Thank you for trying Sticky AMP!!

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হাগ ও ম্যানচেস্টার সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা

ম্যানচেস্টার ডার্বি: যেভাবে বদলে গেল ইউনাইটেড–সিটি লড়াইয়ের ফেবারিট

ফুটবলে ডার্বি (একই শহরের দুটির দলের মধ্যে খেলা) মানেই যেন অন্য রকম এক উত্তেজনা। দুই প্রতিবেশী সমর্থকদের মধ্যে তৈরি হয় যুদ্ধংদেহী অবস্থার। তবে ‘ডার্বি’ মানেই যে দুটি দল শক্তি-সামর্থ্যে সমান হবে, তা কিন্তু নয়। ইংলিশ ফুটবলে দুই মার্সিসাইড ক্লাব লিভারপুল ও এভারটনের সাফল্য সমান নয়।

লন্ডনের দুই ক্লাব আর্সেনাল ও টটেনহামের অর্জনেও আছে যোজন-যোজন ফারাক। আর ডার্বিতে আধিপত্যের পাশার দানও অনেক সময় বদলে যায়। যেমন বদলে গেছে ম্যানচেস্টার ডার্বির রূপ। একসময় ম্যানচেস্টারের লাল অংশ ইউনাইটেড ছিল পরাক্রমশালী এক দল। আর এখন নীলের উত্থানে অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে লালের দাপট।

Also Read: ইউনাইটেড সেরা খেলাটাই খেলবে, মনে করেন সিটির কোচ গার্দিওলা

১৮৮১ সালে প্রথমবার মুখোমুখি হয় এ দুই দল। এর পর থেকেই নিয়মিত দেখা হচ্ছে দুই নগর প্রতিদ্বন্দ্বীর। তবে লম্বা সময় পর্যন্ত এ লড়াইয়ে দাপট ছিল ইউনাইটেডেরই। সামগ্রিক ফলেও এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছে ইউনাইটেড। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৯১ ম্যাচে মুখোমুখি হয়ে ইউনাইটেডের ৭৮ ম্যাচে জয়ের বিপরীতে সিটির জয় ৬০ ম্যাচে। ড্র হয়েছে ৫৩ ম্যাচে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বদলে গেছে এ চিত্র। যেখানে সর্বশেষ ৮ ম্যাচের ৬টিতেই জিতেছে সিটি, আর ইউনাইটেডের জয় মাত্র ২ ম্যাচে।

স্যার আলেক্স ফার্গুসনের অধীন মূলত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল ইউনাইটেড; একসময় ইংল্যান্ড ছাড়িয়ে যাদের রাজত্ব ছড়িয়ে পড়েছিল ইউরোপেও। ‘রেড ডেভিল’খ্যাত দলটি যখন সাফল্যের শিখর ছুঁয়েছে, প্রতিবেশী সিটি তখন সাদামাটা এক দল। ইউনাইটেডকে চোখ রাঙানো দূরে থাক, উঁচু গলায় কথা বলার শক্তিও যেন তাদের ছিল না।

সিটির অন্যতম দুই তারকা ডি ব্রুইনা ও আর্লিং হলান্ড

তবে দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করে ২০০৮ সালে আরব আমিরাতের শেখ মনসুর বিন জায়েদ আল নাহিয়ান দায়িত্ব নেওয়ার পর। ধীরে ধীরে শক্তির নিক্তিতে বদল আনতে শুরু করে ইতিহাদের ক্লাবটি। বদলে যেতে শুরু করে চেনা গল্পটাও। সিটি হয়ে উঠতে শুরু করে ইংলিশ ফুটবলের নতুন পরাশক্তি।

Also Read: সিটির বিপক্ষে ম্যাচের আগে ইউনাইটেড কোচ টেন হাগ, ‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই’

একুশ শতকের প্রথম দশকের শেষ দিকে সাফল্যের ভারে পরিপূর্ণ ইউনাইটেড ধীরে ধীরে শক্তি হারাতে শুরু করে। বিশেষ করে ফার্গুসনের বিদায়ের পর নিজেদের পায়ের নিচে আর মাটি খুঁজে পায়নি দলটি। ২০১২-১৩ মৌসুমের পর আর কোনো লিগও জেতা হয়নি তাদের। ২০১৫-১৬ মৌসুমে এফএ কাপ এবং ২০১৬-১৭ মৌসুমে ইউরোপা লিগ জেতা ছাড়া বড় কোনো অর্জন নেই। তবে এসব শিরোপা ইউনাইটেডের সীমাহীন ব্যর্থতাকে আড়াল করতে মোটেও যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে সিটির তুলনায় ইউনাটেড যেন বড্ড হতশ্রী এক দল।

অন্যদিকে ২০১৬ সালে পেপ গার্দিওলা দায়িত্ব নেওয়ার পর সিটি হয়ে ওঠে রীতিমতো অজেয় এক দল। এর মধ্যে হ্যাটট্রিক লিগ শিরোপাসহ ৫টি লিগ জিতেছে সিটি। গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগসহ জিতেছে ট্রেবলও। এবারও ট্রেবল জয়ের দৌড়ে আছে তারা। আজ রাতে লিগে ইউনাইটেডকে হারাতে পয়েন্ট তালিকায় দলটির অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে। এমন পরিস্থিতিতে ঘরের মাঠে সিটি যে দোর্দণ্ড প্রতাপ নিয়ে ইউনাইটেডের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, তা বলাই যায়।

ফুলহামের বিপক্ষে হারের পর হতাশ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড অধিনায়ক ব্রুনো ফার্নান্দেজ

এরপরও ইউনাইটেডকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। প্রিমিয়ার লিগে তারা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ দল। নিজেরা জিততে না পারলেও শিরোপা নির্ধারণে প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখে তারা। আজ রাতে ইতিহাদেও ইউনাটেড বদলে দিতে পারে শিরোপা জয়ের সমীকরণ। এই ম্যাচে সিটিকে হারাতে বা অন্তত রুখে দিতে পারলেও সেটি শিরোপা–দৌড়ে থাকা গার্দিওলার দলের জন্য বড় ধাক্কা হবে।

এ ম্যাচে হারলে লিগের শীর্ষে থাকা লিভারপুলের চেয়ে ৪ পয়েন্টে পিছিয়ে যাবে সিটি, যা মৌসুমের এ পর্যায়ে বড় বিপর্যয়ই হবে সিটির জন্য। ম্যাচের আগে সতর্ক সিটি কোচ গার্দিওলা বলেছেন, ‘ইউনাইটেডের কাছ থেকে আমি সেরাটাই আশা করি। কিন্তু তারা কী করছে, সেটা নিয়ে আমি কথা বলব না। প্রতিপক্ষের প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা।’ পাশাপাশি এ ম্যাচ জিতলে ইউনাইটেডের সেরা চারে উঠে আসার সম্ভাবনাও আরেকটু উজ্জ্বল হবে।

Also Read: ‘ম্যানচেস্টার ডার্বি’র ফয়সালা হবে মাঝমাঠেই

আজ রাতের ম্যাচ ইউনাইটেডের জন্য প্রতিশোধেরও বটে। সর্বশেষ ইতিহাদে খেলতে গিয়ে ৬-৩ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল ইউনাইটেড। সেদিন সিটির হয়ে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ফিল ফোডেন ও আর্লিং হলান্ড। অর্ধডজন গোলের সেই দুঃস্বপ্ন এখনো ভুলতে পারেনি ইউনাইটেড। তবে আজ সেই হারের দুঃস্বপ্ন ভোলার সুযোগ আছে এরিক টেন হাগের দলের। যদিও কাজটা সহজ হবে না।

Also Read: লিনেকারের প্রশ্ন—মাসসেরা হওয়া টেন হাগ কি এবার ছাঁটাই হবেন

চোট কাটিয়ে সিটির সব তারকা খেলোয়াড় মাঠে ফিরেছেন। মৌসুমের শেষ ভাগে এসে তাই পূর্ণ শক্তি নিয়েই নামতে পারছে ট্রেবলজয়ী ক্লাবটি। প্রিমিয়ার লিগে শেষ ৯ ম্যাচের ৮টিতেই জিতেছে তারা। কেবল চেলসির বিপক্ষে একটি ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে গার্দিওলার দল।

অন্যদিকে ইউনাইটেড প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে ঘরের মাঠেই ফুলহামের কাছে হেরেছে ২-১ গোলে। ফলে এ ম্যাচের আগে খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী থাকার সুযোগ নেই ইউনাইটেডের। তবু ডার্বি ম্যাচের উত্তাপ ভিন্ন। এমন ম্যাচে ঘটতে পারে যেকোনো কিছু। এ ম্যাচে খাটে না ফেবারিটতত্ত্বও। টেন হাগও নিশ্চয় অনিশ্চয়তার এই সম্ভাবনাকেই কাজে লাগাতে চাইবেন।