তুরস্কের ফুটবলে একের পর এক বিতর্কে জড়ানো কোচ জোসে মরিনিওকে বরখাস্ত করেছে ফেনেরবাচে। আজ ক্লাবের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা জোসে মরিনিওর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি, যিনি ২০২৪-২৫ মৌসুম থেকে আমাদের পেশাদার ফুটবল দলের ম্যানেজার ছিলেন। দলের প্রতি তাঁর প্রচেষ্টার জন্য আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাই এবং তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে সাফল্য কামনা করি।’
পরশু রাতে বেনফিকার কাছে হেরে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ বাছাইপর্বের প্লে-অফ থেকে ছিটকে পড়ে ফেনেরবাচে। সেই হারের এক দিন পরই মরিনিওকে ছাঁটাই করল ইস্তাম্বুলের ক্লাবটি। গত বছরের জুনে ফেনেরবাচের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করেছিলেন এই পর্তুগিজ।
এর আগে গত রাতে আরেক তুর্কি ক্লাব বেসিকতাস তাদের কোচ ওলে গুনার সুলশারকে বরখাস্ত করে। সর্বশেষ লিগে চতুর্থ হওয়া বেসিকতাস গত সপ্তাহে কনফারেন্স লিগ বাছাইয়ের প্লে–অফ থেকে বিদায় নেয়।
৬২ বছর বয়সী মরিনিওর অধীনে ফেনেরবাচে তুর্কি সুপার লিগ শেষ করে দ্বিতীয় হিসেবে। তাঁর সময়ে ক্লাবটি মোট ৬২ ম্যাচ খেলে ৩৭টিতে জেতে এবং ১৪টিতে ড্র করে। হারে বাকি ১১টি ম্যাচ।
রিয়াল মাদ্রিদ, চেলসি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, এএস রোমাসহ ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় ক্লাবে কোচিং করানো মরিনিও তুরস্কে এক বছরে বারবার বিতর্কে জড়িয়েছেন। বিশেষ করে তুর্কি ফুটবলের রেফারিং নিয়ে ছিলেন বেশি সরব।
১. লাল কার্ড (২৪ অক্টোবর ২০২৪)
ইউরোপা লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ১–১ ড্র ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে একটি পেনাল্টি নিয়ে রেফারির সঙ্গে তর্কে জড়ান মরিনিও। তর্ক বাড়তে থাকলে তাঁকে ডাগআউট থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং লাল কার্ড দেখানো হয়।
২. লিগ নিয়ে তীব্র সমালোচনা (নভেম্বর ২০২৪)
তুর্কি সুপার লিগকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে মরিনিও বলেন, ‘বিদেশে কেউ তুর্কি লিগ দেখতে চায় না। এটি ধূসর, অন্ধকার আর দুর্গন্ধযুক্ত।’ এ ছাড়া তিনি তুর্কি রেফারিদের পক্ষপাতদুষ্ট বলেও অভিযোগ করেন। এই মন্তব্যের কারণে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হন তিনি।
৩. ডার্বির পর জরিমানা (ডিসেম্বর ২০২৪)
গালাতাসারাইয়ের বিপক্ষে ‘ইস্তাম্বুল ডার্বি’ ম্যাচের পর আবারও রেফারিদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন মরিনিও। তাঁর মন্তব্যকে ‘ক্রীড়া নীতিবিরোধী’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে জরিমানা করা হয়।
৪. বর্ণবাদী মন্তব্যের অভিযোগ (ফেব্রুয়ারি ২০২৫)
গালাতাসারাই–ফেনেরবাচে ম্যাচ–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে রেফারিকে নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বানরের মতো লাফিয়ে ওঠা।’ গালাতাসারাই এ মন্তব্যকে বর্ণবাদী আখ্যা দিয়ে ফৌজদারি কার্যক্রম শুরু করে। শাস্তি হিসেবে মরিনিওকে চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় এবং ৩৫ হাজার পাউন্ড জরিমানা করা হয়, যা পরে কমিয়ে দুই ম্যাচ এবং ১২ হাজার ২০০ পাউন্ড করা হয়।
৫. প্রতিপক্ষ কোচের সঙ্গে ঝামেলা (এপ্রিল ২০২৫)
তুর্কি কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে গালাতাসারাইয়ের কাছে ২–১ গোলে হেরে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষ কোচ ওকান বুরুকের নাক চেপে ধরেন মরিনিও। এ ঘটনাও তুর্কি ফুটবলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।