জ্ঞান হারানোর পর টেড ড্রেককে কাঁধে তুলে মাঠের বাইরে নিয়ে যান আর্সেনালের ট্রেনার টম হুইটেকার
জ্ঞান হারানোর পর টেড ড্রেককে কাঁধে তুলে মাঠের বাইরে নিয়ে যান আর্সেনালের ট্রেনার টম হুইটেকার

অজ্ঞান হয়ে মাঠের বাইরে, জ্ঞান ফেরার পর করেন হ্যাটট্রিক

ভাবছেন, এত ফুটবলার রেখে হঠাৎ টেড ড্রেককে নিয়ে লম্বা কাহিনি লেখা হলো কেন? আজ যে তাঁর জন্মদিন! ফুটবলের এই অকুতোভয় যোদ্ধা ১৯১২ সালের ১৬ আগস্ট টাইটানিকের শহর সাউদাম্পটনে জন্মগ্রহণ করেন।

১৮ এপ্রিল ১৯৩৮, লন্ডনে হাড় কাঁপানো শীত। ব্রেন্টফোর্ডের মাঠ গ্রিফিন পার্ক তুষারে সাদা চাদরের মতো ঢাকা। তড়িঘড়ি করে কিছু বরফ সরানো গেলেও মাঠে তখনো অর্ধেক জমে আছে। এর মধ্যেই আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচ শুরু।

আর্সেনালের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগ (ইংল্যান্ডের ক্লাব ফুটবলের তৎকালীন শীর্ষ প্রতিযোগিতা) মৌসুমে মাত্র চার রাউন্ড বাকি। শিরোপা দৌড়ে থাকা উলভারহ্যাম্পটনের সঙ্গে তখনো পয়েন্ট সমান। এক বাজে দিন মানে ট্রফি জয়ের স্বপ্ন শেষ। তাই রক্ষণ যেমন জমাট রাখতে হচ্ছিল, তেমনি গোলেরও দরকার ছিল।

কিন্তু আর্সেনালের গোলমেশিনের সঙ্গে সেদিন শুরুতে যা ঘটেছিল, তা দেখার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলেন না। ম্যাচের প্রথমার্ধে বাঁ হাতের কবজিতে আঘাত পেলেও খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ পর ব্রেন্টফোর্ড গোলকিপার জো ক্রোজিয়ারের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খেয়ে মাঠেই অজ্ঞান হয়ে যান। অন্য খেলোয়াড়দের সহায়তায় আর্সেনালের ট্রেনার টম হুইটেকার তাঁকে কাঁধে তুলে মাঠের বাইরে নিয়ে যান।

ব্রেন্টফোর্ড গোলকিপার জো ক্রোজিয়ারের সঙ্গে টেড ড্রেকের ধাক্কা লাগার সেই মুহূর্ত

সেই সময় বদলি খেলোয়াড় নামানো যেত না। এমনকি কেউ চোটে পড়ে মাঠ ছেড়ে গেলেও নয়। ফলে চোটগ্রস্ত দলকে কম খেলোয়াড় নিয়েই খেলতে হতো। আর্সেনালকেও সেদিন ওই দুর্ভাগ্য বরণ করে নিতে হয়েছিল।

প্রতিভাবান সেই ফরোয়ার্ডের আঘাতের তীব্রতা এতটাই ভয়ানক ছিল যে, দর্শকেরা দোটানায় পড়ে গেলেন। অনেকে ভাবতে লাগলেন, পুরোপুরি সেরে উঠে মাঠে ফিরতে তাঁর অনেক সময় লাগবে। কারও কারও মনে হচ্ছিল, তাঁর ক্যারিয়ারটাই বুঝি শেষ হয়ে গেল।

কিন্তু সবাইকে অবিশ্বাসের ঘোরে বন্দী করে তিনি অলৌকিকতার জন্ম দিলেন। কিছুক্ষণ শুশ্রূষার পর জ্ঞান ফিরে এল তাঁর। দ্বিতীয়ার্ধে আবারও খেলতে নেমে গেলেন। গুরুতর চোট নিয়েই ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে আর্সেনালকে জেতালেন! উত্তর লন্ডনের ক্লাবটি শেষ পর্যন্ত উলভারহ্যাম্পটনের চেয়ে ১ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে ১৯৩৭–৩৮ মৌসুমে লিগ চ্যাম্পিয়ন হলো। 

তাঁর সময়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা সেন্টার ফরোয়ার্ড ছিলেন টেড ড্রেক

অসাধারণ দক্ষতা ও অধ্যবসায়ের অনন্য প্রদর্শনীতে ফুটবলের লোককথায় জায়গা করে নেওয়া সেই মানুষটার নাম এডওয়ার্ড জোসেফ ড্রেক, ইংল্যান্ডের ক্রীড়াঙ্গনে যিনি টেড ড্রেক নামে পরিচিত। অদম্য সাহসিকতার ট্রেডমার্ক হয়ে ওঠা ড্রেকের নাম বর্তমান প্রজন্মের বেশিরভাগ ফুটবলপ্রেমী হয়তো শোনেননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগপর্যন্ত তাঁকেই ভাবা হতো বিশ্বসেরা সেন্টার ফরোয়ার্ড।

সেদিন ম্যাচ শেষ হওয়ার পরপরই আহত ড্রেককে লন্ডনের রয়্যাল নর্দার্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। সারা রাত তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি হেরাল্ডের এক কলামিস্ট জানান, টেড ড্রেকের সাহসিকতা ছিল একজন বীরের মতো। তাঁর বাঁ হাতের কবজির দুটি হাড় ভেঙে গিয়েছিল, মাথায় পড়েছিল পাঁচটি সেলাই। তবু দলের কথা ভেবে সব প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে তিনি মাঠে ফিরেছিলেন।

আর্সেনালের ট্রেনার হুইটেকার পরে জানান, তাঁর মনে হচ্ছিল তিনি সিংহ–হৃদয়ের কাউকে কাঁধে তুলে মাঠের বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন, যাঁর মনোবল ছিল দৃঢ়, ফিনিশার হিসেবে ছিলেন একদম নিখুঁত।

লোকেমুখে শোনা যায়, সেই সময় কোনো খেলোয়াড় মাথায় আঘাত পেয়ে (কনকাশন) জ্ঞান হারালে চেতনা ফেরাতে গন্ধযুক্ত লবণ দেওয়া হতো। ড্রেকের ক্ষেত্রেও সেটা করা হয়েছিল কি না, জানা সম্ভব হয়নি। তবে ড্রেক সেদিন মাঠে অবিচল সংকল্পের যে ছাপ রেখেছিলেন, তা তাঁকে ইংলিশ ফুটবলে আলাদা জায়গা করে দিয়েছিল।

আহত ড্রেককে লন্ডনের রয়্যাল নর্দার্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল

অথচ এখন কেউ সামান্য চোট পেলেই সপ্তাহখানেকের জন্য মাঠের বাইরে চলে যান। গুরুতর কিছু হলে তো সেই ফুটবলারের মৌসুমই শেষ হয়ে যায়।

এখনকার আর্সেনালের কথাই ভেবে দেখুন। চোটের কারণে গ্যাব্রিয়েল জেসুস, কাই হাভার্টজ, বুকায়ো সাকা, লিয়ান্দ্রো ত্রোসারদের মতো ফরোয়ার্ডদের গত মৌসুমে লম্বা সময় পায়নি গানাররা। নগর প্রতিদ্বন্দ্বী চেলসি থেকে ধারে আনা হয়েছিল আরেক ফরোয়ার্ড রাহিম স্টার্লিংকে। সেই স্টার্লিংও চোটে পড়ে আর্সেনাল কোচ মিকেল আরতেতার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেন।

কিন্তু টেড ড্রেক থাকতে আর্সেনালকে এক দশক গোল করার মানুষ নিয়ে ভাবতে হয়নি। ১০% ফিট থেকেও খেলতেন ১০০% ফিট মনোভাব নিয়ে।

তখন দিনের পর দিন খেলা হতো কর্দমাক্ত মাঠে, খেলতে হতো ভারী চামড়ার বুট পরে। বলও ছিল চামড়া-সেলাই করা, যা কাদা আর বৃষ্টির পানি শুষে আরও ভারী হয়ে যেত। ট্যাকল এতটাই ভয়ংকর ছিল যে এখনকার মতো সামান্য ধাক্কায় গড়াগড়ি খাওয়া, মুখ চেপে ধরে আঘাত পাওয়ার অভিনয় করা বা নাটকীয়ভাবে পড়ে যাওয়ার সুযোগই ছিল না।

ড্রেককেও এ ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল। এ কারণে শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও আর্সেনাল সমর্থকদের কাছে আজও তিনি ধ্রুপদী নম্বর ৯, সর্বকালের সবচেয়ে শক্তিশালী গানার।

জেফ হ্যারিসের এই বইয়ে ট্রেড ড্রেকের সামর্থ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়

জেফ হ্যারিস তাঁর আর্সেনাল হু’স হু বইয়ে টেড ড্রেককে নিয়ে লিখেছেন, ‘তার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল তেজ আর দৌড়, শক্তির সঙ্গে দুর্দান্ত গতি এবং জোরালো শট। বাতাসে ভেসে আসা বলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ক্ষেত্রেও সে ছিল দুর্দান্ত। সর্বোপরি সে ছিল নির্ভীক।’

পেশাদার ফুটবলে ড্রেকের ছুটে চলা চোটাঘাত আর রক্তাক্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের জার্সিতে তাঁর অভিষেক হয় ১৯৩৪ সালের ১৪ নভেম্বর লন্ডনের হাইবুরি স্টেডিয়ামে ইতালির বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। ফুটবল বিশ্ব ওই ম্যাচকে মনে রেখেছে ‘ব্যাটল অব হাইবুরি’ নামে।

নিছক এক আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ রূপ নেয় রণক্ষেত্রে। ফাউলের পর ফাউল, একের পর এক বাজে ট্যাকল, বাগ্‌যুদ্ধ থেকে হাতাহাতিতে জড়ানো—কী হয়নি সেদিন!

ইতালি ছিল তখনকার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ইংল্যান্ড সেই সময় ফিফার সদস্য ছিল না। তাই তারা বিশ্বকাপে খেলেনি। প্রীতি ম্যাচটির মধ্যে অনেকেই বিশ্বকাপ ফাইনালের ঝাঁজ খুঁজে পেয়েছিলেন।

এমন যুদ্ধংদেহী পরিস্থিতিতেও ড্রেককে আটকানো যায়নি। ১২ মিনিটের মধ্যে ৩–০ গোলে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। তৃতীয় গোলটা করেন ড্রেক। দলকে একটি পেনাল্টিও আদায় করে দেন। দ্বিতীয়ার্ধে ইতালির অধিনায়ক জিউসেপ্পে মিয়াৎসা দুই গোল শোধ করেন। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড জেতে ৩–২ গোলে।

পরের বছর এক অনন্য কীর্তি গড়েন ড্রেক। ১৯৩৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর ভিলা পার্কে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। লিগ ম্যাচে সেদিন অ্যাস্টন ভিলাকে ৭–১ গোলে বিধ্বস্ত করে আর্সেনাল। একাই সাত গোল করে ভিলার ৬১ হাজার ছুঁই ছুঁই সমর্থককে স্তব্ধ করে দেন ড্রেক, যা এখনো ইংল্যান্ডের শীর্ষ ফুটবলে এক ম্যাচে একজন ফুটবলারের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড।

১৯৩৬ এফএ কাপ ফাইনালেও সেই ড্রেকের জাদু। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ৭৪ মিনিটে তাঁর গোলেই শেফিল্ড ইউনাইটেডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্সেনাল। অথচ চোটের কারণে ড্রেকের সেদিন খেলার কথাই ছিল না!

সব বিপত্তিকে উপেক্ষা করে এভাবেই ফুটবলপ্রেমীদের মুগ্ধ করে গেছেন ড্রেক। তাঁর কিছু রেকর্ড এখনো অক্ষত আছে, কিছু রেকর্ড ভাঙা সত্যিই খুব কঠিন।

 ড্রেকই আর্সেনাল ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার, যিনি শীর্ষ লিগ মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল করে গোল্ডেন বুট জেতেন। ১৯৩৪–৩৫ মৌসুমে তিনি লিগে করেন ৪২ গোল, যা এখনো আর্সেনালের কোনো খেলোয়াড়ের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ। গানারদের জার্সিতে পেশাদার লিগে নিজের প্রথম পাঁচ মৌসুমে প্রতিবারই ছিলেন দলের শীর্ষ গোলদাতা। ক্লাবটির হয়ে দ্রুততম (১০৮ ম্যাচে) ১০০ গোলের রেকর্ডটাও তাঁর।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বিমান ও মহাকাশ বাহিনীতে যোগ দেন টেড ড্রেক

’৩০ ও ’৪০–এর দশকে আর্সেনালের সমার্থক হয়ে ওঠা ড্রেক হয়তো এই ক্লাবেই খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানতে চেয়েছিলেন। সেটা করেছেনও। কিন্তু যেভাবে চেয়েছিলেন, সেভাবে হয়নি। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে পেশাদার ফুটবল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে ড্রেক আর্সেনালের হয়ে বিভিন্ন প্রদর্শনী ম্যাচ খেলে বেড়ান। শারীরিক চর্চার প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ব্রিটিশ বিমান ও মহাকাশ বাহিনী রয়্যাল এয়ার ফোর্সেও। ১৯৪৫ সালে এক প্রীতি ম্যাচ খেলতে গিয়েই নিজের সর্বনাশ ডেকে আনেন। মেরুদণ্ডে পাওয়া আঘাত তাঁর ক্যারিয়ার শেষ করে দেয়।

ক্রিকেটেও ছোটখাটো ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছিলেন টেড ড্রেক। ১৯৩১ সালে ইংলিশ কাউন্টি ক্লাব হ্যাম্পশায়ারের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক হয়। তত দিনে তিনি অন্যতম সেরা সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে ফেলেছেন। হ্যাম্পশায়ার তাঁকে সম্মানি হিসেবে সপ্তাহে ১০ শিলিং (তৎকালীন ব্রিটিশ মুদ্রা) দিত। সেই সময় ক্রিকেটের পাশাপাশি তিনি ফুটবল খেলতেন জন্মশহরের ক্লাব সাউদাম্পটনে।

ক্রিকেটেও ছোটখাটো ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছিলেন টেড ড্রেক

১৯৩৪ সালে ৫ হাজার পাউন্ডের বিনিময়ে ড্রেককে দলে ভেড়ায় আর্সেনাল। উত্তর লন্ডনের ক্লাবটিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁর ফুটবলীয় ব্যস্ততা বেড়ে যায়। তাই ধীরে ধীরে ক্রিকেট থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। ১৯৩৬ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের ১৬তম ও শেষ ম্যাচটি খেলেন।

খেলোয়াড়ি জীবন শেষে অন্য অনেকের মতো ড্রেকও কোচিংয়ে ঝুঁকে পড়েন। লন্ডনের পৌর এলাকার আধা–পেশাদার ফুটবল ক্লাব হেন্ডনকে দিয়ে তাঁর কোচিংয়ে হাতেখড়ি।

১৯৪৭ সালে রিডিংয়ের কোচ হন ড্রেক। রিডিং তখন খেলত তৃতীয় বিভাগে। দলটিকে পাঁচ মৌসুম কোচিং করিয়ে দুইবার রানার্সআপ বানান। এতেই চেলসির সুনজরে পড়ে যান। ১৯৫২ সালের জুনে তাঁকে প্রধান কোচের দায়িত্ব দেয় ব্লুজরা।

চেলসিকে প্রথমবার লিগ শিরোপা জেতানোর পর সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন টেড ড্রেক

অবশেষে ১৯৫৫ সালে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ড্রেকের হাত ধরে প্রথমবারের মতো লিগে চ্যাম্পিয়ন হয় চেলসি। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে খেলোয়াড়–কোচ উভয় ভূমিকায় ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগের শিরোপা জয়ের নজির গড়েন তিনি। ২০০৪–০৫ মৌসুমে জোসে মরিনিওর কোচিংয়ে প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগপর্যন্ত সেটিই ছিল চেলসির একমাত্র লিগ শিরোপা।

১৯৬২ সালে চেলসি ছাড়ার পর লন্ডনেরই আরেক ক্লাব ফুলহামের রিজার্ভ দলের ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব নেন ড্রেক। পরবর্তীতে বার্সেলোনার সহকারী কোচ হন। ’৭০–এর দশকে তিনি ফুলহামে ফেরেন এবং ক্লাবের অনুসন্ধান বিভাগের প্রধান, পরিচালক এবং আজীবন সভাপতি হন।

এক সময় সাউদাম্পটনের একটি গ্যাস প্রস্তুতকারক ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিতে কাজ করতেন ড্রেক। সেখানে নাচের আসরে রুবি নামের এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয়। ১৯৩৮ সালে রুবিকেই বিয়ে করেন। এই দম্পতির তিন ছেলে সন্তান ম্যালকম, রবার্ট ও গ্রাহাম। ১৯৯৫ সালের ২৯ মে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন ড্রেক।

স্ত্রী রুবির সঙ্গে টেড ড্রেক

ভাবছেন, এত ফুটবলার রেখে হঠাৎ টেড ড্রেককে নিয়ে লম্বা কাহিনি লিখতে বসলাম কেন? আজ যে তাঁর ১১৩তম জন্মদিন! ফুটবলের এই অকুতোভয় যোদ্ধা ১৯১২ সালের ১৬ আগস্ট টাইটানিকের শহর সাউদাম্পটনে জন্মগ্রহণ করেন।

অ্যান্ডি ডুকাট, চার্লি জর্জ, ইয়ান রাইট, ডেনিস বের্গকাম্প, ডেভিড সিম্যান, থিয়েরি অঁরি, রবার্ট পিরেস,পাত্রিক ভিয়েইরা, রবিন ফন পার্সি…যুগে যুগে কত কিংবদন্তির জন্ম দিয়েছে আর্সেনাল। কিন্তু ড্রেকের মতো নিবেদিতপ্রাণ আরেকজন এখনো আসেননি, হয়তো আসবেনও না।

কিন্তু ইংলিশ ফুটবলকে এত কিছু দেওয়ার পরও ড্রেক কি প্রাপ্য মর্যাদাটুকু পেয়েছেন? এই তো গত জুনেই ড্রেকের পরিবার পেয়েছে একটি দুঃসংবাদ। ম্যানচেস্টারে অবস্থিত জাতীয় ফুটবল জাদুঘরের হল অব ফেমে এবারও জায়গা হয়নি তাঁর।

টেড ড্রেকের লিগ্যাসি সংরক্ষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তাঁর নাতির ছেলে লিয়াম হার্ডিং (ডানে)

লিয়াম হার্ডিং আপাতত সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছেন। আর্সেনালের পাঁড় ভক্ত হার্ডিংয়ের আরেক পরিচয় তিনি ড্রেকের নাতির ছেলে। ড্রেকের লিগ্যাসি সংরক্ষণের জন্য তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এবং আর্সেনালের পুরোনো স্টেডিয়াম হাইবুরিতে একটি স্মারক ফলকের জন্য ব্যাপক প্রচারও চালিয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস, ড্রেকের কৃতিত্ব একদিন জাতীয় পর্যায়েও স্বীকৃতি পাবে।