার দেখে নেওয়া যাক আরও কারা আছেন তালিকায়।
চার বছর ধরে জাতীয় দলের হয়ে গোল করায় সবার ওপরে অবস্থান করছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এখন পর্যন্ত ২২১ ম্যাচে ১৩৮ গোল করেছেন পর্তুগিজ মহাতারকা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে গোল করায় এই মুহূর্তে অনেকটাই ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন রোনালদো।
পর্তুগিজ মহাতারকা এখনো ফুটবল ছাড়েননি। সব ঠিক থাকলে ২০২৬ বিশ্বকাপেও হয়তো দেখা যাবে তাঁকে। ফলে তাঁর গোলসংখ্যা সামনের দিনগুলো নিশ্চিতভাবে আরও সমৃদ্ধ হতে যাচ্ছে।
১৯৩ ম্যাচে ১১২ গোল করে দুই নম্বরে আছেন লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন তারকার শীর্ষের সম্ভাবনা অনেকটাই কম। কারণ, তাঁর হাতে সম্ভাব্য যে সময় আছে, রেকর্ড ভাঙার মতো ম্যাচ হয়তো পাবেনই না। আর নাটকীয় কিছু না ঘটলে মেসি–রোনালদোর দুজনেই হয়তো ২০২৬ বিশ্বকাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলের ইতি টানবেন। বিশ্বকাপসহ সম্ভাব্য ম্যাচগুলো বিবেচনায় নিলে মেসির পক্ষে রোনালদোর রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা নেইও বলা যায়।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোল করার ক্ষেত্রে মেসি–রোনালদোর পরের নামটি হয়তো অনেকের জানা। রোনালদোর কাছে সিংহাসন হারানোর আগে লম্বা সময় পর্যন্ত ইরানি ফুটবলার আলী দাইয়িই ছিলেন আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতা। ইরানের হয়ে ১৯৯৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খেলা দাইয়ি ১৪৮ ম্যাচে করেছিলেন ১০৮ গোল। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সেই রেকর্ড রোনালদোর কাছে হাতছাড়া করেন তিনি।
এই তালিকার চতুর্থ নম্বরে থাকা নামটি বেশ চমকপ্রদ। লম্বা সময় ধরে ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সুনীল ছেত্রী—তিনিই এ স্থানটি দখল করেছেন। ১৫৫ ম্যাচে ছেত্রী গোল করেছেন ৯৫টি। মাঝে অবসর নিয়ে আবার ফিরেও এসেছেন। এখন তাঁর সামনে সুযোগ আছে ১০০ গোলের মাইলফলক পূরণের। ছেত্রী এই লক্ষ্য পূরণ করতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
সর্বোচ্চ গোলের পঞ্চম স্থানে যৌথভাবে আছেন বেলজিয়ান তারকা রোমেলু লুকাকু এবং মালয়েশিয়ার ফরোয়ার্ড মোখতার দাহারি। দুজনেই ৮৯টি করে গোল করেছেন। তবে লুকাকুর চেয়ে দাহারি বেশি ম্যাচ খেলেছেন।
লুকাকুর যেখানে ১২৪ ম্যাচ লেগেছে, দাহারির লেগেছে ১৪২ ম্যাচ। পাশাপাশি লুকাকু এখনো খেলে চলেছেন, অন্যদিকে ১৯৯১ সালে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন দাহারি। লুকাকুর এখনো সুযোগ আছে দাহারিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।
ষষ্ঠ স্থানেও আছেন যৌথভাবে দুজন। যেখানে আরব আমিরাতের আলী মাবখুত কম পরিচিত নাম হলেও অন্য নামটি কিন্তু বিখ্যাত। মাবখুতের মতোই বার্সেলোনার পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি করেছেন ৮৫ গোল।
তবে দুজনই এখন ফুটবলে সক্রিয়। ফলে এই তালিকায় দুজনেরই আরও ওপরে ওঠার সুযোগ আছে।
৮৪ গোল করা হাঙ্গেরিয়ান কিংবদন্তি ফেরেঙ্ক পুসকাস তালিকার ৭ নম্বরে থাকলেও একদিক থেকে তিনিই কিন্তু সবার ওপরে। পুসকাস ৮৪ গোল করেছেন মাত্র ৮৫ ম্যাচে। অর্থাৎ তাঁর ম্যাচপ্রতি গোল প্রায় একটি করে (০.৯৯)। এই পরিসংখ্যানে তাঁর ধারেকাছে আছেন কেবল জাপানের কুনিশিগে কামামোতো। তাঁরও গোল ম্যাচপ্রতি ০.৯৯। তবে এ দুজনকে শিগগিরই অন্য কেউ টপকাতে পারবেন, সে ইঙ্গিত নেই।
জাম্বিয়ার সর্বকালের সেরা ফুটবলারের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকবেন গডফ্রে চিতালু। নিজ দেশের তো বটেই, সর্বকালের সেরা ১০ গোলদাতার তালিকায়ও নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন চিতালু। ১১১ ম্যাচে তিনি করেছেন ৭৯ গোল। চিতালু পাঁচবার জাম্বিয়ার বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন।
যৌথভাবে তালিকার ৮ নম্বরে আছেন নেইমারও। ব্রাজিলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা নেইমারের গোল ১২৮ ম্যাচে ৭৯টি। নিজ দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পথে নেইমার পেছনে ফেলেছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার পেলেকে। তবে নেইমারের সুযোগ আছে সংখ্যাটা আরও বাড়ানোর।
ইরাকি ফুটবলার হুসেইন সাঈদ ১৩৭ ম্যাচে ৭৮ গোল করে আছেন তালিকার ৯ নম্বরে। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ইরাক জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন তিনি। তাঁকে শুধু ইরাকেরই নয়, এশিয়ার অন্যতম সেরা ফুটবলার বিবেচনা করা হয়।
সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার পেলে অনেক বছর পর পর্যন্ত নিজ দেশ ব্রাজিলের শীর্ষ গোলদাতা ছিলেন। ৯২ ম্যাচে ৭৭ গোল করা কিংবদন্তি পেলেকে পরবর্তী সময়ে টপকে গেছেন নেইমার। তবে এই গোলগুলো করার পথে তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন পেলে, যে কৃতিত্বে পেলে অনন্য একজন।