২৩ বছর পর শীর্ষ লিগ জয়, তা–ও আবার পেশাদার লিগে প্রথমবার! মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ইতিহাসে যেন নতুন সূর্যোদয়। সেই মাহেন্দ্রক্ষণেই ক্লাব টেন্ট রূপ নেয় এক উৎসবস্থলে।
সমর্থকেরা ছুটে আসেন অনেকে, আসেন পুরোনো খেলোয়াড়দের কেউ কেউ। মোহামেডানের সাবেক তারকা জসিমউদ্দিন জোসী ক্লাবে কর্মীদের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে বলেন, ‘দ্রুত মিষ্টি নিয়ে আসো!’
মিষ্টি আসতেও সময় লাগেনি। তারপরই শুরু হয় মিষ্টি খাওয়ার ধুম। হাস্যোজ্জ্বল মুখ, চোখে বিজয়ের দীপ্তি—সাদা–কালো ক্লাবটিতে যেন ফেরে বহু বছরের অপেক্ষার মুক্তি।
মোহামেডানের হয়ে চারটি লিগ ও ছয়টি ফেডারেশন কাপজয়ী জোসী বললেন, ‘প্রথমবার আমরা পেশাদার লিগ জিতলাম। শুধু মোহামেডানের জন্য নয়, এই সাফল্য বাংলাদেশের ফুটবলকেও জাগিয়ে তুলবে। মোহামেডান একসময় এমন দল ছিল, যারা চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়া কিছু ভাবত না। সেই ক্লাব এত বছর শিরোপা পায়নি। অবশেষে পেশাদার লিগে জয়—এটা যে কত বড় আনন্দ, তা বলে বোঝানো যাবে না।’
উৎসবে যোগ দেন প্রবীণ কর্মকর্তা ফজলুর রহমান বাবুলও। মোহামেডানের বহু দুঃসময়ের সঙ্গী তিনি। ধরে আসা কণ্ঠে বললেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবলে মোহামেডানের এই জয় এক যুগান্তকারী ঘটনা। কারণ, মোহামেডান হাসলে দেশের ফুটবলও হাসে।’
তখন ক্লাবেই ছিলেন মোহামেডানের ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে ক্লাবের হয়ে মাঠে নামা নকীব এরপর ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদেও। ২০০৮ সাল থেকে ফের জড়িয়ে আছেন মোহামেডানের সঙ্গে, ২০১৯ সাল থেকে প্রধান ম্যানেজার। মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর নকীব বললেন, ‘এই অর্জনের পেছনে খেলোয়াড়দের আন্তরিকতা আর নিবেদনেরই সবচেয়ে বড় অবদান। বিশেষ করে বিদেশিরা দারুণ খেলেছে। অথচ ক্লাবে আর্থিক সংকট আছে, আয়ের স্থায়ী ব্যবস্থা নেই। স্থায়ী মাঠও নেই। আজ এক মাঠে, কাল আরেক মাঠে অনুশীলন করতে হয়। সময়মতো খেলোয়াড়দের বেতন দেওয়া যায় না। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা একটি পরিবারের মতো একসঙ্গে ছিলাম—সেটাই আমাদের মূল শক্তি।’
একটু থেমে নকীব বলেন, ‘আমার একটা আক্ষেপ ছিল—পেশাদার লিগে কখনো চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। ভাবিনি এমনভাবে তিন ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন হব। হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমাদের একটু বেশিই দিয়ে দিয়েছেন।’
এই শিরোপা মোহামেডানকে ভবিষ্যতে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে খেলার সুযোগ এনে দিয়েছে। কিন্তু সে সুযোগ কাজে লাগাতে হলে পূরণ করতে হবে ক্লাব লাইসেন্সিংয়ের নানা শর্ত। নকীব জানান, এএফসি কাপ খেলতে গেলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ করতে হয়, যা সাদা–কালোরা এখনো পূরণ করতে পারেনি। তবে ক্লাব ম্যানেজমেন্ট যদি আন্তরিকভাবে উদ্যোগ নেয়, তাহলে শর্তগুলো পূরণ করে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা সম্ভব মনে করেন তিনি।
মোহামেডানে আজ শুধু মিষ্টির স্বাদ নয়, ইতিহাসের স্বাদও মিলেছে। বহুদিন পর সাদা–কালো পতাকার নিচে বইছে আনন্দের হাওয়া।