জহির রায়হান
জহির রায়হান

অ্যাথলেট জহিরের প্রশ্ন

‘সত্যি বলাই কি আমার অপরাধ’ 

ফেডারেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও জাতীয় দলের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে জহির রায়হানকে ছয় মাসের জন্য অ্যাথলেটিকসের সব ধরনের কার্যক্রমে নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন। কিন্তু দেশের অন্যতম সেরা অ্যাথলেট এই নিষেধাজ্ঞা মানতেই পারছেন না। 

জহিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিশ্ব ইনডোর চ্যাম্পিয়নশিপের পর সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ‘বিদায়ই আমাদের ভাগ্য, কারণ আমাদের জন্য অনুশীলনের পর্যাপ্ত কোনো ব্যবস্থা ছিল না। নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে অনুশীলন করেছি। এভাবে কি পদক জয়ের স্বপ্ন দেখা যায়?’

তাঁর এমন বক্তব্যে ফেডারেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন। এ ছাড়া ঈদের ছুটি শেষে ফেডারেশনের অনুমতি না নিয়ে বিকেএসপিতে অনুশীলন, ফেডারেশন জানতে চাইলেও সেখানে কার অধীনে অনুশীলন করছেন, তা না জানানো—এসবকেও শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে দেখছে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন। 

একা অনুশীলন করে কী শৃঙ্খলা ভাঙলাম! আমি তো কিছু গোপন করিনি। ক্যাম্প ছেড়ে কোথাও ঘুরে বেড়াইনি।
জহির রায়হান, অ্যাথলেট
শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়েছেন জহির

তবে জহির মনে করেন না, তিনি কোনো শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। কাল প্রথম আলোকে গত এশিয়ান ইনডোরে ৪০০ মিটারে রুপা জেতা এই অ্যাথলেট বলেন, ‘একা অনুশীলন করে কী শৃঙ্খলা ভাঙলাম! আমি তো কিছু গোপন করিনি। ক্যাম্প ছেড়ে কোথাও ঘুরে বেড়াইনি। আর ওয়ার্ল্ড ইনডোরের আগেও আমি একা অনেক দিন অনুশীলন করেছি। আমাকে অনেক কিছুর সঙ্গে লড়াই করে কষ্ট করে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। সেই কষ্ট সংগ্রামের কথা মিডিয়ায় বলেছি। যা বলেছি সত্যি বলেছি। সত্যি বলাই কি আমার অপরাধ।’ 

তবে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমের প্রশ্ন—বাকি অ্যাথলেটরা আর্মি স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতে পারলে জহিরের সমস্যা হবে কেন? তিনি বলেন, ‘এতগুলো ছেলেমেয়ে এক জায়গায় অনুশীলন করছে, আর সে এককভাবে জিম্মি করে বলবে যে সুযোগ-সুবিধা নেই; এটা তো হতে পারে না।’ 

জহিরের যুক্তি, তিনি সেরা প্রস্তুতি নিতেই বিকেএসপিতে একা অনুশীলন করেছেন, ‘আমি একজন স্প্রিন্টার। নিখুঁত ট্র্যাক হলে আমার প্রস্তুতিটা পরিপূর্ণ হবে। সাফ অ্যাথলেটিকস আমার লক্ষ্য ছিল না, লক্ষ্য ছিল সামনের এসএ গেমসে দেশকে ভালো কিছু উপহার দেওয়া। সে জন্য নিবিড় প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বিকেএসপিতে অনুশীলন করেছি। সেখানে সুযোগ-সুবিধাও ভালো।’ 

আমি দেশকে ভালোবাসি, অ্যাথলেটিকসকে বুকের মধ্যে লালন করি। লাল–সবুজের জার্সি পরে একটা পদক জিতলে আমার যেমন ভালো লাগে, গোটা বাংলাদেশের মানুষের তার চেয়ে বেশি ভালো লাগে। আমি আমার লড়াই চালিয়ে যাব। আর শাস্তির বিরুদ্ধে আপিলও করব।
জহির রায়হান, অ্যাথলেট

ইংল্যান্ডপ্রবাসী অ্যাথলেট ইমরানুর রহমানের সঙ্গে তুলনা টেনে জহির বলেন, ‘ইমরানুর ইংল্যান্ডে একা অনুশীলন করে না? এরপর সেখান থেকে এসে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। তার সঙ্গে আমার কোনো শত্রুতা নেই, এটা উদাহরণ দেওয়ার জন্য বলা। তাহলে আমার ক্ষেত্রে সেটা শৃঙ্খলা ভঙ্গ হবে কেন!’

এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরেও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন জহিরকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁর নিষেধাজ্ঞা শর্ত সাপেক্ষে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে শাহ আলমের কঠোর অবস্থানে মনে হচ্ছে এবার শাস্তি কমানোর সম্ভাবনা কম। 

শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে এর আগেও নিষিদ্ধ হয়েছেন জহির

জহির অবশ্য বলছেন, শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করবেন তিনি। শাস্তি না কমলেও চালিয়ে যাবেন পারফরম্যান্সে উন্নতি আনার লড়াই, ‘আমি দেশকে ভালোবাসি, অ্যাথলেটিকসকে বুকের মধ্যে লালন করি। লাল–সবুজের জার্সি পরে একটা পদক জিতলে আমার যেমন ভালো লাগে, গোটা বাংলাদেশের মানুষের তার চেয়ে বেশি ভালো লাগে। আমি আমার লড়াই চালিয়ে যাব। আর শাস্তির বিরুদ্ধে আপিলও করব।’

৪০০ মিটার দৌড়ে জাতীয় রেকর্ডধারী জহির কয়েক বছর ধরে এই ইভেন্টে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ২০২৪ সালে এশিয়ান ইনডোরে ৪০০ মিটারে রুপা জেতা ছাড়াও গত মাসে চীনে বিশ্ব ইনডোর অ্যাথলেটিকসে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। অংশ নিয়েছেন ২০২১ টোকিও অলিম্পিকে।