লা লিগার মাদ্রিদ ডার্বিতে গতকাল রিয়াল মাদ্রিদকে ৫-২ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে আতলেতিকো মাদ্রিদ। রিয়ালের বিপক্ষে এক ম্যাচে পাঁচ গোল—এ দৃশ্য সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৫০ সালে, অর্থাৎ ৭৫ বছর আগে।
এস্তাদিও মেত্রোপলিতানোয় ৭০ হাজার দর্শক বিরল সেই ঘটনার সাক্ষী হলো। ম্যাচের আগে রিয়াল ছিল লিগের অপরাজেয় দল—টানা ছয় ম্যাচে ছয় জয়। বিপরীতে ছয় ম্যাচে মাত্র দুটি জয় নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিল আতলেতিকো।
তাই আগেভাগে ফেবারিট ধরা হচ্ছিল রিয়ালকেই। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে বদলে গেছে সব হিসাব–নিকাশ। রিয়ালের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করেই মাঠ ছেড়েছে আতলেতিকো। ঘরের মাঠে কৌশল এবং ব্যক্তিগত নৈপুণ্যসহ বেশ কিছু বিষয় আতলেতিকোর বড় জয়ে ভূমিকা রেখেছে। তেমনই ৪টি কারণ জেনে নেওয়া যাক।
এই জয়ের নেপথ্যে অনেকটা কৃতিত্ব দিতে হবে আতলেতিকো কোচ দিয়েগো সিমিওনেকে। সমালোচনার মুখে থাকা আর্জেন্টাইন কোচ দিয়েগো সিমিওনে কৌশলগত লড়াইয়ে জাবি আলোনসোকে পুরোপুরি ছাপিয়ে গেছেন। খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করা থেকে শুরু করে পরিবর্তনের সঠিক সময়—সব জায়গাতেই সিদ্ধান্ত ছিল নিখুঁত। ড্রেসিংরুমে বার্তা দিয়েছেন, ‘চাপ নয়, খেলো এবং উপভোগ করো।’ খেলোয়াড়রাও ঠিক সেটাই করেছে।
এমনকি ডার্বি ম্যাচ সামনে রেখে বিশ্রাম কমিয়ে জোর দিয়েছেন প্রস্তুতিতে। আর এসবের ফলাফলস্বরূপ আগের ছয় ম্যাচে যে রিয়াল মাত্র তিন গোল খেয়েছিল, তারা গতকাল রাতে এক ম্যাচেই হজম করেছে ৫ গোল। রিয়ালের বিপক্ষে সিমিওনের মূল কৌশল ছিল রিয়াল ফুলব্যাকদের পেছনে গিয়ে জায়গা বের করা।
আর এই পরিকল্পনা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন নিকো গঞ্জালেস, হুলিয়ান আলভারেজসহ অন্যরা। তাঁদের গতিময় ফুটবল কারভাহাল আর কারেরাসকে ক্রমাগত চাপের মুখে ফেলেছে, যা রিয়ালের রক্ষণকে এক রকম কোণঠাসাই করে ফেলে। সিমিওনের এই কৌশলের কোনো পাল্টা জবাব দিতে পারেননি আলোনসো, যা রিয়ালের বড় হারের কারণ হয়েছে।
এই ম্যাচে সিমিওনের বড় চমক ছিল নরওয়েজিয়ান ফরোয়ার্ড আলেক্সান্ডার সরলথকে শুরু থেকে খেলানো। অনেকের ধারণা ছিল অ্যালেক্স বায়েনা কিংবা আতোয়াঁন গ্রিজমান হয়তো শুরু থেকে একাদশে থাকবেন। কিন্তু সিমিওনে বাজি ধরলেন সরলথের ওপর।
আর যে কারণে তাঁকে দলে রাখা, সেই প্রত্যাশা পূরণও করেছেন সরলথ। এয়ারে (হাওয়া ভেসে আসা বল) আতলেতিকোকে এগিয়ে রেখেছেন। এমনকি সেই এয়ারের সুবিধাকে কাজে লাগিয়েই প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে গোল করে সমতা ফেরান ম্যাচে। বিশেষ করে যেভাবে লেগে থাকা রিয়াল ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করেছেন, তা ছিল দেখার মতো।
এই ম্যাচে রিয়াল বিচ্ছিন্নভাবে দারুণ কিছু মুহূর্ত পেয়েছে। যেমন এমবাপ্পের ফিনিশিং কিংবা ভিনিসিয়ুসের দারুণ এক অ্যাসিস্টে আরদা গুলেরের গোলের কথা বলা যায়। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ম্যাচটিতে রিয়াল ছিল সুর–ছন্দহীন দল। বল দখলের পরিসংখ্যান বাদ দিলে আতলেতিকোর কাছে রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে ছিল তারা।
বিশেষ করে রক্ষণে রিয়াল ছিল সবচেয়ে বেশি হতশ্রী। এই ম্যাচে আতলেতিকো সব মিলিয়ে ১৩টি শট নিয়ে ৭টি লক্ষ্যে রেখেছে। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে ম্যাচে রিয়াল কতটা চাপে ছিল। এমনকি সেই চাপ কাটানোর জন্য কিংবা ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বিশেষ কোনো পরিকল্পনাও ছিল না জাবি আলোনসোর দলটির।
মাঠের বাইরে সিমিওনে যেভাবে পার্থক্য গড়েছেন, মাঠে তা করেছেন হুলিয়ান আলভারেজ। আগের ম্যাচে রায়ো ভায়েকানোর বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন আলভারেজ। তাঁর এমন ছন্দে থাকার বার্তা পেয়েও তাঁকে আটকানোর মতো কোনো পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেনি রিয়াল।
ফলাফল রিয়ালের ওপর রীতিমতো ঝড় বইয়ে দিয়েছেন এই আর্জেন্টাইন। ম্যাচে জোড়া গোল করা ফরোয়ার্ড হয়েছেন ম্যাচসেরাও। পাশাপাশি ম্যাচে সবচেয়ে বেশি (৩টি) সুযোগও তৈরি করেছেন তিনি। ম্যাচের আগেই অবশ্য রিয়ালের কাছ থেকে তিন পয়েন্ট ছিনিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন আলভারেজ। সে কথা রেখেছেন।