Thank you for trying Sticky AMP!!

ওয়ানডে অভিষেকেই ম্যাচসেরা হয়েছেন তাওহিদ হৃদয়

‘শুধু চিন্তা করেছি, হয় আমি মারব, না হয় আমি শেষ’

স্বভাবে স্বল্পভাষী। কিন্তু তাওহিদ হৃদয়ের হয়ে কথা বলে তাঁর ব্যাট। এ বছরের বিপিএল থেকে সেটিই হয়ে আসছে। ১৩ ম্যাচ খেলে ১২ ইনিংসে ১৪০ স্ট্রাইক রেটে তাওহিদ রান করেছেন ৪০৩। শুধু রানের জন্য নয়, বিপিএলে খেলার ধরনই জাতীয় দলের দরজা খুলে দেয় হৃদয়ের সামনে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও শুরুটা হয়েছে বলার মতো। মাত্র ৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের ছোট্ট ক্যারিয়ারেই আছে অনেক উত্থান–পতনের গল্প—
প্রশ্ন

ঘরোয়া ক্রিকেট, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট…সবখানে রান করছেন। সময়টা নিশ্চয়ই উপভোগ করছেন?

তাওহিদ হৃদয়: যেভাবে যাচ্ছে, ভালোই যাচ্ছে। আশা করি, সামনেও ভালো হবে।

প্রশ্ন

এক বছর আগেও তো পরিস্থিতিটা এমন ছিল না…

হৃদয়: এখন ক্রিকেট অনেক বদলে গেছে। প্রতিনিয়ত যদি নিজেকে না বদলাই, তাহলে তো টিকে থাকা খুবই কঠিন। একটা জায়গায় আটকে গেলে দেখবেন যে আর কিছুই হবে না। উন্নতিটা ধরে রাখা তাই খুবই জরুরি। সেটা যদি ক্যারিয়ারের শুরু থেকে হয়, তাহলে আরও ভালো।

Also Read: তৌহিদ হৃদয়ের রূপান্তরের গল্প

তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটে নতুন আশা দেখছে বাংলাদেশ
প্রশ্ন

গত বছর বিপিএল-ব্যর্থতার পরই তো আপনার চিন্তাভাবনায় বড় পরিবর্তন এসেছে বলে জানি...

হৃদয়: হ্যাঁ, এই ভাবনা আসে গত বছর বিপিএলে খারাপ খেলার পর। নিজেকে পরিবর্তন করতেই হতো, এমন একটা পরিস্থিতি চলে এসেছিল।

Also Read: ‘দেখার জন্যই’ দলে নেওয়া তৌহিদ হৃদয়কে

প্রশ্ন

বিপিএল ফাইনাল জেতানোর সুযোগ ছিল। শেষ বলে ৩ রান দরকার, কিন্তু আপনি ব্যর্থ হলেন…

হৃদয়: মানসিকভাবে অনেক আপসেট ছিলাম। আমার লাইফের সেরা সুযোগ ছিল সেটা। এমন সুযোগটা আমি কাজে লাগাতে পারিনি। কিন্তু দ্রুতই আবার নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি, সঠিক মানসিকতা নিয়ে সঠিক অনুশীলন করেছি।

নিজেকে পরিবর্তন করতেই হতো, এমন একটা পরিস্থিতি চলে এসেছিল।
তাওহিদ হৃদয়
প্রশ্ন

বারবার মানসিকতার ব্যাপারটা সামনে আসছে…

হৃদয়: সবচেয়ে বেশি কাজে দিয়েছে নিজের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন। সাহসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ ছাড়া ছোট ছোট টেকনিক্যাল জিনিস তো ছিলই, সেগুলো নিয়ে সোহেল স্যারের সঙ্গে কাজ করেছি। আর সুজন স্যার (খালেদ মাহমুদ) আমাকে ছোট থেকেই দেখেছেন, আমার ওপর তাঁর সব সময় আত্মবিশ্বাস ছিল। বিপিএলের পর প্রিমিয়ার লিগেও খুব একটা ভালো করিনি। আবাহনীতে খেলেছি। কিন্তু ব্যাটিং পজিশন নিয়ে অনেক নাড়াচাড়া হয়েছে। তারপরও এখন মনে হয় কী, ওই সময়টা হয়তো একদিক থেকে ভালোই ছিল। আমি সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। আল্লাহ যা করে, আসলে ভালোর জন্যই করে। ওই রকম কিছু না হলে হয়তো এখন যা হয়েছে, সেটাও হতো না।

নিজের প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন তাওহীদ হৃদয়
প্রশ্ন

কিন্তু আপনার ব্যাটিংয়ের আমূল পরিবর্তনের পেছনের গল্পটা এখনো অজানা। এক বছরের মধ্যে এমন পরিবর্তন, বিশেষ করে ছক্কা মারা, বেশি স্ট্রাইক রেটে খেলা, এসব ক্ষেত্রে আপনার পরিবর্তনটা অনেককেই অবাক করেছে।

Also Read: হৃদয় বললেন, ‘যেটা হয়েছে, তাতেই আলহামদুলিল্লাহ’

হৃদয়: আমি দুটি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছিলাম। প্রথমটি খেলি ২০১৮ সালে নিউজিল্যান্ডে। তখন আবার ব্যাটিং টেকনিক এক রকম ছিল। এরপর ২০২০–এর বিশ্বকাপে আমার টেকনিক পরিবর্তন করা হয়। তখন কোচ ছিলেন নাভিদ নেওয়াজ। তখন আমি সুজন স্যারকে এ ব্যাপারে জানাই। বলেছিলাম, এই কোচ আমাকে এসব বদলাতে বলেছেন। নেওয়াজ আমাকে যা করতে বলছিলেন, সেটা ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্য বা অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের জন্য খুব ভালো ছিল। আমি ওই কোচের মতো করে খেলে সফলও হয়েছি। অনেক সেঞ্চুরি মেরেছি। এর আগে যিনি কোচ ছিলেন, ডেমিয়েন, তাঁর সময় আমি বড় বড় ছয় মারতাম। কিন্তু যখন টেকনিক বদলাই, তখন আমার ছয় মারা বন্ধ হয়ে যায়। আমি চার বা সিঙ্গেল প্রচুর নিতে পারতাম। গ্রাউন্ডে ভালো খেলতাম।

যখন বুঝতে পারলাম যে আমি ছোট থেকেই ছয় মারতে পারতাম, প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও ছয় মারতে পারতাম। এখন কেন ছয় হচ্ছে না? কী সমস্যা? এটা নিয়ে কয়েক দিন চিন্তা করার পর আমি আমার আগের ব্যাটিংয়ের ভিডিও দেখেছি। পরে দেখলাম যে আমার এই জায়গাটা বদলে গেছে। আমি নিজে নিজেই এই জিনিসটা ধরেছি। এরপর সোহেল স্যার, সুজন স্যারের সঙ্গে কথা বলে আগের ব্যাটিং টেকনিকে ফিরে যাই। কারণ, আমি ছোট থেকেই বড় বড় ছয় মারতাম। মানুষ বলত, এত ছোট শরীর নিয়ে কীভাবে এত বড় ছক্কা মারি। এখনো বলে। এই বিপিএলেও অনেকে বলেছে, তোমার গায়ে কিছু নেই, কীভাবে এত বড় বড় ছয় মারো। এই প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচেও এই কথা শুনেছি। আমি বলেছি, আসলে ছয় মারতে তো খুব শরীরের জোর লাগে, তা নয়। টেকনিকটা আসল।

প্রথম ম্যাচে যখন মারতে গিয়ে মঈন আলীর বলে আউট হই, তখন অনেকে বলছিল, মারার তো দরকার ছিল না। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, না, আমি মারব। দরকার ছিল নাকি ছিল না, খেলা সহজ ছিল নাকি ছিল না—এসব চিন্তা করিনি। আমি আসলে এ রকম চিন্তা করিনি। আমার মনে হয়েছে, অফ স্পিনার বল করছে, আমি মারতে পারব।
তাওহিদ হৃদয়
প্রশ্ন

এ তো গেল টেকনিক বদলানোর কথা। এরপর সেটিকে পারফরম্যান্সে রূপ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ তো ছিলই...

হৃদয়: এরপর আর বেশি কিছু চিন্তা করিনি। আগে অনেক কিছু চিন্তা করতাম। এভাবে খেললে জাতীয় দলে খেলা যাবে, এত রান করলে আলোচনায় আসা যাবে। এ বছর আমি কিছুই চিন্তা করিনি। আমি শুধু চিন্তা করেছি, হয় আমি মারব, না হয় আমি শেষ। ক্রিকেট খেলা এখানেই শেষ। দিন শেষে মূল জিনিস এটাই। আপনি কী চিন্তাভাবনা করছেন, কতটা সাহসের সঙ্গে পরিকল্পনার প্রয়োগ করছেন, এগুলোই। খুব যে বেশি কিছু, তা নয়। আবার খারাপ খেলা শুরু করলেও কিন্তু অনেক রকম কথা হবে।

বিপিএলে খেলার ধরনই জাতীয় দলের দরজা খুলে দেয় হৃদয়ের সামনে
প্রশ্ন

বিপিএলের পারফরম্যান্স দিয়ে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে গেলেন দ্রুতই। কিন্তু বিপিএলে মেরে খেলা হৃদয়কেই দেখা গেল জাতীয় দলে।

হৃদয়: আমি খেলার ছন্দটা একদমই বদলাতে চাইনি। জাতীয় দলে খেলছি, কার সঙ্গে খেলছি, কার বিপক্ষে…কিছুই ভাবিনি। ইংল্যান্ডের সঙ্গে আমার প্রথম ম্যাচ ছিল। তখন চেষ্টাই করেছি এভাবে খেলার। প্রথম ম্যাচে যখন মারতে গিয়ে মঈন আলীর বলে আউট হই, তখন অনেকে বলছিল, মারার তো দরকার ছিল না। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, না, আমি মারব। দরকার ছিল নাকি ছিল না, খেলা সহজ ছিল নাকি ছিল না—এসব চিন্তা করিনি। আমি আসলে এ রকম চিন্তা করিনি। আমার মনে হয়েছে, অফ স্পিনার বল করছে, আমি মারতে পারব।

Also Read: এমন দারুণ খেলেও হৃদয়ের হৃদয়ভঙ্গ

প্রশ্ন

আপনাকে দেখে মনে হয়নি আপনি আপনার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছেন…

হৃদয়: আমারও মনে হয়নি (হাসি)। মাঠে নামলে আমার এখন প্রতিপক্ষ নিয়ে কোনো ভাবনা কাজ করে না। আর আমি মনে করি, এটা খুবই ভালো একটা জিনিস। আমার ডেব্যুতে প্রথম বল খেলেছি জফরা আর্চারের। আমার মনে হয়নি যে জফরা আর্চারকে খেলছি। আমি আমার মতোই ছিলাম। ওই যে চিন্তাভাবনার কথা বললাম, সেটাই।

প্রশ্ন

ওয়ানডে অভিষেকও হলো দ্রুত। ব্যাটিং করার সুযোগ পেলেন ‘আইডল’ মুশফিকুর রহিমের ৪ নম্বরে পজিশনে।

হৃদয়: দলের নিশ্চয়ই আস্থা ছিল। আমার লিস্ট ‘এ’ রেকর্ডও খুবই ভালো। ‘এ’ দলের হয়েও এই সংস্করণে ভালো করেছি। আমি জানি যে আমার ওয়ানডের সামর্থ্যটা কেমন। তবে হ্যাঁ, আমি যে জায়গায় খেলার সুযোগ পেয়েছি ওয়ানডেতে, সে জন্য নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে হয়।

প্রশ্ন

মুশফিকের জায়গায় খেলছিলেন বলে কি আলাদা চাপ অনুভব করেছেন?

হৃদয়: এতটা ভাবিনি। দল থেকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল। সেটা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আর এত চিন্তা আমার মাথায় আসে না।

প্রশ্ন

আর কয় মাস পরই তো ওয়ানডে বিশ্বকাপ, দলে থাকার স্বপ্ন দেখেন নিশ্চয়ই...

হৃদয়: ওই যে বললাম, এসব নিয়ে ভাবনা মাথায় আসে না। আর বিশ্বকাপের আগে অনেক খেলা আছে। সেসব নিয়েই এখন ভাবছি। চেষ্টা করব, এই সময়ে যেন পারফরম্যান্সটা ঠিক রাখতে পারি।

Also Read: তৌহিদ হৃদয়কে জাতীয় দলে নেওয়ায় তাড়াহুড়ো দেখছেন মাশরাফি