
ব্যাপার অনেকটা ফুটবলের মতোই। ফুটবলে যেমন সর্বকালের সেরা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই, তেমনি ফর্মুলা ওয়ানেও সর্বকালের সেরা চালকদের যে তালিকাই করা হোক না কেন, তবু বিতর্ক হবেই। কারণ, ফুটবলের মতো ফর্মুলা ওয়ানেও সবার নিজ নিজ পছন্দের খেলোয়াড় (চালক) আছেন। যত দিন ফর্মুলা ওয়ান থাকবে তত দিন কিংবা তারপরও হয়তো এই বিতর্ক চলবে।তাই বলে তালিকা তৈরি করা তো আর থেমে নেই। মটরস্পোর্টসের বৈশ্বিক প্রকাশনা ব্র্যান্ড ‘অটোস্পোর্ট’ গত জুনে এমন এক তালিকা প্রস্তুত করে। ১৯৫০ সালে ফর্মুলা ওয়ান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর বছর যাত্রা শুরু করা এই প্রকাশনা ব্র্যান্ড রেস জয়ের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তালিকাটি তৈরি করেছে।
প্রথম রেস: ১৯৭১ অস্ট্রিয়ান গ্রাঁ প্রি
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ: ৩ (১৯৭৫,১৯৭৭,১৯৮৪)
রেসের সংখ্যা: ১৭১
জয়: ২৫
পোল পজিশন: ২৪
ক্যারিয়ার পয়েন্ট: ৪২০.৫
অস্ট্রিয়ান রেসিং ড্রাইভার ও এভিয়েশন উদ্যোক্তাও ছিলেন নিকি লাউডা। ‘পে ড্রাইভার’ (নিজের অর্থ খরচ করে) হিসেবে ফর্মুলা ওয়ানে যোগ দিয়ে নিজ প্রতিভাবলে কিংবদন্তি হন তিনবারের এই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ১৯৭৪ সালে ফেরারিতে যোগ দেন লাউডা। সেবার মাত্র দুই জয়ে চ্যাম্পিয়নশিপে চতুর্থ হন। পরের বছর পাঁচ জয়ে প্রথম বিশ্ব
চ্যাম্পিয়নের খেতাব পান। তবে লাউডার ক্যারিয়ারে ১৯৭৬ মৌসুম সবচেয়ে বিখ্যাত। সেবার পশ্চিম জার্মানির নারবার্গিংয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে মাত্র ১ পয়েন্টের জন্য জেমস হান্টের কাছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব হারান। এই লড়াই নিয়ে বানানো কালজয়ী সিনেমা ‘রাশ’ মুক্তি পায় ২০১৩ সালে। পরের বছরই অবশ্য খেতাব পুনরুদ্ধার করেন লাউডা এবং দুই বছর পর অবসর নেন। ১৯৮২ সালে ম্যাকলারেনে ফিরে ১৯৮৪ সালে তৃতীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন নিকি।
অবসর নেওয়ার পর ফর্মুলা ওয়ানের দলগুলোয় ব্যবস্থাপনার জন্যও কিংবদন্তি লাউডা। ফেরারি ও জাগুয়ারে ব্যবস্থাপক পদে কাজ করেছেন। পরে মার্সিডিজে যোগ দিয়ে ২০১৩ সালে লুইস হ্যামিল্টনকে নিয়ে আসেন। ২০১৯ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত মার্সিডিজেই কাজ করেছেন নিকি।
প্রথম রেস: ১৯৬৫ দক্ষিণ আফ্রিকান গ্রাঁ প্রি
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ: ৩ (১৯৬৯,১৯৭১ ও ১৯৭৩)
রেসসংখ্যা: ৯৯
জয়: ২৭
পোল পজিশন: ১৭
ক্যারিয়ার পয়েন্ট: ৩৬০
স্কটল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ রেসিং ড্রাইভার। চালকদের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকা উচিত—এই বিষয়টি সামনে তুলে আনায় অগ্রণী ভূমিকা ছিল জ্যাকি স্টুয়ার্টের। এই খেলায় বন্ধু ও সতীর্থদের দুর্ঘটনায় প্রাণবিয়োগ দেখে তিনবারের এই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ‘ফুল ফেস’ হেলমেট, সিটবেল্ট, মেডিকেল ইউনিট, নিরাপত্তা ব্যূহ—এসব চালু করায় সামনের সারির একজন হিসেবে ভূমিকা রাখেন। ‘দ্য ফ্লাইং স্কট’ নামে পরিচিতি পাওয়া স্টুয়ার্ট কেন টাইরেলের সঙ্গে জুটি বেঁধে ষাট ও সত্তর দশকে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৬৫-১৯৭৩ পর্যন্ত রেসিং করে অবসর নেওয়ার সময় সবচেয়ে বেশি জয় ও সবচেয়ে বেশিবার পোডিয়াম ফিনিশের বা সেরা তিনে থাকার (৪৩) রেকর্ড স্টুয়ার্টের দখলে ছিল।
প্রথম রেস: ১৯৮০ অস্ট্রিয়ান গ্রাঁ প্রি
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ: ১ (১৯৯২)
রেসসংখ্যা: ১৮৭
জয়: ৩১
পোল পজিশন: ৩২
ক্যারিয়ার পয়েন্ট: ৪৮২
অটোস্পোর্টের ভাষায়, ফর্মুলা ওয়ানের আরেক ‘দুর্ভাগা’ ড্রাইভার। তাঁর ক্যারিয়ারে কখনো স্থিতি আসেনি। ১৯৮৮ সালে তো মাত্র দুবার রেস শেষ করতে পেরেছিলেন। চিকেন পক্সের কারণে দুটি রেসে অংশ নিতে পারেননি। অবসর নেন ১২ বার! ১৫ মৌসুমে ৩১ গ্রাঁ প্রি জয়ী ম্যানসেল ১৯৯২ সালে উইলিয়ামসের হয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন।
প্রথম রেস: ২০০১ অস্ট্রেলিয়ান গ্রাঁ প্রি
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ: ২ (২০০৫, ২০০৬)
রেসসংখ্যা: ৪০৮
জয়: ৩২
পোল পজিশন: ২২
ক্যারিয়ার পয়েন্ট: ২৩৩৯
স্প্যানিশ রেসিং ড্রাইভার ফার্নান্দো আলোনসো দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং ভয়হীন ও আক্রমণাত্মক ড্রাইভিংয়ের জন্য খ্যাত। তবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের চেয়েও তাঁর ক্যারিয়ার বেশি আলোচিত হারানো সুযোগগুলোর জন্য।
তিন বছর ফর্মুলা ওয়ানে কাটানোর পর জিতেছেন প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। পরের বছর মাইকেল শুমাখারকে ১৩ পয়েন্টে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জেতেন। তারপরই যেন আলোনসোর ভাগ্য বিরতি শুরু!
২০০৭ সালে আলোনসো যোগ দেন ম্যাকলারেনে, সতীর্থ হিসেবে পান তখন নতুন মুখ লুইস হ্যামিলটনকে। মৌসুম শেষে আলোনসো হন তৃতীয়, চ্যাম্পিয়ন কিমি রাইকোনেনের চেয়ে মাত্র এক পয়েন্ট কম এবং হ্যামিল্টনের সমান পয়েন্ট থাকলেও জয় কম থাকায় পিছিয়ে যান। ২০১০ সালে ফেরারিতে যোগ দিয়ে শিরোপা জয়ের দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন মৌসুমের শেষ রেস পর্যন্ত। কিন্তু ভিতালি পেত্রোভের পেছনে আটকে পড়া আর সেবাস্টিয়ান ফেট্টেলের জয়ের কারণে দ্বিতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ২০১২ সালে মাত্র তিন পয়েন্টে (আবারও ফেট্টেলের কাছে) শিরোপা হারান, আর ২০১৩ সালে হন দ্বিতীয়।
২০১৫ সালে ফেরেন ম্যাকলারেনে। এরপরই ম্যাকলারেন-হোন্ডার ব্যর্থ যাত্রা শুরু হয়। চারটি কঠিন বছর শেষে ২০১৮ মৌসুমের পর তিনি বিদায় নেন সেখান থেকে। আশ্চর্যের বিষয়, পরের বছর থেকেই ম্যাকলারেন সাফল্য পেতে শুরু করে।
২০২১ সালেও ভাগ্য সহায় হয়নি আলোনসোর। মিডফিল্ড দল আলপাইনের হয়ে হাঙ্গেরিয়ান গ্রাঁ প্রিতে চতুর্থ হন (গত সাত বছরে তাঁর সেরা ফল) অথচ তার সতীর্থ এস্টেবান ওকন রেস জিতে নেন। তবে অবশেষে কাতারে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ৯৮তম পোডিয়ামটি পান। ২০২৩ মৌসুমের অ্যাস্টন মার্টিনে যোগ দিয়ে সৌদি আরব গ্রাঁ প্রিতে দেখা পান ক্যারিয়ারে মর্যাদাপূর্ণ ১০০তম পোডিয়াম।
প্রথম রেস: ১৯৮৪ ব্রাজিলিয়ান গ্রাঁ প্রি
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ: ৩ (১৯৮৮, ১৯৯০, ১৯৯১)
রেসসংখ্যা: ১৬১
জয়: ৪১
পোল পজিশন: ৬৫
ক্যারিয়ার পয়েন্ট: ৬১০
মটরস্পোর্টসের ইতিহাসে কিংবদন্তি আয়র্তন সেনাকে কেউ কেউ বলেন খাঁটি প্রতিভা ও ক্যারিশমার মানদণ্ড।
ল্যাপে মনোযোগ দেওয়া এবং বারবার নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অবিরাম প্রচেষ্টায় ভক্তদের হৃদয়ে জায়গা করে নেন এই ব্রাজিলিয়ান। সান মারিনো গ্রাঁ প্রিতে ১৯৯৪ সালে দুর্ঘটনায় প্রাণ না হারালে তাঁর নামের পাশে শুধু তিনটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থাকত না। স্বভাবজাত গতি আর অদম্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা সেনাকে এমন তীক্ষ্ণতা দিয়েছিল, যা ফর্মুলা ওয়ানে খুব কমই দেখা যায়। মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পরেও সেনার গাড়ি এবং তাঁর শিরোপা জয়ের গল্প এখনো আলোচনায়।
প্রথম রেস: ১৯৮০ আর্জেন্টিনিয়ান গ্রাঁ প্রি
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ: ৪ (১৯৮৫, ১৯৮৬, ১৯৮৯, ১৯৯৩)
রেসসংখ্যা: ১৯৯
জয়: ৫১
পোল পজিশন: ৩৩
ক্যারিয়ার পয়েন্ট: ৭৮৬.৫
অ্যালাইন প্রস্তের সূক্ষ্ম ও নিখুঁত ড্রাইভিং শৈলী তাঁকে আয়র্তন সেনার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল। শুধু সাফল্য নয়, সেনার সঙ্গে তিক্ততার জন্যও তিনি স্মরণীয়। শুধু গতি তোলা নয়, মস্তিষ্কের ব্যবহারে ড্রাইভিং করতেন প্রস্ত। এই ধারাবাহিকতাতেই ১৯৮৫ সালে প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন।
১৯৮৭ সালে জ্যাকি স্টুয়ার্টের ২৭টি রেস জয়ের রেকর্ড ভাঙেন ‘দ্য প্রফেসর’ নামে পরিচিতি পাওয়া প্রস্ত। অবসর নেওয়া পর্যন্ত প্রস্ত ছিলেন তার সেরা ফর্মে ৩৮ বছর বয়সে উইলিয়ামসের হয়ে নিজের চতুর্থ ও শেষ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। অবসর নেওয়ার সময় সবচেয়ে বেশি জয় (৫১), দ্রুততম ল্যাপ (৪১) ও পোডিয়াম ফিনিশের (১০৬) রেকর্ড তাঁর দখলে ছিল।
প্রথম রেস: ২০০৭ ইউএসএ গ্রাঁ প্রি
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ: ৪ (২০১০, ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩)
রেসসংখ্যা: ৩০০
জয়: ৫৩
পোল পজিশন: ৫৭
ক্যারিয়ার পয়েন্ট: ৩০৯৮
ক্যারিয়ারের শেষ দিকে কিছুটা ম্লান হলেও সেবাস্টিয়ান ফেট্টেল গ্রিডে একসময় ছিলেন অদম্য এক জার্মান।
ক্যারিয়ারের প্রথম তিন বছরে তিনি নয়বার পোডিয়ামে ওঠেন এবং পাঁচটি রেস জেতেন। সেটা ছিল কেবল শুরু। পরবর্তী চার বছরে ফর্মুলা ওয়ানের মুখ হয়ে ওঠেন ফেট্টেল—টানা চারবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং সর্বকনিষ্ঠ চ্যাম্পিয়নের খেতাব জেতেন (রেকর্ডটি তার আগে ছিল লুইস হ্যামিল্টনের)। সেই সঙ্গে এক মৌসুমে সর্বাধিক পোডিয়াম ফিনিশ, সর্বাধিক জয়, সর্বাধিক পোল পজিশন, সর্বাধিক ল্যাপ লিড, টানা সবচেয়ে বেশি জয়, টানা সবচেয়ে বেশি ‘গ্র্যান্ড স্লাম’ এবং এক মৌসুমে পোল থেকে সর্বাধিক জয়—এমন অসংখ্য রেকর্ড তাঁর দখলে আসে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০১৪ সালে নিয়ম পরিবর্তন ফেট্টেল কিংবা তাঁর দল রেড বুল (বা তার নিজস্ব স্টাইল) কারও জন্যই সহায়ক হয়নি। ২০১৩ মৌসুমের শেষ নয়টি রেসে টানা জয় পাওয়া ফেট্টেল এরপর ২০১৫ পর্যন্ত কোনো রেস জিততে পারেননি। সেই মৌসুম থেকে অবসর নেওয়া পর্যন্ত তিনি মাত্র ১৪টি জয় পান। তবুও ২০২২ মৌসুম শেষে অবসর নেওয়ার আগে কিংবা পরেও ফেট্টেলকে গ্রিডের অন্যতম সেরা চালক হিসেবেই গণ্য করা হয়।
প্রথম রেস: ২০১৫ অস্ট্রেলিয়ান গ্রাঁ প্রি
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ: ৪ (২০২১, ২০২২, ২০২৩, ২০২৪)
রেসসংখ্যা: ২১৮
জয়: ৬৫
পোল পজিশন: ৪৩
ক্যারিয়ার পয়েন্ট: ৩১৬০.৫
সাবেক ফর্মুলা ওয়ান ড্রাইভার ইয়স ভেরস্টাপ্পেনের ছেলে ম্যাক্স ভেরস্টাপ্পেন। বেলজিয়ামে জন্ম নেওয়া ডাচ এই কিংবদন্তি মাত্র এক বছর রেসিং করার পরই ফর্মুলা ওয়ানে আত্মপ্রকাশ করেন। ফ্লোরিডা উইন্টার সিরিজে সিঙ্গেল-সিটার রেসিংয়ে হাত পাকালেও তাঁর জুনিয়র ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল ২০১৪ সালের ইউরোপিয়ান ফর্মুলা৩ মৌসুম। সেখানে তিনি চ্যাম্পিয়নশিপে তৃতীয় হন।
মাত্র একটি মৌসুমে ৩২ রেস থেকে ১০টি জয় পাওয়ায় ২০১৫ সালে রেড বুলের সহযোগী দল টোরো রোসোতে জায়গা পেয়ে যান ভেরস্টাপ্পেন এর মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী গ্রাঁ প্রি ড্রাইভার। অভিষেক মৌসুমে মাঝারি মানের গাড়ি নিয়েও ১৯ রেসের মধ্যে ১০টিতে পয়েন্ট সংগ্রহ করেন। তবে ভেরস্টাপ্পেন কী জিনিস, সেটা বোঝা যায় পরের মৌসুম থেকে।
২০১৬ সালের মাত্র পাঁচটি রেস শেষে রেড বুলের মূল দলে ডাক পান ভেরস্টাপ্পেন। এরপর স্প্যানিশ গ্রাঁ প্রিতে প্রথম রেসেই জয় ছিনিয়ে নেন। ২০২০ মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই ভেরস্টাপ্পেন আরও নয়টি গ্রাঁ প্রি জয় যোগ করেন। এরপর ২০২১ সালের নতুন প্রযুক্তিগত নিয়মাবলির অধীনে রেড বুল এমন এক গাড়ি বানায়, যা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য লড়াইয়ে সক্ষম ছিল। আগের মৌসুমে প্রভাবশালী মার্সিডিজকে পেছনে ফেলে ভেরস্টাপ্পেন ও হ্যামিল্টন মৌসুমজুড়ে তীব্র লড়াইয়ে জড়ান। শেষ রেসে শেষ ল্যাপে নির্ধারিত হয় ভাগ্য এবং সাতবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হ্যামিল্টনকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জেতেন ভেরস্টাপ্পেন।
তারপর টানা আরও তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন ভেরস্টাপ্পেন। সামনে আরও কতগুলো জিতবেন তা সময়ই বলে দেবে।
প্রথম রেস: বেলজিয়ান গ্রাঁ প্রি
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ: ৭ (১৯৯৪, ১৯৯৫, ২০০০, ২০০১, ২০০২, ২০০৩, ২০০৪)
রেসসংখ্যা: ৩০৮
জয়: ৯১
পোল পজিশন: ৬৮
ক্যারিয়ার পয়েন্ট: ১৫৬৬
ফর্মুলা ওয়ানে সেরা ড্রাইভারদের আলোচনায় অবিচ্ছেদ্য এক নাম। লুইস হ্যামিল্টনের উত্থানের আগে ফর্মুলা ওয়ানে জার্মান শুমাখারই ছিলেন শেষ কথা। সাতটি বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ (টানা পাঁচবার), অসংখ্য জয়ের রেকর্ড, পরিশ্রম, ফর্মুলা ওয়ানের প্রতি আবেগ এবং প্রতিভার সমন্বয়ে তিনি এই প্রতিযোগিতাকে নতুন উচ্চতায় তুলেছিলেন।
শুমাখার দুটি শিরোপা বেনেটনের হয়ে জিতলেও সর্বাধিক পরিচিতি পান ফেরারির সঙ্গে। ১৯৯৬ সালে ফেরারিতে যোগদানের পর কিছু উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যান। এরপর ২০০০ সালে সাফল্যের সোনালি অধ্যায় শুরু হয় শুমাখারের। পরবর্তী পাঁচ বছরে পাঁচটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পথে ৪৮টি রেসে জেতেন এবং প্রায় প্রতিটি রেকর্ডেই যোগ হয় তাঁর নাম।
দ্বিতীয়বার ফর্মুলা ওয়ানে ফিরে আগেরবারের মতো অতটা সাফল্য পাননি। মোট পোডিয়ামে মাত্র একটি জয় যোগ হয়। তবুও ৯১টি রেস জয়, ১৫৫টি পোডিয়াম এবং ৬৮টি পোল পজিশনের মাধ্যমে শুমাখার সব সময়ের কিংবদন্তি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পর থেকেই আড়ালে চলে যান শুমাখার।
প্রথম রেস: ২০০৭ অস্ট্রেলিয়ান গ্রাঁ প্রি
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ: ৭ (২০০৮, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০)
রেসসংখ্যা: ৩৬৫
জয়: ১০৫
পোল পজিশন: ১০৪
ক্যারিয়ার পয়েন্ট: ৪৯৩৩.৫
ক্যারিয়ার জয়ের সংখ্যা এবং মোট ক্যারিয়ার পয়েন্টের দিক থেকে লুইস হ্যামিলটনকে বলা যায় ফর্মুলা ওয়ানের ইতিহাসের সেরা ড্রাইভার। ব্রিটিশ এই তারকা ৩০টি ভিন্ন দেশে রেস জিতেছেন, প্রায় প্রতিটি মৌসুমে অন্তত একটি রেসে জয় পেয়েছেন এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ে যৌথভাবে শুমাখারের সঙ্গে শীর্ষে। ২০২১ সালে মাত্র এক পয়েন্টের ব্যবধানে ম্যাক্স ভেরস্টাপ্পেনের কাছে না হারলে অষ্টম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নিতেন।
প্রথম মৌসুমে মাত্র এক পয়েন্টের কারণে চ্যাম্পিয়ন হতে ব্যর্থ হলেও পরের বছরই সে সময়ের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হন। চৌদ্দ বছর পর আরও ছয়টি শিরোপা জিতেছেন এবং এখন অষ্টম শিরোপার সন্ধান করছেন হ্যামিল্টন।