Thank you for trying Sticky AMP!!

অনলাইন যোগাযোগে নতুন ধারা

অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাপভিত্তিক যোগাযোগ বেড়েছে

পৃথিবী বদলে গেছে। অনেক কিছু নতুন হয়েছে। আগে যাঁরা কাছাকাছি ঘেঁষে আড্ডা দিতে পছন্দ করতেন, তাঁরা এখন মানছেন সামাজিক দূরত্ব। মুখে পরছেন মাস্ক। কিন্তু তাতে কি সামাজিক দূরত্ব বেড়েছে? মুখোমুখি দেখা না হলেও প্রযুক্তির এ যুগে মানুষ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আরও বেশি ঘনিষ্ঠ ও অভ্যস্ত হয়েছে।

দ্রুতগতির ফোর–জি ইন্টারনেটের কল্যাণে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বেড়ে গেছে। যাঁরা আগে কালেভদ্রে ইন্টারনেটে ঢুঁ মারতেন, তাঁদের মুখে এখন গুগল মিট, মেসেঞ্জার রুম ও জুমের মতো নতুন শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।

দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ছয় মাসে দেশে ভিডিও কল সেবা ব্যাপক হারে বাড়তে দেখা গেছে। মোবাইল ফোনে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপের ব্যবহারের পাশাপাশি পেশাদার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সফটওয়্যারের ব্যবহারও বেড়েছে। গত কয়েক মাসে ভিডিও কলের ব্যবহার পাঁচ থেকে ছয় গুণ পর্যন্ত বাড়তে দেখা গেছে।

আগে দেশ থেকে স্কাইপে বা মেসেঞ্জারের মতো সেবা ব্যবহার করে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এখন গ্রুপ কলের জন্য জুম, মিট, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ ইনস্টল করেছেন অনেকেই। এ অ্যাপগুলো বাড়িতে বসে থাকার সময়ে লোকজনকে কাছের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করে দিয়েছে। সামাজিক দূরত্বের বাস্তবতা মেনেই সবাই ভিডিও কলে দেখে নিতে পারছেন পরিবার, বন্ধুবান্ধবের মুখ। দূরে থেকে শুনতে পারছেন তাঁদের কণ্ঠ। অফিসের যোগাযোগ ও কাজও সহজ হয়েছে এতে।

দেশে দ্রুতগতির ইন্টারনেট হিসেবে ফোর–জি সেবা চালুর পর থেকে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং বেড়ে গিয়েছিল। এ বছরের শুরু দিক থেকেই জুম সফটওয়্যারটি ব্যবহার বাড়ছিল। তবে গত জানুয়ারি থেকে মহামারি ছড়াতে শুরু হলে বিভিন্ন দেশে মানুষ লকডাউনে যেতে শুরু করে। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে কর্মকাণ্ড শুরু করে।

গত মার্চ মাস থেকে দেশেও লকডাউন শুরু হয়ে যায়। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের হোম অফিস শুরু করতে বলে। এ সময়ে ঘরবন্দী মানুষের যোগাযোগের জন্য ভরসার জায়গা হয়ে ওঠে ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপগুলো। ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার ও ইমোর ব্যবহার বেড়ে যায়। যাঁরা অফিসের কাজ করেন, তাঁরা বিভিন্ন মিটিংয়ের জন্য জুম, মাইক্রোসফট টিমস ও গুগল মিটের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

দেশে গার্মেন্টস শিল্পে সফটওয়্যার সেবা দিয়ে থাকে প্রাইডসিস। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রকল্পে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতিষ্ঠানটির অফিসে ১৫০ জনের বেশি কর্মী কাজ করেন। বিভিন্ন প্রকল্পে প্রতিষ্ঠানটিতে ওয়েব ডেভেলপার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কর্মী কাজ করেন। মার্চের দিকে হঠাৎ করে লকডাউন শুরু হলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের সবাইকে বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হয়। বিভিন্ন চলমান প্রকল্পসহ গার্মেন্টস শিল্পে করোনার সময়ে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার সেবার জন্য নিয়মিত যোগাযোগ প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এ সময় কর্মীদের নিয়মিত সভা, জরুরি মিটিং—সবকিছুই অনলাইনভিত্তিক হয়ে দাঁড়ায়।

প্রাইডসিস আইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার ইকবাল বলেন, প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ সভা এখন অনলাইনে সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি যখন অনেক প্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ বাতিলের মুখে পড়ে লোকসানের ঝুঁকি দেখা যায়, তখন তাঁরা দ্রুত সমর্থন দিতে পেরেছেন। এ ক্ষেত্রে অনলাইন যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গুরুত্বপূর্ণ সব মিটিং, আলোচনা, সেবা অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে বিশ্ব। মানুষের যোগাযোগে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সরাসরি যোগাযোগের পরিবর্তে মানুষ এখন অনলাইন যোগাযোগে প্রাধান্য দিচ্ছে বেশি। সামাজিক দূরত্ব রাখতে এবং সহজ-সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মকেই বেছে নিতে হয়েছে।

দেশ ও দেশের বাইরে সফটওয়্যার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টিকন সিস্টেম তৈরি করেছে ‘ই-মিটিং’ নামের ভিডিও কনফারেন্সিং সেবা। টিকনের প্রধান নির্বাহী এম এন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রযুক্তি বিশ্বায়নের প্রক্রিয়াকে অসম্ভব গতিময়তা দিয়েছে, যেখানে যে থাকুক না কেন, ভার্চ্যুয়ালি মানুষ অনেক কর্মকাণ্ড করতে পারছে আর যেটার ফলে অনেক প্রতিকূলতা সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার মতো মহাদুর্যোগে প্রযুক্তিকে সহায় করে বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও স্বাভাবিক অনেক প্রক্রিয়া চালু রাখতে সাহায্য করছে প্রযুক্তি। তথ্য সংযোগ সহজলভ্য হওয়ায় হোম অফিস, নিয়মিত পাঠ্যক্রমসহ বাণিজ্যিক নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে মানুষ দৈনন্দিন নানা কাজকর্ম এগিয়ে নিতে পারছে। ভিডিও যোগাযোগের নানা অ্যাপ্লিকেশন, যেমন: জুম, মিট, ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো ইত্যাদি সব শ্রেণির মানুষের কাছে বেশ পরিচিত হয়ে উঠছে। সবাই এগুলো সাবলীলভাবে ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে।

টিকনের প্রধান নির্বাহী আরও বলেন, ‘দুর্গম গ্রামে বসেও সরাসরি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষ ও স্বজনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে। ইন্টারনেট পরিষেবা বা ডেটা নেটওয়ার্কের বিস্তারের কারণে মানুষ করোনাকালে প্রতিকূলতায় টেলিমেডিসিনের মতো সেবায় যুক্ত হতে পারছে। প্রযুক্তিভিত্তিক নানা আর্থিক পরিষেবায় যুক্ত হয়ে মানুষ সামাজিক দূরত্ব মেনে করোনাকালেও করতে পারছে বাণিজ্যিক বিনিময়। খুব সন্নিকটে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও মানুষের জন্য বিপুল পরিবর্তন নিয়ে আসছে আসছে বিগ ডেটার নানা বিজনেস অ্যাপ্লিকেশন। নিরবচ্ছিন্ন ও ব্যাপক ইন্টারনেটের পরিষেবা এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করবে।

দেশে চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক চালুর মাধ্যমে গ্রামীণফোন ইতিমধ্যে গ্রাহকদের সংযুক্ত করেছে। গত ছয় মাসে গ্রামীণফোনের ফোর–জি ব্যবহার করে অসংখ্য মানুষ পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

দ্রুতগতির ইন্টারনেট ছাড়া ফেসবুক লাইভ বা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হওয়া কঠিন। ফোর–জি ইন্টারনেট সুবিধা মানুষকে ঘরে বসে কাজ করার সুবিধা এনে দিয়েছে।
ব্যক্তিগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সেবাগুলো যেমন বেশি ব্যবহার করছেন, তেমনি ব্যবসা ও অফিসের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে জুম, গুগল মিট, টিমস, ওয়েবএক্সের মতো নানা সেবা। ব্যক্তিগত ও পেশাদারি কাজের ক্ষেত্রে মানুষের জীবনকে সহজ করে তুলেছে ফোর–জি নেটওয়ার্ক।

দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধার কারণে লকডাউনের মধ্যে ঘরে থেকেই মানুষ কাজ চালিয়ে যেতে পেরেছেন। দেশের অর্থনীতি বন্ধ হয়ে পড়েনি। অনলাইনভিত্তিক জীবনব্যবস্থা নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চলটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।