Thank you for trying Sticky AMP!!

কিংবদন্তি ফুটবলার ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার

চলে গেলেন ফুটবল কিংবদন্তি বেকেনবাওয়ার

সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার মারা গেছেন। যে তিনজন ফুটবলার খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন, তিনি তাঁদের একজন। কিংবদন্তি জার্মান ফুটবলারের বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তাঁর পরিবার আজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে গতকাল মারা গেছেন ‘কাইজার’।

জার্মানির আইকনিক এই ফুটবলার পশ্চিম জার্মানির হয়ে ১৯৭৪ সালে অধিনায়ক হিসেবে এবং ১৯৯০ সালে কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ শিরোপা হাতে তোলেন। জার্মানির হয়ে তিনি সব মিলিয়ে খেলেছেন ১০৩ ম্যাচ। এ ছাড়া বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে ১৯৭০–এর দশকে হ্যাটট্রিক ইউরোপিয়ান কাপও জিতেছেন বেকেনবাওয়ার। ক্যারিয়ারজুড়ে সাফল্যের মুকুটে দুর্দান্ত সব পালক যোগ করার পথে তিনি সর্বকালের সেরা ডিফেন্ডারদের একজন হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছেন।

Also Read: কোন 'ভুলে'র কথা স্বীকার করলেন বেকেনবাওয়ার?

‘‘কাইজার’ বা ‘সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত বেকেনবাওয়ার রক্ষণে দারুণ আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে পারতেন। বলের দখল রাখা থেকে শুরু করে আধুনিক সুইপার বা লিবেরোর ভূমিকায়ও তিনি ছিলেন অনন্য।

খেলা ছাড়ার পর প্রথমে কোচিং ও পরে সংগঠক হিসেবে কাজ করা বেকেনবাওয়ারকে অবশ্য দুর্নীতির অভিযোগেও অভিযুক্ত হতে হয়েছিল। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে দুর্নীতি করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগটি ছিল ২০০৬ বিশ্বকাপের আয়োজক হতে আয়োজক নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত ফিফা সদস্যদের ভোট কিনতে তহবিল গঠন করেছিল জার্মান বিডিং কমিটি। আর এই বিডিং কমিটির প্রধান ছিলেন বেকেনবাওয়ার। ২০১৭ সালের মার্চে এই অভিযোগের জন্য সুইস প্রসিকিউটররা তাঁকে জেরাও করেন। জীবনের এই নেতিবাচক অধ্যায়টুকু বাদ দিলে বেকেনবাওয়ারের বাকি জীবন ছিল অর্জন ও প্রাপ্তির।

বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে জার্মানি অধিনায়ক ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার

মিউনিখের গিসলিংয়ের ১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বরে জন্ম গ্রহণ করেন বেকেনবাওয়ার। শৈশবে ‘১৮৬০ মিউনিখের’ ভক্ত ছিলেন এই জার্মান। কিন্তু বয়সভিত্তিক ফুটবলের জন্য তিনি বেছে নেন মিউনিখের আরেক ক্লাব বায়ার্নকেই। শুরুতে তিনি ছিলেন একজন সেন্টার ফরোয়ার্ড। বায়ার্নের হয়ে পেশাদার ফুটবলে তাঁর অভিষেক হয় ১৯৬৪ সালে। সে সময় ক্লাবটি খেলত জার্মানির দ্বিতীয় সারির ক্লাবে। বায়ার্নে খেলার সময়েই একপর্যায়ে তিনি মাঝমাঠ এবং পরবর্তী সময়ে ডিফেন্ডার হিসেবে খেলতে শুরু করেন। বায়ার্নকে বুন্দেসলিগায় উঠে আসতে দারুণভাবে সহায়তাও করেন বেকেনবাওয়ার। এরপর ১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে তিনি দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন এবং দলটিকে প্রথমবারের মতো বুন্দেসলিগার শিরোপাও এনে দেন।

বায়ার্নকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ১৯৭২-৭৪ সালের মধ্যে দলকে ঘরোয়া লিগের হ্যাটট্রিক শিরোপাও এনে দেন। এ সময় ইউরোপিয়ান ফুটবলেও বায়ার্ন হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য এক দল। ১৯৭৪-৭৬–এর মধ্যে হ্যাটট্রিক ইউরোপিয়ান শিরোপা জেতার কথা তো আগেই বলা হয়েছে।

Also Read: অভিষেকেই অপ্রতিরোধ্য বেকেনবাওয়ার-মুলারের জার্মানি

২০ বছর বয়সে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সুইডেনের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে পশ্চিম জার্মানির হয়ে অভিষেক হয় তাঁর। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে অবশ্য ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় পশ্চিম জার্মানিকে। সে সময় জার্মান ফুটবল তাদের সোনালি সময়েও প্রবেশ করে। যে ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালে পশ্চিম জার্মানি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেয়। আর দুই বছর পর আসে বহুল কাঙ্ক্ষিত ফুটবল বিশ্বকাপটিও।

দলীয় এই সব সাফল্যের পথ ব্যক্তিগত অর্জন ঝুলিও ক্রমশ সমৃদ্ধ হয়েছে বেকেনবাওয়ারের। ১৯৭২ ও ১৯৭৬ সালে ব্যালন ডি’অর জিতে নেন এই ডিফেন্ডার। বেকেনবাওয়ার ফুটবলকে পাকাপাকিভাবে বিদায় জানান ১৯৮৩ সালে। এর আগে তর্কযোগ্যভাবে সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলের সঙ্গে নিউইয়র্ক কসমসে খেলেছেন বেকেনবাওয়ার। খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করে সেই একই বছর তাৎক্ষণিকভাবে পশ্চিম জার্মানির কোচের দায়িত্ব গ্রহণ করেন বেকেনবাওয়ার।

কোচ হিসেবেও বেকেনবাওয়ার ছিলেন দারুণ সফল

আগের অভিজ্ঞতা না থাকলেও তাতে অবশ্য কোনো সমস্যা হয়নি। প্রথমবারেই দলকে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়ে যান বেকেনবাওয়ার। তবে আরেক মহাতারকা ডিয়েগো ম্যারাডোনার অতিমানবীয় ফুটবলের সঙ্গে সেবার পেরে ওঠেনি পশ্চিম জার্মানি। রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। কিন্তু চার বছর পর সেই আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতেন বেকেনবাওয়ার। খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের এই অভিজ্ঞতা তখন ছিল কেবল ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি মারিও জাগালোর। আর পরে সেটি করে দেখালেন ফ্রান্সের দিদিয়ের দেশম।

Also Read: কমলা–সৌন্দর্য, কমলা–দুঃখ

কোচ হিসেবে বেকেনবাওয়ারের কীর্তি অবশ্য সেখানেই থামেনি। এরপর ফরাসি ক্লাব মার্শেইকে ১৯৯০-৯১ লিগ আঁর শিরোপা জেতান বেকেনবাওয়ার। আর ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে কোচ হিসেবে বুন্দেসলিগার শিরোপা এনে দেন বায়ার্নকেও। পরবর্তী সময়ে একই ক্লাবকে ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে উয়েফা কাপের শিরোপাও এনে দেন বেকেনবাওয়ার। কোচিং ক্যারিয়ারের ইতি টেনে বায়ার্নের সভাপতি এবং জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতির দায়িত্বও পালন করেন বেকেনবাওয়ার।