এপ্রিলে টানা দুটি ম্যাচে দর্শক কিলিয়ান এমবাপ্পেকে শিষ দেন।
এপ্রিলে টানা দুটি ম্যাচে দর্শক কিলিয়ান এমবাপ্পেকে শিষ দেন।

রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকেরা কেন নিজেদের খেলোয়াড়দের শিষ দেয়

চলতি মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল কিলিয়ান এমবাপ্পের (৩৪টি), যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের (২১) চেয়ে দেড় গুণের বেশি। অথচ এপ্রিলেই সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে টানা দুটি ম্যাচে গ্যালারি থেকে শিস শুনতে হয়েছে তাঁকে।

এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদে এসেছেন বছরখানেক আগে। এমন অভিজ্ঞতা নতুন। তবে রিয়াল মাদ্রিদে খেলে যাওয়া অনেক কিংবদন্তিই জানেন, এই ক্লাবের সমর্থকেরা কখনো কখনো রূঢ় হয়ে ওঠেন। তাঁরা শিস দেন। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, ইকার ক্যাসিয়াস, গ্যারেথ বেল কিংবা গত শতাব্দীর আলফ্রেডো ডি স্টেফানো—সবাইকেই কখনো না কখনো রিয়াল সমর্থকদের শিস সহ্য করতে হয়েছে।

ইংল্যান্ডের ফুটবলে গ্যালারি থেকে দুয়ো দেওয়া হয়। স্পেনে দেওয়া হয় শিস। এই শিসের অর্থ, ‘তুমি বাজে খেলছ’, ‘তোমার খেলা ভালো লাগছে না’। এককথায় বললে খেলোয়াড়ের ওপর একধরনের চাপ তৈরির চেষ্টা থেকেই এই শিস দেওয়া। প্রশ্ন হচ্ছে, অন্য অনেক দলের তুলনায় রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকেরা নিজেদের খেলোয়াড়দের এই চাপটা কেন বেশি দেন?

নিউইয়র্ক টাইমসের ক্রীড়া পোর্টাল দ্য অ্যাথলেটিক এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। মোটাদাগে দুটি প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। একটি হচ্ছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, আরেকটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল খেলোয়াড়দের শিষ দেন রিয়াল সমর্থকেরা।

স্পেনে শিসের সংস্কৃতি এসেছে ষাড়ের লড়াই থেকে। দর্শক যখন লড়াইয়ে অসন্তুষ্ট হন, তখন শিস দিয়ে ওঠেন। ষাড়ের লড়াইয়ের অসন্তোষ প্রকাশের ভাষা পরবর্তী সময়ে ফুটবলে এসেছে। ১৯২০–এর দশকে গ্যাসপার রুবিও এ ধরনের শিসের শিকার হয়েছিলেন।

পরবর্তী সময়ে ফ্রান্সিসকো জেন্তো আর ডি স্টেফানোর মতো কিংবদন্তিদেরও শিস শুনতে হয়েছে। তবে নিজেদের পারফরম্যান্স দিয়ে তাঁরা সেই অধ্যায় পেছনে ফেলেছেন। ফ্রান্সিসকো গত বছরের আগপর্যন্ত ছিলেন ৬টি ইউরোপিয়ান কাপ/চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা একমাত্র খেলোয়াড় (২০২৪ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে পাশে বসেছেন লুকা মদরিচ ও দানি কারভাহাল)। আর রাউল, রোনালদো ও বেনজেমারা ছাড়িয়ে যাওয়ার আগে ডি স্টেফানো ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের সর্বোচ্চ গোলদাতা (৩০৮)।

রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক খেলোয়াড় ও কোচ জর্জ ভালদানোর মতে গণমাধ্যমের চাপ রিয়াল সমর্থকদের মধ্যে ক্লাবের প্রতি উচ্চাশা তৈরি করে। আশির দশকে খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে নিজেও শিস শুনেছিলেন জানিয়ে আর্জেন্টাইন এই ফুটবলার বলেন, ‘রিয়ালে খেলার সময় আমি আর্জেন্টিনায় গেলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতাম। এমন না যে আর্জেন্টিনায় আমার ওপর প্রত্যাশা ছিল না। কিন্তু সেটা মাদ্রিদের মতো প্রতি সপ্তাহের চাপের মতো ছিল না। যে কারণে আমি সব সময় বলি, মাদ্রিদের খেলোয়াড়েরা আত্মরক্ষায় দৌড়ায়।’

দর্শক নিজেদের খেলোয়াড়দের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করেন।

খেলোয়াড়দের ওপর অসন্তোষ প্রকাশের আরও অনেক মাধ্যম আছে। শিসই কি রিয়ালে বেশি প্রচলিত? স্পোর্ট অ্যান্ড হাই পারফরম্যান্স নিয়ে কাজ মনোবিদ সারা মার্তিনেজের মতে এ ক্ষেত্রে দর্শকের মনস্তাত্বিক প্রভাব কাজ করে, ‘সমর্থকেরা অতীতের আইডলদের সঙ্গে তুলনা করে একটা মানদণ্ড তৈরি করেন। যদি বর্তমান খেলোয়াড়েরা সেই প্রয়োজনীয় চরিত্র ও গুণমানের স্তরে না পৌঁছান, তখন সমর্থকেরা খেপে যান। তাঁরা মনে করেন, তাঁদের একটা প্রভাব আছে। কখনো এটা সচেতনভাবে করেন, কখনো মানসিক চাপ থেকে। খেলোয়াড়েরা এতে তাড়িত হতে পারেন, তবে এই কৌশল সব সময় কাজে দেয় না।’

ভালদানোর মতে, যিনি রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি পরেন, তাঁকে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে হয়। মিডিয়া, ঐতিহাসিক সাফল্য, ক্লাবের বিশাল বাজেট এবং গ্যালাকটিকো সংস্কৃতির কারণে খেলোয়াড়দের ওপর মানসিক চাপ বাড়ে, যা এই ক্লাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ।