সৈয়দ আশরাফুল হক।
সৈয়দ আশরাফুল হক।

বিসিবির সভাপতি হতে চান সৈয়দ আশরাফুল হক

ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে আজাদ বয়েজের ক্রিকেটার হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল হক। ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর বড় কীর্তি আজাদ বয়েজের হয়ে করা ডাবল সেঞ্চুরি। ১৯৮১-৮২ মৌসুমে খেলা তাঁর ২১৪ রানের ইনিংসটিই বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি।

সৈয়দ আশরাফুল হকের ক্যারিয়ার অবশ্য বেশি বর্ণাঢ্য ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, এরপর এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলে (এসিসি) কাজ করেছেন সংগঠনটির শুরুর দিন থেকে। ১৯৮৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এসিসি প্রতিষ্ঠার দিন তিনি তাতে যোগ দেন যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে হয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সচিব এবং সব শেষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

একটানা সাড়ে ১২ বছর এসিসির প্রধান নির্বাহী থাকার পর ২০১৫ সালের এপ্রিলে দায়িত্ব ছাড়েন সৈয়দ আশরাফুল হক, যেদিন সংগঠনটি সব কর্মকর্তাকে ছেঁটে মাত্র ‘দুজনের অফিসে’ পরিণত হয়, সেই দিন।

এর পর থেকে ক্রিকেটে তাঁর ভূমিকা শুধুই একজন দর্শকের। তবে সামনে হয়তো আর তা থাকবে না। অভিজ্ঞ এই সংগঠক আবারও ফিরতে চান বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রশাসনে, হতে চান বিসিবির সভাপতি। গতকাল মুঠোফোনে তারেক মাহমুদকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সৈয়দ আশরাফুল হক সে ইচ্ছা প্রকাশের পাশাপাশি বলেছেন বিসিবি সভাপতি হলে কিছু কাজে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাও—

প্রশ্ন

অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনে আপনি প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। সম্ভাবনা কতটুকু?

সৈয়দ আশরাফুল হক: চিন্তাভাবনা করছিলাম নির্বাচনে অংশ নেব কি নেব না। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করার বিষয়টিই ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছি। কারণ, আমি চাই, বাংলাদেশের ক্রিকেটে কিছু সংস্কার হোক, পরিবর্তন হোক। আমি মনে করি, সবকিছুই যখন সংস্কার হচ্ছে, ক্রিকেট বোর্ডেও কিছু সংস্কারের প্রয়োজন আছে।

প্রশ্ন

নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো প্রস্তুতি বা কার্যক্রম কি শুরু করেছেন? নির্বাচন করতে হলে বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আপনাকে প্রথমে কোনো একটি শ্রেণিতে বিসিবির কাউন্সিলর হতে হবে। কোথা থেকে কাউন্সিলর হবেন তা কি ঠিক হয়েছে?

আশরাফুল হক: আমি চেষ্টা করছি, যদি কোনো ক্লাব আমাকে কাউন্সিলর করে। আমি অনেক বছর যাবৎ বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। এসিসিতে কাজ করেছি দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি। এখন জীবনের গোধূলি বেলায় পৌঁছে গেছি। আমি চাই দেশের ক্রিকেটকে কিছু ফিরিয়ে দিতে। দীর্ঘ সময় ক্রিকেটে কাজ করে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেটা হয়তো অনেকেরই নেই। সে অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশকে কিছু দিতে চাই।

প্রশ্ন

ধরুন, কাউন্সিলর হয়ে বোর্ড পরিচালক নির্বাচিত হলেন; এরপর তো নিশ্চয়ই বোর্ড সভাপতি হওয়াই আপনার লক্ষ্য থাকবে, নাকি?

আশরাফুল হক: আমি তো মনে করি একজন পরিচালকও বিসিবিতে অনেক অবদান রাখতে পারেন, যদি তাঁকে অবদান রাখতে দেওয়া হয়। যদি সভাপতির কাছেই সব ক্ষমতা থাকে, তাহলে অন্যরা অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাবে। হ্যাঁ, আমি যদি পরিচালক নির্বাচিত হই, আমি অবশ্যই প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্যও নির্বাচন করব। কারণ, এখন আমার যে বয়স, যে অভিজ্ঞতা, সেটা আর কিছুর সঙ্গে যাবে না।

প্রশ্ন

এসিসির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব ছেড়েছেন ২০১৫ সালে। এরপর গত ১০ বছর আপনি সাংগঠনিকভাবে ক্রিকেটের কোথাও ছিলেন না। এখন আবার ফিরতে চাইছেন নিশ্চয়ই ভালো কিছুর জন্যই। লক্ষ্যটা কী বিস্তারিত বলবেন?

আশরাফুল হক: দেখুন, আমাদের দেশে ২৫ বছর ধরে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, একসময় আমরাও দিয়েছি এই প্রস্তাব। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখনো সেটা হয়নি। ক্রিকেট এভাবে এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হয়ে থাকতে পারে না। দুনিয়ার সব জায়গায় এর বিকেন্দ্রীকরণ হচ্ছে, আমাদের দেশ ছাড়া। এটা যদি আমরা পরিবর্তন করতে না পারি, ক্রিকেটের উন্নতি হবে না। এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হয়ে থাকার কারণে পাইপলাইনে আগেও ক্রিকেটার ছিল না, এখনো নেই। আমরা নগরকেন্দ্রিক ক্রিকেট নিয়ে আছি। সেটাও ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীর মতো অল্প কিছু জায়গায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্রিকেট এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেই। এভাবে ক্রিকেট এগোবে না। ১৮ কোটির বেশি মানুষ আমাদের দেশে। তার মধ্য থেকে আমরা যদি বিশ্বমানের ১১ জন ক্রিকেটার বের করতে না পারি, তাহলে আর কী হলো! আমাদের কৃতিত্ব কোথায়? সে জন্য আমাদের গ্রামাঞ্চলে যেতে হবে, তৃণমূলে যেতে হবে। তৃণমূল পর্যায়েও স্বাধীন আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা থাকবে, যারা নিজেরা কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করবে। কেন্দ্রীয় সংস্থা বা বোর্ডের সার্বিক একটা দায়িত্ব তো থাকবেই। তবে স্থানীয় পর্যায়ে ক্রিকেট চালানোর ক্ষমতা পুরোপুরি ওদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে।

হ্যাঁ, বাংলাদেশের ক্রিকেটে ক্লাবেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আমরা যখন ক্রিকেট খেলতাম, তখন তো বিরাট ভূমিকাই ছিল। আমাদের খেলোয়াড় বানিয়েছিলই ক্লাবগুলো। তাদের ভূমিকা ছিল, থাকবে; সেটা অস্বীকার করা যাবে না। আবার প্রত্যন্ত অঞ্চলে না গেলেও হবে না। ক্লাবগুলোর জন্যও এটা প্রয়োজন। ক্লাবে ক্রিকেটার আসে কোথা থেকে? সাতক্ষীরা, নওগাঁ, নইলে এ রকম অন্য কোনো জায়গা থেকেই তো। এসব জায়গায় খেলা না হলে মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া বা অন্য যেকোনো ক্লাব বলেন, তারা খেলোয়াড় পাবে কোথা থেকে? শুধু কেরানীগঞ্জ আর ধানমন্ডির খেলোয়াড় দিয়ে তাদেরও হবে না।

প্রশ্ন

অনেক বছর বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে না থাকলেও আপনি একজন সাবেক ক্রিকেটার এবং বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদকও। দেশের ক্রিকেট থেকে নিশ্চয়ই চোখ ফিরিয়ে রাখেননি। দূর থেকে গত ১২-১৩ বছরে কেমন দেখেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে?

আশরাফুল হক: বিসিবির গঠনতন্ত্রই আসলে কিছু জিনিস সেট করে দিয়েছিল। সব ক্ষমতা যদি প্রেসিডেন্টের কাছে থাকে, কী করবেন? প্রেসিডেন্টর সবকিছু জানার দরকার নেই। কথার কথা বলছি, দল কী হবে, খেলোয়াড়েরা কী কাপড় পরবে—এভাবে প্রতিটি পদক্ষেপে প্রেসিডেন্ট সম্পৃক্ত থাকলে তো হয় না! শুনেছি, একবার নাকি এখানকার এক প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘আমার নাতি খুব ভালো ক্রিকেট বোঝে। সে বলেছে এই প্লেয়ার-ওই প্লেয়ার চলে না।’ এটা তো হাস্যকর ব্যাপার!

প্রশ্ন

বিসিবির সভাপতি পদ নিয়ে গত ৯ মাসে অনেক নাটক হলো। প্রথমে ফারুক আহমেদকে সভাপতি করা হলো। ৯ মাস পর নির্বাচনের মাত্র ৩ মাস বাকি থাকতে তাঁকে হঠাৎ সরিয়ে সভাপতি করা হলো আমিনুল ইসলামকে। যে প্রক্রিয়ায় এসব হলো, এটাকে কি ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ বলবেন?

আশরাফুল হক: এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাইছি না। কারণ, আমি এখানকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অংশ হতে চাই না। তবে আমি যদি কখনো বোর্ডে আসতে পারি, আমি চেষ্টা করব সব পদ্ধতি যেন সঠিকভাবে মানা হয়।

সৈয়দ আশরাফুল হক।
প্রশ্ন

অনেকের তো ধারণা, আমিনুল ইসলামের সভাপতি হওয়ার পেছনে আপনার ভূমিকা থাকতে পারে?

আশরাফুল হক: একদমই না। বুলবুল (আমিনুল ইসলাম) আমার একজন প্রিয় ক্রিকেটার। আমি যখন এসিসিতে ছিলাম, সে আমার সহকর্মী ছিল। তার মধ্যে কী আছে, সে কতটা কাজ করতে পারে আমি জানি। হি ইজ আ ফ্যান্টাস্টিক ওয়ার্কার। আমার বিশ্বাস যে দায়িত্ব নিয়েছে, বুলবুল তার যোগ্য। একই সঙ্গে আমি এ–ও মনে করি, ফারুকেরও এই দায়িত্ব পালনের যথেষ্ট যোগ্যতা ছিল। তবে ফারুককে আমি বেশি চিনি ক্রিকেটার হিসেবে। অন্য কাজে আমি তাকে খুব কাছ থেকে দেখিনি।

প্রশ্ন

ফারুক আহমেদ এবং আমিনুল ইসলামও সভাপতি হওয়ার আগে শোনা গিয়েছিল, আপনি ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হচ্ছেন। কিন্তু আপনি হননি। আদৌ কি কেউ আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আপনাকে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব দিতে বা আপনি নিজে কি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন?

আশরাফুল হক: যেহেতু পর্বটা চলে গেছে, এটা নিয়ে এখন কিছু বলতে চাইছি না।

প্রশ্ন

বাংলাদেশের ক্রিকেটে খেলার চেয়ে সব সময়ই অন্য আলোচনা বেশি থাকে, যার বেশির ভাগই বিতর্কিত ব্যাপার-স্যাপার। এসব নাটকের দূরের দর্শক হিসেবে বলুন, এটা কেন?

আশরাফুল হক: কারণ, মাঠের বাইরে আমরা অনেক বেশি মনোযোগ আকর্ষণের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছি। আমি প্রকাশ্যে বলে দিলাম, ও একজন খারাপ খেলোয়াড়; তাহলে তো সবাই বলবেই—ওরে বাবারে, কত বড় একটা নিউজ হয়ে গেল! আমরা এমনিতেও সেনসেশন পছন্দ করি। আমি যখন বিসিবির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, কোনো সভাপতিই সব সংবাদ সম্মেলনে গিয়ে কথা বলতেন না। তাঁরা আমাকে পাঠাতেন। একই বিষয় দেখেছি এসিসিতে। যতগুলো চেয়ারম্যানের অধীনে কাজ করেছি, খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া তাঁরা কখনো প্রেসের সামনে আসেননি। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য ক্রিকেট বোর্ডে সভাপতিরা এত কথা বলেন না। বাংলাদেশে তো প্রতিটি দিনই বিসিবি সভাপতি কথা বলেন! এখানে মন্ত্রী, এমনকি কখনো কখনো প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্রিকেট বোর্ড সভাপতির কাভারেজ বেশি দেখা যায়।

আমরা ভেবেছিলাম, আমরা টেস্ট মর্যাদা পেয়ে গেছি। আইসিসি থেকে ২২-২৪ মিলিয়ন ডলার পাচ্ছি। আমরা এখন রাজা! আমাদের আর কী চিন্তা! খেলাটাকে যে উন্নত করব, সেই চিন্তা ছিল না।
সেয়দ আশরাফুল হক
প্রশ্ন

নিজে ক্রিকেট খেলেছেন, খেলা শেষে সংগঠক হিসেবে বিসিবিতে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছেন। এরপর ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে চলে গেলেন বাইরে। এতটা সময় পর কি মনে হয়, আপনাদের সেই সময়ে দেখা স্বপ্ন বাংলাদেশের ক্রিকেট কতটা পূরণ করতে পেরেছে?

আশরাফুল হক: ১৯৯৬-৯৭ সালে আমরা যখন টেস্ট মর্যাদার জন্য আবেদন করি, আমি তখনো ভাবিনি, আমি বাংলাদেশকে টেস্ট খেলতে দেখে যাব। তবে মাঠ ও মাঠের বাইরে কঠোর পরিশ্রম করে আমরা তিন বছরের মধ্য টেস্ট মর্যাদা পেয়ে গিয়েছিলাম। এটা অসাধারণ এক অর্জন ছিল। আমাদের টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় কাজ করেছিল। আমরা একটা দল হয়ে কাজ করেছিলাম। পুরো ক্রিকেট বোর্ড একই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছিল। বিশ্ব ক্রিকেটে প্রভাব ফেলতে আমাদের কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও ছিল। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটকে আমরা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বানিয়েছিলাম। আসলে নিজেদের ছোট ভাবলে যেমন চলবে না, একই সঙ্গে এটাও মানতে হবে যে অন্য দেশগুলো আমাদের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলে—ক্রিকেটে উন্নতি করতে হলে তাদের কাছ থেকে আমাদের পরামর্শ নিতে হবে। আমরা ভেবেছিলাম, আমরা টেস্ট মর্যাদা পেয়ে গেছি। আইসিসি থেকে ২২-২৪ মিলিয়ন ডলার পাচ্ছি। আমরা এখন রাজা! আমাদের আর কী চিন্তা! খেলাটাকে যে উন্নত করব, সেই চিন্তা ছিল না। আমরা একটা ক্রিকেট স্টেডিয়াম বানানোর জন্য ১ হাজার কোটি টাকা অনুমোদন করেছি। অথচ এই ১ হাজার কোটি টাকা দিয়ে আমরা অন্তত ১০০টি ক্রিকেট মাঠ বানাতে পারতাম। ১০০টা ক্রিকেট মাঠ বেশি দরকার না একজন মানুষের নামে ১ হাজার কোটি টাকা দিয়ে একটা স্টেডিয়াম বানানো বেশি দরকার? সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশে ৬৩টি পূর্ণ মাপের ক্রিকেট মাঠ আছে। পূর্ণ মাপ মানে সব দিকে অন্তত ৭৫ মিটার করে। আমাদের দেশে এ রকম সম্ভবত একটাও নেই। ক্রিকেট স্টেডিয়ামও সব কটির এই মাপ নেই, এক-দুটিতে থাকতে পারে। আমিরাতের মতো দেশে যদি ৬৩টি এ রকম মাঠ থাকে, আফগানিস্তানে ৮টি, নেপালে ৬-৭টি থাকতে পারে; আমাদের দেশে নেই—এটা কোনো কথা হলো!

প্রশ্ন

শেষ প্রশ্ন—যদি সব ধাপ পেরিয়ে সত্যি সত্যি বিসিবির সভাপতি হয়ে যান, সবার আগে কোন কাজগুলো করতে চাইবেন?

আশরাফুল হক: প্রথম কাজ বিসিবির গঠনতন্ত্র পুনর্গঠন করা। যত দ্রুত সম্ভব আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থাকে স্বপ্ন থেকে বাস্তবে রূপ দেওয়া। বিসিবির আর্থিক বিষয়ে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চাই। এসিসিতে প্রতি ১৫ দিন পর পর ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্টসের হিসাব জানিয়ে দেওয়া হয়, যেন সবাই তা দেখতে পারে। কোনো সমস্যা দেখলে বলতে পারে। আমি চাই বিসিবিতেও সেটা থাকুক। এ ছাড়া বিসিবি সভাপতির ক্ষমতাও কমাতে হবে। বিসিবি সভাপতি স্বৈরাচার হতে পারেন না। তিনি দলের অধিনায়ক হতে পারেন, কিন্তু স্বৈরাচার নয়। এটাও গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে করতে হবে। এসিসিতে দীর্ঘ সময় কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে আমার মনে হয়, বিসিবি সভাপতির ক্ষমতা কমিয়ে সেটাও বিকেন্দ্রীকরণ করা উচিত। একটা সংগঠনের প্রেসিডেন্টের ‘ফ্যাসিস্টে’র মতো ক্ষমতা থাকা উচিত নয়, যেটা আমাদের দেশের ক্রিকেট বোর্ডে আছে। বোর্ড প্রেসিডেন্ট সর্বেসর্বা হতে পারেন না। আমাদের ক্রিকেটের উন্নতির পথে এটাও একটা বাধা। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলে (এসিসি) আমরা সফল হয়েছিলাম কারণ প্রেসিডেন্ট এবং বোর্ড পুরো দায়িত্বটা প্রফেশনালদের দিয়ে দিয়েছিল। যে সংগঠনে প্রেসিডেন্ট সবকিছুতে হস্তক্ষেপ করে, যেখানে প্রেসিডেন্টই সংগঠনের সর্বেসর্বা, সে সংগঠন কখনো এগোতে পারবে না।