সম্প্রতি ৪০তম জন্মদিন পালন করেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
সম্প্রতি ৪০তম জন্মদিন পালন করেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো

চল্লিশ পেরিয়েও চালশে না হওয়া রোনালদোসহ আরও যাঁরা

‘আজকে যে বেপরোয়া বিচ্ছু/ শান্ত সুবোধ হবে কাল সে/ চোখের সঙ্গী হবে চশমা/ চল্লিশ পেরোলেই চালশে।’

নাহ, কবীর সুমনের এই গান সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। অন্তত ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, লেব্রন জেমস কিংবা ফার্নান্দো আলোনসোর জন্য তো নয়ই। চল্লিশের সীমানা ছাড়িয়ে সাফল্যের সুবাস এখনো ছড়িয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

ফুটবল কিংবদন্তি রোনালদো ও বাস্কেটবল মায়েস্ত্রো জেমস ৪০ ছুঁয়েছেন সম্প্রতি। কিংবদন্তি স্প্যানিশ ফর্মুলা ওয়ান রেসিং ড্রাইভার আলোনসোর বয়স এখন ৪৩। কিন্তু বয়স যেন তাঁদের জন্য শুধুই সংখ্যা। বয়সের প্রতিবন্ধকতাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

মার্কিন বাস্কেটবল তারকা জেমস চল্লিশ পেরিয়েছেন এই ডিসেম্বরে। কিন্তু এই বয়সেও লস অ্যাঞ্জেলেস লেকার্সের হয়ে নৈপুণ্য প্রদর্শন করে চলেছেন। গত বৃহস্পতিবারই গোল্ডেন স্টেট ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে ৪২ পয়েন্ট অর্জন করে এনবিএর রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন জেমস। এর ফলে সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে ৪০ পয়েন্টের বেশি নিয়ে শেষ করলেন। ৪৩ পেরোনো আলোনসো অংশ নিয়েছেন ফর্মুলা ওয়ান গ্র্যান্ড প্রিক্সে।

প্রশ্ন হচ্ছে, বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এমন পারফরম্যান্সের রহস্য কী? জেমসের পারফরম্যান্সের বিষয়ে জানতে চাইলে ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল স্পোর্টস ইনস্টিটিউটের (ইনসেপ) স্পোর্টস সায়েন্স রিচার্সার আদ্রিয়েন সেডেউড এএফপিকে বলেছেন, ‘লেব্রন জেমস অনন্যসাধারণ একজন। তিনি ক্রীড়াজগতের একজন নেতা। একজন আল্ট্রালিডার।’ তবে নিজের অমিত প্রতিভার সঙ্গে জেমসের কঠোর নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের কথাও বলতে হবে। সেডেউড যেমনটা বলছিলেন, ‘আপনি কখনো জয়ের পর জেমসকে পার্টি করতে দেখবেন না।’

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ৪০–এর ক্লাবে যোগ দিয়েছেন গত বুধবার। ৪০ পেরিয়েও এরই মধ্যে পেয়েছেন গোল। এমনকি ১০০০তম গোল থেকে ৭৫ গোল দূরে থাকলেও সেই লক্ষ্য ছোঁয়াও মোটেই অসম্ভব মনে হচ্ছে না। কিন্তু কীভাবে এমন একটা অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব? এই স্তরে পৌঁছানোর জন্য যা প্রয়োজন, সেটা হলো খাদ্যশৃঙ্খলা, অনুশীলন ও ঘুম।

আলোনসো, লেব্রন জেমস ও রোনালদো

রোনালদোর সঙ্গে জুভেন্টাসে কাজ করা গিওর্গিও বারোনে বলেছেন, পর্তুগিজ তারকার খাদ্যতালিকায় প্রাকৃতিক ও সামুদ্রিক খাবার, চর্বিহীন মাংস এবং নানা ধরনের গোটা শস্য থাকে। এ ছাড়া চর্বিযুক্ত খাবার, চিনি ও মদ রোনালদো পুরোপুরিভাবে এড়িয়ে চলেন। পাশাপাশি পানিও পান করেন প্রচুর। অন্য পানীয়র মধ্যে প্রাকৃতিক জুস, লেবুপানি ও পুদিনার শরবতও পান করতে দেখা যায় তাঁকে। সুষম ও নিয়ন্ত্রিত খাবারের পাশাপাশি ঘুম ও ব্যায়ামের প্রতিও রোনালদো বেশ যত্নশীল। সাধারণত তিনি তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে উঠেও যান দ্রুত।

একজন প্রথম সারির অ্যাথলেটের পারফরম্যান্স সাধারণত নিচে থেকে ওপরের দিকে গিয়ে চূড়া স্পর্শ করে এবং এরপর ধীরে ধীরে সেটি আবার নিচের দিকে নেমে আসে। এটি অবশ্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খেলোয়াড়টির বয়স ও নিয়মানুবর্তিতার ওপর নির্ভর করে। তবে ত্রিশের পরও যাঁরা নিজেদের পারফরম্যান্সে উচ্চমান বজায় রাখেন, তাঁদের হিসাবটা একটু ভিন্ন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২৫ বছর বয়সের আশপাশে থাকা খেলোয়াড়েরা পারফরম্যান্সের দিক থেকে সক্ষমতার চূড়া স্পর্শ করেন।

শুধু রোনালদো, জেমস বা আলোনসো নন, দৃষ্টান্ত হিসেবে আরও কিছু নাম উল্লেখ করা যায়। টেনিসে যেমন ৪০ বছর বয়সেও খেলেছেন কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামস, সুইস মহাতারকা রজার ফেদেরারও প্রায় ৪০ বছর বয়সে উইম্বলডনে খেলেছেন। প্যারিস অলিম্পিকে ফরাসি অ্যাথলেট মেলিনা রবার্ট-মিশন যখন অংশ নেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৪৫ বছর।

ভিন্ন অর্থে আবার সিমোনে বাইলসের কথা বলা যায়। প্যারিস অলিম্পিকে ২৭ বছর বয়সে সোনা জেতেন বাইলস। জিমন্যাস্টের ক্ষেত্রে সাধারণত ২০–এর নিচের অ্যাথলেটদের আধিপত্য বিস্তার করতে দেখা যায় এবং তাঁরা সাফল্য অর্জন করেন বেশি। কিন্তু ২৭ পেরিয়েও বাইলস যেন অম্লান। মূলত সহজাত প্রতিভা ও শৃঙ্খলার সমন্বয়েই পারফরম্যান্সের এই মান ধরে রাখা সম্ভব।

এনবিএতে সবচেয়ে বেশি পয়েন্টের রেকর্ড গড়ার পর লেব্রন জেমস

কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য এ জন্য ভাগ্যকেও পাশে পেতে হয়। অনেক সময় সবকিছু ঠিকঠাক করার পরও শরীরের নিজস্ব নিয়ম–নীতি দীর্ঘ ক্যারিয়ারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক সময়ে যেমন ৩৭ পেরোনো মেসিকে বারবার চোটে পড়তে দেখা যাচ্ছে। বিপরীতে ৪০ পেরিয়েও রোনালদো ফিটনেসে মেসিকে পেছনে ফেলেছেন। এর জন্য অবশ্য রোনালদোর শরীরের প্রতি বাড়তি যত্ন এবং কঠোর নিয়মানুবর্তিতাকেও কৃতিত্ব দিতে হবে।

এই তারকাদের বাইরেও অনেকে ৪০ পেরিয়ে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে শুধু খেলাটাই তো আসল নয়, ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করার বিষয়ও আছে। আর সে জায়গাটাতেই অন্যদের যোজন যোজন পেছেনে ফেলেছেন রোনালদো–জেমসরা।