
একেকজন কোচ একেক ক্লাব বা দেশের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিয়েছেন, রেখে গেছেন ট্রফি–সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার। লিগ শিরোপা, ঘরোয়া কাপ কিংবা ইউরোপীয় মঞ্চ—জেতার তালিকা যত লম্বা, তাঁদের প্রভাবও তত গভীর। কে কতবার শিরোপার মঞ্চে উঠেছেন, তা জানতে নজর দেওয়া যাক সংখ্যার খাতায়। দেখে নেওয়া যাক ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ট্রফি জেতা শীর্ষ ১০ কোচ।
মাত্র পাঁচজন কোচ চারটি ইউরোপিয়ান দেশে শীর্ষ লিগ জিতেছেন, ইতালির জিওভানি ত্রাপাত্তোনি একজন। ইতালিতে ১০ বার সিরি আ জেতা ত্রাপাত্তোনি লিগ শিরোপা জিতেছেন জার্মানি, পর্তুগাল আর অস্ট্রিয়াতে। উদো লাত্তেক ও জোসে মরিনিওর সঙ্গে ত্রাপাত্তোনিরই কোচ হিসেবে ইউরোপের শীর্ষ তিনটি প্রতিযোগিতায় (ইউরোপিয়ান কাপ, উয়েফা কাপ, উইনার্স কাপ) চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কীর্তি আছে।
তিনজনের মধ্যে ত্রাপাত্তোনিই একমাত্র, যিনি সবই জিতেছেন একই ক্লাবের হয়ে (জুভেন্টাস)। ইতালির দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব ইন্টার মিলান ও এসি মিলান দুই দলের ডাগআউটেই দাঁড়ানো এই কোচ বর্তমানে অবসর যাপন করছেন। তার বয়স এখন ৮৬ বছর।
জার্মান ফুটবলে ওটমার হিটজফেল্ডকে ধরা হয় কিংবদন্তি কোচ। বায়ার্ন মিউনিখকে ৫ বার আর বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে ২ বার বুন্দেসলিগা জিতিয়েছেন। ১৯৯৭ সালে ডর্টমুন্ডকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানোর পাঁচ বছর পর একই ট্রফি জেতেন বায়ার্নের হয়ে। দুবার বর্ষসেরা কোচের স্বীকৃতিও পেয়েছেন ২৫ ট্রফি জেতা এই কোচ।
সর্বশেষ ২০০৮ থেকে পরের ৬ বছর সুইজারল্যান্ড জাতীয় দলের কোচও ছিলেন তিনি, যদিও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিছু জিততে পারেননি।
বর্তমানে চালু উয়েফার প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইউরোপা লিগ ও কনফারেন্স লিগ—তিনটিই জেতা একমাত্র কোচ জোসে মরিনিও। স্বঘোষিত ‘স্পেশাল ওয়ান’ মরিনিও ২০০৪ সালে পোর্তোকে জিতিয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ, একই ট্রফি ২০১০ সালে জিতিয়েছেন ইন্টার মিলানকে।
কিছুদিন আগপর্যন্ত তুরস্কের ক্লাব ফেনেরবাচের দায়িত্বে থাকা মরিনিও তাঁর ২৬ ট্রফির সর্বশেষটি জিতেছেন ২০২২ সালে, রোমার হয়ে কনফারেন্স লিগে।
‘বিগ ফিল’ নামে পরিচিত লুই ফেলিপে স্কলারির হাত ধরে এশিয়ায় ২০০২ বিশ্বকাপ জিতেছিল ব্রাজিল। জিতেছেন ২০১৩ ফিফা কনফেডারেশন কাপও। যদিও ২০১৪ বিশ্বকাপ হয়ে আছে তাঁর ক্যারিয়াগের বড় আক্ষেপ হিসেবে।
স্কলারির শিরোপা জয় অবশ্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সীমাবদ্ধ নয়। বরং ক্লাব ফুটবলেও সাফল্য আছে তাঁর। ২০১৫ সালে তাঁর অধীনে খেলে এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল চীনের ক্লাব গুয়াংজু এভারগ্রান্ডে। ২০২৪ সালের পর থেকে কোচিংয়ের বাইরে আছেন ৭৬ বছর বয়সী এই কোচ।
রেকর্ড ৫ বার উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা কোচ একজনই—কার্লো আনচেলত্তি। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচটি লিগেই ট্রফি জিতেছেন—এমন রেকর্ড গড়া একমাত্র কোচও আনচেলত্তিই।
সর্বকালের অন্যতম সেরা কোচ হিসেবে বিবেচিত এই ইতালিয়ান কোচ এখন পর্যন্ত জিতেছেন ৩১টি ট্রফি। সবই ক্লাব পর্যায়ে। গত মে মাসে ৬৬ বছর বয়সী এই কোচ ব্রাজিল জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছেন।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ইউক্রেন কোচ ভালেরি লোবানফস্কি ক্যারিয়ারে জিতেছেন ৩৩টি বড় শিরোপা। এর মধ্যে ৩২টিই দিনামো কিয়েভের হয়ে। ৮ বার সোভিয়েতের শীর্ষ লিগ জেতা লোবানফস্কি ২০০২ সালে মারা গেছেন।
তাঁকে ফিফা অর্ডার অব মেরিট পুরস্কার দিয়েছিল ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ইউক্রেনের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘হিরো অব ইউক্রেন পুরস্কার’ও পেয়েছেন তিনি।
রোমানিয়া, ইতালি, তুরস্ক, ইউক্রেন আর রাশিয়ায় কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা মির্চিয়া লুকেস্কুর। তবে সবচেয়ে সফল ইউক্রেনের ক্লাব শাখতার দোনেৎস্কে। ইউক্রেনের ক্লাবটিতে ৮টি প্রিমিয়ার লিগসহ ২২টি শিরোপা জিতেছেন।
তিনবার ইউক্রেনের বর্ষসেরা কোচের স্বীকৃতি পাওয়া লুকেস্কু এখন রোমানিয়া জাতীয় দলের প্রধান কোচ।
স্কটিশ ফুটবলের কিংবদন্তি এ কোচের ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৬০ সালে ডানফারমিলনে দিয়ে। তবে সাফল্য পেয়েছেন সেল্টিকে।
১৩ বছর সেল্টিকে থাকার সময় একটি ইউরোপিয়ান কাপ ও ১০টি স্কটিশ লিগ চ্যাম্পিয়নশিপসহ মোট ৩১টি ট্রফি জিতেছেন স্টেইন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৫ সালে মৃত্যু পর্যন্ত ছিলেন স্কটল্যান্ড জাতীয় দলের কোচ।
বর্তমান ম্যানচেস্টার সিটি কোচ ইতিহাসের দুই কোচের একজন, যারা দুবার মহাদেশীয় ট্রেবল জিতেছেন। প্রিমিয়ার লিগ, লা লিগা এবং বুন্দেসলিগায় টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতার রেকর্ডও পেপ গার্দিওলারই।
এখন পর্যন্ত তিনটি দেশে তিন ক্লাবে কোচিং করিয়েছেন গার্দিওলা, দুটিতেই জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ। বর্তমানে সক্রিয় কোচদের মধ্যে তাঁর ট্রফির সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
ব্রিটেনের রানী থেকে নাইটহুড পেয়ে এরই মধ্যে ‘স্যার’ হয়ে গেছেন তিনি। ১৯৮৬ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচের দায়িত্ব পাওয়া অ্যালেক্স ফার্গুসন ২০১৩ পর্যন্ত ডাগআউটে ছিলেন।
২৬ বছর দায়িত্বে থাকার সময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে জিতিয়েছেন রেকর্ড ৩৮টি শিরোপা, যার মধ্যে প্রিমিয়ার লিগই ১৩টি। ইউনাইটেডের দায়িত্ব নেওয়ার আগে স্কটিশ ক্লাব অ্যাবারডিনের হয়ে জিতেছেন আরও ১১ ট্রফি।
এক যুগ আগে কোচিং থেকে বিদায় নেওয়া ফার্গুসন আরও কত বছর যে সবচেয়ে বেশি ট্রফিজয়ী কোচের রেকর্ড নিজের করে রাখবেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।