চোটের পুনর্বাসনে থাকায় গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় জাতীয় অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে পারেননি। মোহাম্মদ ইসমাইলের কাছে হারাতে হয়েছে দেশের দ্রুততম মানবের খেতাব। অথচ ২০২২ সালে ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় প্রথমবার নাম লিখিয়েই খেতাবটা নিজের করে নিয়েছিলেন লন্ডনপ্রবাসী বাংলাদেশি অ্যাথলেট ইমরানুর রহমান।
এক মৌসুম পর আবারও জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে দৌড়াতে দেশে আসছেন ইমরানুর, এবার তিনি প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন নৌবাহিনীর হয়ে। গত এপ্রিলে ঢাকায় এসে সেনাবাহিনী থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সেরে গেছেন ইমরানুর। আগামী ২২-২৩ আগস্ট ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সামার অ্যাথলেটিকসে অংশ নিতে ইমরানুরের ঢাকায় আসার কথা ১৬ আগস্ট। লক্ষ্য—দ্রুততম মানবের খেতাব ফিরে পাওয়া।
তবে ট্র্যাকে ফেরার আগে ইমরানুরের মনে হতাশা। চোটের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন থেকে আর্থিক সহায়তা চেয়েও পাননি তিনি। মুঠোফোনে ইমরানুর বলেছেন, ‘চিকিৎসার জন্য একাধিকবার ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা বলেছিল দেখবে, কিন্তু কিছুই করেনি। তবে অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজা ভাইসহ কয়েকজন সিনিয়র পাশে ছিলেন। আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’ গত অক্টোবরে লন্ডনে অস্ত্রোপচার হয় ইমরানুরের। চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও থেরাপিতে খরচ হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম অবশ্য দাবি করেছেন, ‘ইমরানুর আমার কাছে কোনো সহায়তা চায়নি।’ তবে যুগ্ম সম্পাদক কিতাব আলী দিয়েছেন ভিন্ন তথ্য, ‘সে আমাদের কোনো চিঠি দেয়নি। তবে মৌখিকভাবে হয়তো বলে থাকতে পারে। আমাদের ফেডারেশন সভাপতি এক সভায় তার সংস্থাকে খরচ বহনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু পরে তো সে দল বদলে ফেলল।’
এমন নয় যে দল বদলালে ফেডারেশন থেকে সহায়তা পাওয়া যাবে না। অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের বর্তমান কমিটির অধীন এখনো কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ না নেওয়াটাই আসলে বাধা হয়েছে ইমরানুরের চিকিৎসায় সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে। কিতাব আলীর কথায়ই মিলেছে সে আভাস, ‘গত কমিটির সময় চোট পেয়েছিল ইমরানুর। আমাদের সময় সে এখনো খেলেনি। সামারে খেললে তাকে দেখে পরে আমরা ভাবতে পারি। সে আসুক, খেলুক। তারপর দেখব।’ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ না নেওয়ায় মার্চে চীনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইনডোর অ্যাথলেটিকসেও বিবেচিত হননি এই স্প্রিন্টার। ইমরানুর অবশ্য আগেই এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চান না বলে জানিয়েছিলেন।
সব হতাশা কাটিয়ে ইমরানুরও এখন তাকাতে চান সামনে, ‘ফেডারেশনের প্রতি সম্মান আছে। হতাশ ছিলাম, সত্যি। কিন্তু এখন সামনে তাকাতে চাই। দেশের হয়ে আরও ভালো করার স্বপ্ন দেখছি।’ সেই স্বপ্ন পূরণের জন্যই তিনি চান, কিছু আর্থিক সহায়তা যেন অন্তত করে ফেডারেশন। ২০২৩ সালে কাজাখস্তানে এশিয়ান ইনডোরে ৬০ মিটার স্প্রিন্টে সোনাজয়ী ইমরানুর বলছেন, ‘সব অ্যাথলেটের জন্যই আর্থিক সহায়তা থাকা দরকার। শুধু আমার জন্য নয়, যারা দেশের পতাকা তুলে ধরতে চায়, তাদের পাশে দাঁড়ানো সবার দায়িত্ব। ব্যক্তিগত হতাশা থাকলেও দেশের পতাকা তুলে ধরাই আমার মূল লক্ষ্য।’
বর্তমানে লন্ডনে চাকরির পাশাপাশি অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন সকালে অনুশীলন করেন। এরপর কাজ করে সন্ধ্যায় জিম করেন। মাঝে চীনের হাংঝু ও সাংহাইয়ে নতুন কোচের অধীন কিছুদিন প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। ইমরানুর মুঠোফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ভিভোর শুভেচ্ছাদূত হয়েছেন সম্প্রতি।