পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচেই বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ
পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচেই বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ

হকি প্লে অফ সিরিজ

পাকিস্তানের কাছে তিন ম্যাচেই বড় ব্যবধানে হার, অভিজ্ঞতাই সান্ত্বনা বাংলাদেশের

বিশ্বকাপ হকির বাছাইপর্বে জায়গা করে নেওয়ার স্বপ্ন দেখার সাহস ছিল না বাংলাদেশের। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজটি বাংলাদেশের কাছে ছিল মূলত অভিজ্ঞতা অর্জনের মঞ্চ। কিন্তু তিন ম্যাচ মিলিয়ে স্কোরলাইনে যে ব্যবধান তৈরি হলো, সে তুলনায় অভিজ্ঞতার হিসাব মেলানোর চেয়ে আত্ম সমালোচনাই বেশি করতে হচ্ছে। ৩ ম্যাচে ২৬ গোল খেয়েছে বাংলাদেশ, করেছে মাত্র ৫টি।

মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে আজ সিরিজের শেষ ম্যাচে প্রথম কোয়ার্টারে ৩-০ গোলে এগিয়ে যাওয়া পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত জিতেছে ১০-৩ ব্যবধানে। প্রথম ম্যাচে ৮-২ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৮-০ ব্যবধানে জিতেই আগামী বছর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলা নিশ্চিত করেছিল পাকিস্তান। আজকের ম্যাচ ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতার।

আজ ১৫টি পেনাল্টি কর্নার (পিসি) থেকে ৯টি গোল পেয়েছে সফরকারীরা। ২১ বছরের ডিফেন্ডার সুফিয়ান খানই করেন ৬টি গোল, সব কটিই পিসিতে। তাঁর ড্র্যাগ ফ্লিকের কোনো জবাব ছিল না বাংলাদেশের। আবদুর রহমান ২টি এবং নাদিম আহমেদ ১টি গোল করেন। একমাত্র ফিল্ড গোলটি রানা ওয়ালিদের।

বাংলাদেশের আবদুল্লাহ ও রাকিবুল ফিল্ড গোল করেন। পিসি থেকে একটি গোল আশরাফুলের। টুর্নামেন্ট ৮টি পেনাল্টি কর্নার নিয়ে এই একটি গোলই আশরাফুলের।

তিন ম্যাচে ২৬ বার গোল–উৎসব করেছে পাকিস্তান

সিরিজে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি স্বাগতিকেরা। শেষ ম্যাচে আরও বেশি দুর্বলতা ফুটে উঠেছে। অতীতে পুষ্কর খিসা মিমো বা হাসান যুবায়েররা যেভাবে বল-স্টিকের সংযোগ ঘটিয়ে গোল করতেন, তার ছিটেফোঁটাও ছিল না শেষ ম্যাচে। গোল মিস করেছেন রাকিবুল, আবদুল্লাহ, সবুজ, ওবায়দুল জয়। পোস্ট ফাঁকা পেয়েও গোল করতে পারেননি সোহানুর। এসব গোল নষ্ট আরও পেছনে ঠেলে দেয় বাংলাদেশকে।

এক নজরে প্লে অফ সিরিজ

ম্যাচ সেরা: মঈন শাকিলসর্বোচ্চ গোলদাতা: সুফিয়ান খান (৮ গোল)সেরা গোলরক্ষক: মুনিবুর রহমানসেরা খেলোয়াড়: রাকিবুল হাসান (বাংলাদেশ)সিরিজ সেরা: আম্মাদ ভাট
আপনি যদি ৫০টির বেশি ম্যাচ খেলতে না পারেন এক বছরে, তাহলে আপনি বিশ্বের সেরা দলের সঙ্গে লড়াই করতে পারবেন না।
আম্মাদ সালমান বাট, অধিনায়ক, পাকিস্তান হকি দল

বাংলাদেশকে এই সিরিজে কেমন দেখলেন? পাকিস্তানের অধিনায়ক আম্মাদ সালমান বাট বলেন, ‘বাংলাদেশের কয়েকজন বেশ ভালো খেলোয়াড় আছে। তাদের ভালো কোচ আছে। তবে তাদের আরও উন্নতি করতে হবে সব বিভাগেই। কোচের খেলার ধরন রপ্ত করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি ৫০টির বেশি ম্যাচ খেলতে না পারেন এক বছরে, তাহলে আপনি বিশ্বের সেরা দলের সঙ্গে লড়াই করতে পারবেন না।’

৫০টি দূরের কথা, বাংলাদেশ দল বেশির ভাগ বছরে কোনো ম্যাচই খেলেন না! ২০১৮ সালে এশিয়ান গেমসের পর তো তিন বছর খেলাই হয়নি। নেই ঘরোয়া হকি, জেলা স্তরে হকি। ফলে বাংলাদেশের হকির কোনো উন্নতি নেই। জাতীয় দল কতটা দুর্বল, তার প্রমাণ মিলল পাকিস্তানের সঙ্গে এই সিরিজে।

গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো খেলোয়াড়েরা ম্যাচ দেখে শিখেছে। প্রথম ম্যাচে যাঁরা ভয় পেয়েছিলেন, তাঁরা শেষ ম্যাচে অনেকটাই পরিণত।
সিগফ্রিড আইকমান, কোচ, বাংলাদেশ হকি দল

বাংলাদেশের ডাচ কোচ সিগফ্রিড আইকমান ম্যাচ শেষে ছিলেন হতাশ, ‘হার প্রত্যাশিতই ছিল। তবে গোলের ব্যবধানটা খুব বড় হয়ে গেছে। খেলার বেশ কিছু পর্যায়ে দল ম্যাচের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু অভিজ্ঞতার ঘাটতি, গতি ও পাল্টা আক্রমণে আমরা পিছিয়ে গেছি। পাকিস্তান অত্যন্ত দ্রুতগতির ও আক্রমণাত্মক খেলেছে। ঘরোয়া লিগে ভুল করলে ফিরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকে, কিন্তু এই স্তরে সেই সুযোগ নেই। এটাই বড় পার্থক্য।’

বাংলাদেশের অধিনায়কের সঙ্গে ডাচ কোচ সিগফ্রিড আইকমান

তিন ম্যাচের এই সিরিজে উন্নতি দেখছেন কোচ। তিনি বলেন, ‘দল সংগঠিত হকি খেলতে চেয়েছে এবং কিছুটা সফলও হয়েছে। সুযোগ তৈরি করেছে, কিন্তু সহজ গোলও মিস করেছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো খেলোয়াড়েরা ম্যাচ দেখে শিখেছে। প্রথম ম্যাচে যাঁরা ভয় পেয়েছিলেন, তাঁরা শেষ ম্যাচে অনেকটাই পরিণত।’

এই সিরিজে জুনিয়র বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়া দলের আটজন ছিলেন বাংলাদেশ দলে। বিশ্বকাপ অনূর্ধ্ব-২১ দলকে পুরোপুরি খেলালে ভালো হতো কি না প্রশ্নে কোচ বলেন, ‘পুরো অনূর্ধ্ব-২১ দলকে খেলালে অভিজ্ঞতা হতো ঠিকই, কিন্তু বড় ব্যবধানে হার তাদের মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারত। তবে তারা ম্যাচ দেখে শিখেছে।’

১৮ নভেম্বর ভারতের চেন্নাই রওনা দেবে জুনিয়র হকি দল। তবে এখনো ভারতের ভিসা পাননি বাংলাদেশের ডাচ কোচ। তাঁর ডাচ পাসপোর্টে পাকিস্তান সফরের ভিসা থাকায় সবকিছু যাচাই করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। কোচ জানিয়েছেন, বিষয়টি ‘প্রত্যাখ্যাত’ নয়, ‘আরও যাচাই–বাছাইয়ের পর্যায়ে’ আছে।