এটাই কি তাহলে আসল লিভারপুল ২.০? আর্নে স্লটের অধীনে এত পরিবর্তন, এত খরচের ফল কি তাহলে মিলতে শুরু করল? এত জলদি বলা কঠিন। তবে ইদানীং লিভারপুলের জন্য সবচেয়ে কঠিন হয়ে গিয়েছিল যে কাজটা, সেটা তারা করতে পারল আজ ওয়েস্ট হামের মাঠে। অবশেষে জিতল, ২-০ গোলে!
বেশ কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আজ লিভারপুল কোচ আর্নে স্লট। মোহাম্মদ সালাহকে বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছেন! তার বদলে আক্রমণভাগ সাজালেন ২৪ কোটি পাউন্ডের দুই তারকা—আলেকজান্ডার ইসাক আর ফ্লোরিয়ান ভির্টৎসকে নিয়ে। ইয়ুর্গেন ক্লপ যুগের পর এই প্রথম বেঞ্চে বসে খেলা দেখলেন সালাহ। আর এই সুযোগে নতুনেরা বুঝিয়ে দিলেন, কেন তাদের এত দাম দিয়ে আনা হয়েছে। দারুণ এক শটে লিভারপুলের জার্সিতে লিগে নিজের প্রথম গোলটি করলেন ইসাক। অন্যদিকে, এত দিন ধরে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ ভির্টৎস জবাব দিলেন ম্যাচসেরা পারফরম্যান্সে। যোগ হওয়া সময়ে লিভারপুলের দ্বিতীয় গোলটা কোডি গাকপোর।
এ জয়ের পর ১৩ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে লিভারপুল আপাতত লিগের পয়েন্ট তালিকায় ৮ নম্বরে।
তাহলে কি লিভারপুল তাদের পুরোনো রূপে ফিরে এসেছে? এখনই এতটা বাড়িয়ে বলার সময় আসেনি। এই ম্যাচে যে তারা খুব আহামরি ফুটবল খেলেছে, তাও নয়। তবে সর্বশেষ ১২ ম্যাচে ৯ হারের বিভীষিকার পর লন্ডনের এই জয়টা তো তপ্ত মরুভূমিতে এক ফোঁটা জল খুঁজে পাওয়ার মতো। জয়ের স্বস্তির পাশাপাশি আশার ঝিলিকও দেখছে লিভারপুল—ভির্টৎস ও ইসাক হয়তো অবশেষে নিজেদের খুঁজে পেতে শুরু করেছেন।
তবে লিভারপুলের এই জয়ের আনন্দে একটা ‘কিন্তু’ আছে। জয়টা এসেছে ওয়েস্ট হামের বিপক্ষে, যারা এই মৌসুমে নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে। নুনো এসপিরিতো সান্তোর দল লিভারপুলের ওপর তেমন কোনো চাপই তৈরি করতে পারেনি। ম্যাচের আগে ওয়েস্ট হাম সমর্থকেরা তাদের কিংবদন্তি খেলোয়াড় বিলি বন্ডসের মৃত্যুর শোক সংবাদ শুনে মাঠে এসেছিলেন। আশা করেছিলেন, হয়তো তাদের প্রিয় দল অন্তত বন্ডসের স্মরণে লড়াকু মানসিকতা মাঠে দেখাবে। কিন্তু ওয়েস্ট হামের খেলোয়াড়েরা চূড়ান্ত হতাশ করেছেন তাদের সমর্থকদের।
তার ওপর লুকাস পাকেতার এমন লাল কার্ড! ম্যাচের শেষ মুহূর্তে এমন বোকামি খুব কমই দেখা যায়। ৮২ মিনিটে রেফারির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে প্রথমে হলুদ কার্ড দেখেন ওয়েস্ট হামের এই ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার। তাতেও তার মন ভরেনি। রেফারির সঙ্গে তর্ক করতেই থাকলেন। ফলাফল, ৮৩ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন।
কোচ স্লটের সামনে এখন বড় প্রশ্ন—সালাহকে বাদ দেওয়াই কি ভির্টৎস ও ইসাকের ভালো খেলার মূল কারণ? এত বছর ধরে ডান প্রান্তে সালাহ ছিলেন দুর্দান্ত, আক্রমণের সব আলো ছিল তার ওপর। এবার সেই আলো সরে এল মাঝখানে খেলা ভির্টৎসের দিকে। আর এতে লিভারপুলকে নিঃসন্দেহে আরও ধারালোই মনে হয়েছে।
ইসাকের গোলটা দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে। সহায়তা করেছেন কোডি গাকপো, কিন্তু এর আসল কারিগর ছিলেন ভির্টৎস। ওয়েস্ট হামের রক্ষণের ওপর দিয়ে গাকপোর উদ্দেশে বাড়ানো ভির্টৎসের ওই জাদুকরী পাসটাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। প্রথমার্ধে ভির্টৎস-গাকপোর ফিনিশিং যদি আরেকটু ভালো হতো, তবে এমন দৃশ্য আরও দেখা যেত।
তবে যেটুকু দেখা গেছে, তাতেই হয়তো নতুন করে আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন লিভারপুল সমর্থকেরা।