
পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে চলে গেছেন ১৬ মাসের বেশি হয়ে গেছে। কিন্তু কিলিয়ান এমবাপ্পের সঙ্গে তাঁর সাবেক ক্লাবের আইনি লড়াই যেন শেষ হওয়ার লক্ষণই নেই। উল্টো দিনকে দিন সেটা আরও জটিল হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে ফরাসি ফরোয়ার্ড এখন তাঁর সাবেক ক্লাবের কাছে ২৬ কোটি ইউরো ক্ষতিপূরণ চেয়ে বসেছেন! যার জবাবে পিএসজি বলছে, ২৬ কোটি তো দূরের কথা, তারাই উল্টো এমবাপ্পের কাছে ৪৪ কোটি ইউরো পাবে! দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গ, বিশ্বাস ভঙ্গ এবং অন্যায় আচরণের অভিযোগ এনেছে।
বর্তমানে মামলাটি চলছে প্যারিসের শ্রম আদালতে। সর্বশেষ শুনানি ছিল গতকাল সোমবার। ইএসপিএনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, রিয়াল মাদ্রিদের এই স্ট্রাইকার সেই শুনানিতে উপস্থিত না থাকলেও তাঁর ক্ষতিপূরণের প্রাথমিক দাবি ৫ কোটি ৫০ লাখ ইউরো থেকে বাড়িয়ে এখন ২৬ কোটি ইউরো চেয়েছেন।
এমবাপ্পের আইনজীবীদের যুক্তি হলো, এমবাপ্পের সঙ্গে পিএসজির চুক্তিটিকে ‘ফিক্সড-টার্ম’ বা নির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তি হিসেবে না ধরে স্থায়ী চুক্তি হিসেবে গণ্য করতে হবে। আর এ কারণে এমবাপ্পেকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করার পুরো ক্ষতিপূরণ, বকেয়া বেতন, বোনাস ও বাধ্যতামূলক ক্ষতিপূরণের টাকা তিনি পাবেন। এমবাপ্পের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, ‘কিলিয়ান এমবাপ্পে আইনের বাইরে অতিরিক্ত কিছু চাইছেন না। তিনি যেকোনো কর্মচারীর মতো তাঁর আইনি অধিকার প্রয়োগ করতে চাইছেনমাত্র।’
এ ছাড়া পিএসজির বিরুদ্ধে এমবাপ্পের অভিযোগে নৈতিক হয়রানি, অলিখিত কাজ করানো এবং ক্লাব হিসেবে দায়িত্বপালনে ব্যর্থতার কথা বলা হয়েছে। ২০২৩ সালে যখন তিনি ক্লাবকে জানিয়ে দেন যে তিনি চুক্তির মেয়াদ বাড়াবেন না, তখন তাঁকে দল থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়। প্রাক্-মৌসুমের সফরে তাঁকে বাদ দেওয়া হয় এবং মূল দলের বাইরে থাকা খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনুশীলন করতে বাধ্য করা হয়েছিল। ফ্রান্সে শ্রমিকদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণকে ‘লফটিং’ বা বাতিল করে দেওয়া বলে গণ্য করা হয়।
অন্যদিকে এমবাপ্পের এই দাবির জবাবে পিএসজি পাল্টা দাবি জানিয়েছে, তারা ফরাসি ফরোয়ার্ডের কাছে ৪৪ কোটি ইউরো পাবে। তাদের বক্তব্য, এমবাপ্পের বিনা মূল্যে ক্লাব ছেড়ে যাওয়ায় তাদের ব্যাপক আর্থিক ও সুনামের ক্ষতি হয়েছে। পিএসজির আইনজীবীরা বলেন, এমবাপ্পে তাঁর চুক্তির শেষ বছর অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেছেন। এক বিবৃতিতে ক্লাবটি জানিয়েছে, ‘ক্লাব আদালতে এমন প্রমাণ দিয়েছে, যা থেকে বোঝা যায় যে খেলোয়াড় (এমবাপ্পে) প্রায় ১১ মাস (জুলাই ২০২২ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত) চুক্তি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গোপন রেখেছিলেন। এর ফলে ক্লাব তাঁকে ট্রান্সফার করার কোনো সুযোগই পায়নি। খেলোয়াড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’
পিএসজি বিবৃতিতে আরও বলেছে, ‘২০২৩ সালের আগস্টে ক্লাবের সঙ্গে হওয়া একটি চুক্তিকে খেলোয়াড় (এমবাপ্পে) অস্বীকার করেছেন। সেই চুক্তি অনুযায়ী, ক্লাবের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তিনি বিনা মূল্যে চলে গেলে তাঁর বেতন কমানোর কথা ছিল।’
ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা এমবাপ্পের তোলা মানসিক চাপ বা দুর্ব্যবহারের অভিযোগগুলোও পুরোপুরি অস্বীকার করেছে। পিএসজি জোর দিয়ে বলেছে, এমবাপ্পে সেই মৌসুমেও ৯৪ শতাংশের বেশি আনুষ্ঠানিক ম্যাচ খেলেছেন। তারা আরও জোর দিয়ে বলেছে যে সব ‘খেলাধুলা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছিলেন ক্লাবের কোচ, যিনি এখন চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী।
এই মামলা এখন কোন দিকে গড়ায়, সেটিই দেখার অপেক্ষা।