দক্ষিণ এশিয়ান (এসএ) গেমসে সোনা জেতার পর সেকি আনন্দ মারজান আক্তারের! লাল–সবুজের পতাকাটা জড়িয়ে চড়েছিলেন স্বপ্নডানায়। পাঁচ বছরের ব্যবধানে মারজানের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার!
একটা সময় কারাতে নিয়ে আশা–ভালোলাগার গল্প বলা মারজান এবার কারাতের সঙ্গে বন্ধনটাই করলেন ছিন্ন। গতকাল প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপচারিতায় কারাতে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি এভাবে জানিয়েছেন মারজান, ‘না, আমি এখন কারাতের সঙ্গে নেই। এটা (কারাতে) থেকে আমি পুরোপুরি দূরে আছি। খেলাটা আর চালিয়ে যেতে চাই না।’
২০১৯ সালে এসএ গেমসে একক কুমি ইভেন্টে সোনা জেতেন মারজান। একই আসরে দলগত কুমিতেও পান ব্রোঞ্জ। সর্বশেষ ২০২৩ সালের জাতীয় কারাতেতে জেতেন দুই সোনা। পাশাপাশি ভারত, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে হওয়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্টেও আলো ছড়িয়েছেন এই কারাতেকা।
কিন্তু হুট করে কেন কারাতে ছেড়ে দেওয়ার এমন সিদ্ধান্ত? উত্তরে মারজান বললেন তাঁর আর্থিক সংকটের কথা, ‘আমি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনা করেছি। আমি জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করেছি। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অফিস করণিক পদে চাকরি করি। সেনাবাহিনীতে আমার মাসিক বেতন কত জানেন…১৮ হাজার টাকা। এখন বলেন, এই বেতন নিয়ে আমি নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা কীভাবে চিন্তা করব।’
মারজান আরও বলেন, ‘আমি যদি শুধু পড়াশোনা নিয়েই থাকতাম, তাহলে জীবনে এমন আর্থিক সংকট হয়তো থাকত না। আমার আশপাশের অনেকে ভালো চাকরি করে, ভালো টাকা পায়। কারাতে থেকে আমি আসলে প্রত্যাশা অনুযায়ী আর্থিক সুবিধা পাইনি।’
ছোটবেলাতেই মার্শাল আর্টের প্রতি তাঁর ভালো লাগা তৈরি হয়। ভিকারুননিসায় পড়ার সময় স্কুলে কারাতে শেখার সুযোগ এসে যায়। সেই শুরু। এরপর ক্লাব পর্যায় হয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। কিন্তু পেছন ফিরে আজ সবই মিথ্যা মনে হয় তাঁর কাছে। যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটি নাকি শুধুই মরীচিকা।
মারজান বলছেন, ‘যাঁদের মাধ্যমে কারাতেতে এসেছি, তাঁরা তখন আমাকে অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা পূরণ হয়নি। আসলে স্বপ্ন দেখাটা যত সহজ, সেটিকে লালন–পালন করা তত সহজ নয়।’
প্রসঙ্গক্রমে দেশের আরও কয়েকজন অ্যাথলেটের কথাও বলেছেন মারজান। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় কদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়ে সেখানেই স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছেন দুই আর্চার দিয়া সিদ্দিকী ও রোমান সানা। আর্চারি খেলে অনেক উপার্জন করেও কেন বিদেশ গেলেন এই দম্পতি? প্রশ্নটা এই প্রতিবেদকের দিকেই ছুড়ে দিলেন মারজান।
শুধু তাঁরাই নয়, দেশের অ্যাথলেটরা শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে খেলা ছেড়ে দেওয়া কিংবা বিদেশে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টাটা মূলত আর্থিক কারণেই করেন, ‘দিয়া–রোমান এত টাকা আয় করার পরও কিন্তু বিদেশ চলে গেছেন। তাঁদের তো আর অভাব ছিল না! তারপরও বিদেশ চলে গেছেন। এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা ক্যারিয়ারটা লম্বা করতে পারেননি। এর বড় কারণ আর্থিক টানাপোড়েন।’
১৮ হাজার টাকা বেতন দিয়ে চলা কতটা কঠিন বোঝাতে গিয়ে মারজান বলেন, ‘আমি একটা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ খেলার জন্য পুষ্টিকর খাবার, প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতে যে পরিমাণ টাকা খরচ করি, সেটাই তো পাই না। সব বাদই দিলাম, একটা স্বাস্থ্যসম্মত ডায়েট চার্ট মেনে চলার মতো টাকাটাও আমার হাতে থাকে না।’
কারাতে ছেড়ে কী করতে চান, সেটা অবশ্য ভাবেননি মারজান। বলেছেন ভেবেচিন্তেই একটা সিদ্ধান্ত নেবেন, ‘আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। দেখি চিন্তাভাবনা করে, যেদিকে এগোনো যায়, সেদিকেই এগোব।’