‘হকির হামজা’ খ্যাত আমিরুল
‘হকির হামজা’ খ্যাত আমিরুল

সাক্ষাৎকারে আমিরুল ইসলাম

‘আমার কাছে কোনো জাদু নেই। বলতে পারেন, এটাই আমার ধ্যানজ্ঞান’

প্রথমবারের মতো জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েই চমকে দিয়েছে বাংলাদেশ। ২৪ দলের মধ্যে ১৭তম হলেও জিতেছে চ্যালেঞ্জার ট্রফি। ভারতে অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশ দলের সেরা পারফরমার আমিরুল ইসলামের বিশেষ সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জহির উদ্দিন।

প্রশ্ন

 প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে ১৭তম হতে পেরে কতটা সন্তুষ্ট?

 আমিরুল ইসলাম: এটা অবশ্যই বড় প্রাপ্তি। যদিও আমাদের লক্ষ্য ছিল ষোলোর মধ্যে থাকা। কিন্তু আমরা গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ম্যাচটা ড্র করে ফেলি। জিতলে হয়তো সম্ভাবনা থাকত। অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের বিপক্ষেও জিতব ভেবেছিলাম, অভিজ্ঞতার অভাবে পারিনি।

প্রশ্ন

  তাহলে কি আক্ষেপ আছে?

আমিরুল: একটু তো আক্ষেপ আছেই। গ্রুপ পর্বে যদি ফ্রান্সের সঙ্গে ড্র করতে পারতাম আর দক্ষিণ কোরিয়াকে হারাতে পারতাম, তাহলে আরও ভালো কিছু হতো। যাহোক, এটাই তো শেষ নয়, সামনে অনেক সুযোগ আসবে। চেষ্টা করব আরও ভালো কিছু করতে।

জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে চ্যালেঞ্জার ট্রফি জিতেছে বাংলাদেশ
প্রশ্ন

  টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ভাবনাটা কেমন ছিল?

 আমিরুল: আমরা কখনোই নেতিবাচক চিন্তা করিনি। কত দূর কী করতে পারব, সেটা ভাবিনি, কিন্তু ভালো কিছু করার প্রতিজ্ঞা নিয়েই প্রতি ম্যাচে নেমেছি। এর আগে সুইজারল্যান্ড ও চিলিকে প্রস্তুতি ম্যাচে হারিয়ে আমাদের সাহসটা আরও বেড়ে যায়। আমরা সব কটি ম্যাচই ভালো খেলেছি, শুধু অভিজ্ঞতা না থাকায় কাছাকাছি গিয়েও হেরেছি।

প্রশ্ন

  মাত্র চার মাসের প্রস্তুতিতে একটা ট্রফি জেতা কীভাবে সম্ভব হয়েছে?

 আমিরুল: এটার অবদান পুরো দলের। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম, প্রথমবার খেলতে গেলেও কেউ যাতে খেলা দেখে না বলে এরা কিছু পারে না। আমাদের মধ্যে এমন একটা জেদ ছিল। বলতে পারেন, এটা পুরোপুরি দলগত অর্জন। কারও একার পক্ষে দলকে এত দূর আনা সম্ভব নয়। সবার মধ্যে দারুণ একটা চেষ্টা ছিল, সাহস ছিল। প্রতিপক্ষ কে, সেটা কেউ ভাবেনি। শুধু একটাই লক্ষ্য, লড়তে হবে।

প্রশ্ন

 প্রথম ম্যাচে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে লড়াই করে হারার পর দলের অবস্থা কেমন ছিল?

 আমিরুল: না, আমরা হাল ছাড়িনি। সেই ম্যাচের পর আমাদের টিম স্পিরিট বরং বেড়েছে। আমরা তখন একসঙ্গে সবাই টিম হোটেলে আলোচনা করি। কোচ বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। মনে হয়েছিল, ওই ম্যাচের পরই আমাদের বিশ্বকাপটা শুরু হলো। সেটাকে আমরা কখনোই হার হিসেবে দেখিনি, এগিয়ে যাওয়ার পথ হিসেবে নিয়েছি। সবার তখন একটাই লক্ষ্য, খেললেই হবে না, মানসম্মত একটা রেজাল্ট নিয়ে ফিরতে হবে।

জুনিয়র বিশ্বকাপ হকিতে ১৮ গোল করেছেন আমিরুল ইসলাম
প্রশ্ন

  ইউরোপের দলগুলোর বিপক্ষে তো খেললেন, তাদের সঙ্গে আপনাদের তফাতটা কোথায়?

 আমিরুল: ইউরোপের দলগুলোর বড় শক্তির জায়গা, তারা প্রচুর ম্যাচ খেলে। তাদের খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত দক্ষতাও দারুণ। এটা আসলে এক–দুই দিনে তৈরি হয় না। যে দল যত বেশি টুর্নামেন্ট ও ম্যাচ খেলবে, তারা তত ভালো করবে। অভিজ্ঞতায় আমরা অনেক পিছিয়ে।

প্রশ্ন

‎অভিজ্ঞতা বাড়াতে কী কী করা দরকার বলে মনে করেন?

আমিরুল: দেখুন, যত বেশি ম্যাচ খেলব, তত আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়বে, এটা সহজ হিসাব। নতুন কিছু শিখব, নিজেদের সংশোধন করব...এটাই হওয়া উচিত, তাই না? আমি বলব, লিগটা নিয়মিত হলে আমাদের জন্য ভালো হবে। দুটি প্রতিযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ও প্রিমিয়ার লিগ। এই দুটি নিয়মিত থাকলে আমাদের উন্নতি করা কঠিন হবে না।

প্রশ্ন

  ‎পাঁচ হ্যাটট্রিকে ১৮ গোল করেছেন। নিজের এ সাফল্যকে কীভাবে দেখছেন?

আমিরুল: এই গোলগুলো আমার একার নয়, এটার পেছনে আমার টিমমেটদের অবদানও আছে। আমি তাদের এবং কোচিং স্টাফদের ধন্যবাদ দিতে চাই। বিশেষ করে টিমমেটরা অনেক বেশি সমর্থন দিয়েছে আমাকে। দলে আমার থেকেও দক্ষ খেলোয়াড় ছিল, তবু তারা আমাকে সুযোগ দিয়েছে। সবার বিশ্বাস ছিল আমি পেনাল্টি কর্নারকে গোলে রূপ দিতে পারব। আমি তাদের বিশ্বাস রেখেছি।

আমিরুল ইসলাম
প্রশ্ন

  পেনাল্টি কর্নার পেলেই গোল করে ফেলেন, জাদু জানেন নাকি?

আমিরুল: না না (হাসি), আমার কাছে কোনো জাদু নেই। আমি আসলে অনুশীলনে অনেক বেশি পেনাল্টি কর্নার নিয়ে কাজ করি। বলতে পারেন, এটাই আমার ধ্যানজ্ঞান। একটা জিনিস আপনি যখন বারবার প্র্যাকটিস করবেন, সেটা আপনার মুখস্থ হয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক।

প্রশ্ন

তাহলে পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করাটা আপনার মুখস্থ?

আমিরুল: আমি সেভাবে চিন্তা করি না। তবে এটাই আমার শক্তির জায়গা। প্রতি ম্যাচের আগে কোচের সঙ্গে আলাপ হয়। পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে অ্যানালাইসিস করি। আমার কোন জিনিসটা ভালো, কোনটা খারাপ। খারাপটা কীভাবে ভালো করা যায়, ম্যাচের আগে এভাবেই নিজেকে তৈরি করি।

প্রশ্ন

  ‎ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

 আমিরুল: জুনিয়র দলের হয়ে বিশ্বকাপ তো খেললাম। স্বপ্ন দেখি, একদিন সিনিয়র দলের হয়েও বিশ্বকাপে খেলব। সে জন্য নিজেকে আরও ভালোভাবে তৈরি করতে হবে, সামনে সেই চেষ্টাই করে যাব।