Thank you for trying Sticky AMP!!

অনলাইন রেডিও

কার্টুন: জুনায়েদ আজীম চৌধুরী

আগের দিনের রেডিও মানেই এমন একটি যন্ত্র, যেটি বেতার তরঙ্গের নির্দিষ্ট কিছু কম্পাঙ্কে বা ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে। নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের ওই বেতারকেন্দ্রগুলো থেকে পাঠানো কথা বা গান শোনা যেত রেডিওতে। কিন্তু বর্তমান সময়ে রেডিওর সংজ্ঞা শুধুই এমন নয়। অনেক দিন থেকেই এফএম রেডিওগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। আগেকার মতো আলাদা রেডিও ছাড়াও মোবাইল ফোন থেকে খুব সহজেই শুনতে পাওয়া এই স্টেশনগুলো। পাশাপাশি বাড়ছে ইন্টারনেট-নির্ভর অনলাইন রেডিওর প্রচলন। আবার স্মার্টফোনের উপযোগী রেডিও অ্যাপের সংখ্যাও বাড়ছে ধীরে ধীরে।
নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের রেডিওগুলো একটি এলাকাভিত্তিক হয়ে থাকে। কিন্তু ইন্টারনেট রেডিওর সুবিধা হলো এটি বিশেষ কোনো এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে রেডিওর গান বা অন্যান্য অনুষ্ঠান উপভোগ করা যায়। আবার এর জন্য আলাদা করে কোনো যন্ত্র কেনার প্রয়োজনও নেই। ইন্টারনেট সংযোগ সক্রিয় থাকলে যেকোনো ডেস্কটপ, ল্যাপটপ কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন থেকেই শোনা যাবে এই রেডিওগুলো।
নিজের রেডিও স্টেশন
অনেকের ইচ্ছে থাকে নিজের একটি রেডিও স্টেশন বানানোর। যেখানে তাঁরা পছন্দের গান, অনুষ্ঠান বা সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে পারবেন। ইন্টারনেট রেডিও এই কাজটি তুলনামূলক সহজ করে দিয়েছে। কিছু কারিগরি জ্ঞান থাকলে নিজেই তৈরি করে ফেলা সম্ভব অনলাইন রেডিও।
বেতারকেন্দ্রের ধারণা ও কাজগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। রেডিওর মাধ্যমে গান, কথার মতো অডিও বার্তা সম্প্রচার করা হয়। এগুলো আগে থেকে ধারণ করা হতে পারে, অথবা নির্দিষ্ট সময়ের অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হতে পারে। যে কম্পিউটার থেকে কাজগুলো করা হবে, সেখানে প্রয়োজনীয় কিছু প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করা থাকতে হবে। যে অডিও বার্তাগুলো অনলাইনে সম্প্রচার করা হবে, সেটি স্ট্রিম করার উপযোগী করে প্রস্তুত করতে হবে এবং এরপর এটি ওয়েব সার্ভারের মাধ্যমে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিতে হবে।
ডেস্কটপ কম্পিউটারে কাজ করার জন্য উইনঅ্যাম্প সফটওয়্যারটি (www.winamp.com) বেশ জনপ্রিয় নির্দিষ্ট কিছু প্লাগ–ইন (ছোট প্রোগ্রাম) ব্যবহার করে অডিও ফাইলকে স্ট্রিমিংয়ের উপযোগী করা যায়।  এ ছাড়া মিক্সসহ (www.mixxx.org) এ ধরনের আরও কিছু সফটওয়্যার রয়েছে।
যে ওয়েব সার্ভারের মাধ্যমে অনলাইন রেডিও প্রচার করা হবে, সেটির সার্ভার কনফিগারেশন বা সাজিয়ে নেওয়ার জন্য কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। প্রথমত, স্টেশনের অনুষ্ঠান একই সঙ্গে সর্বোচ্চ কতজন শুনতে পারবে, সেই সম্পর্কে একটি ধারণা থাকতে হবে। আর এর ওপর ভিত্তি করেই সার্ভারের আপস্ট্রিম স্পিড (দেশের বাইরে থাকা সার্ভারে ফাইল বা ডেটা পাঠানোর গতি) নির্ধারণ করতে হবে। আপস্ট্রিম গতি যত বেশি হবে, তত ভালো মানের অডিও প্রচার করা সম্ভব হবে। ইন্টারনেট সংযোগের গতি এবং শব্দের মান দুটিই কিলোবিট/সেকেন্ড (কেবিপিএস) এককে হিসাব করা হয়। তাই সার্ভারের ন্যূনতম ব্যান্ডউইড্থ নির্ধারণের জন্য এই সরল সমীকরণটি ব্যবহার করা যেতে পারে—
সর্বোচ্চ শ্রোতার সংখ্যা x অডিও বিটরেট = ন্যূনতম ব্যান্ডউইড্থ।
শ্রোতার সংখ্যা বেশি হলে সার্ভারের ব্যান্ডউইড্থের পাশাপাশি মেমরি, প্রসেসিং ক্ষমতাও বেশি হতে হবে। আর সার্ভার তৈরি হওয়ার পরে একটি স্ট্রিমিং সার্ভার প্রোগ্রামের মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়। এ ধরনের প্রোগ্রামের মধ্যে আইসকাস্ট (http://icecast.org) জনপ্রিয়।
নিজে সার্ভার তৈরি না করে, বিনা মূল্যের অন্য সেবা নিয়ে অনলাইন রেডিও তৈরি করা যেতে পারে। ক্যাস্টার (www.caster.fm) এ ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। শাউটকাস্টেও এই কাজ করা যায় (www.shoutcast.com/broadcastnow)।  
লেমন ২৪ (www.lemon24.com) বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন রেডিও স্টেশন। প্রতিষ্ঠানটি দেশে এবং দেশের বাইরে একাধিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। লেমন ২৪-এর প্রধান নির্বাহী আশ্রাফ আবির জানালেন, তাঁরা যে সময় তাঁদের এই স্টেশনটি তৈরি করেছিলেন, সেই সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এত বেশি ছিল না। কিন্তু তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল আর তাই এখনো তাঁরা শ্রোতাদের জন্য নতুন নতুন সেবা নিয়ে হাজির হচ্ছেন নিয়মিতভাবেই। অনলাইন রেডিও স্টেশনের ব্যাপ্তি বাড়াতে জন্য তাঁরা নিয়মিত কাজ করছেন। ইন্টারনেট রেডিও স্টেশন হঠাৎ করে তৈরি না করে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে শুরু করা উচিত। তাহলে এটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পায় এবং মানুষ আস্থা রাখতে পারে।
এফএমের অনলাইন সংস্করণ
বর্তমানে দেশে যতগুলো এফএম বেতারকেন্দ্র রয়েছে, তাদের প্রায় সব কটিই অনলাইনে সরব। কেন্দ্রগুলো তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিয়মিত অনুষ্ঠানগুলো অনলাইনেও প্রচার করছে। এফএমের অডিও স্ট্রিমটি তাদের একটি ওয়েব সার্ভারের মাধ্যমে অনলাইনে সম্প্রচার করা হচ্ছে। এই সম্প্রচার চ্যানেল তাদের ওয়েবসাইটে যুক্ত করে করে দেওয়া হচ্ছে।
বিনা মূল্যে অথবা নিজের সার্ভার যেভাবেই তৈরি করা হোক না কেন, অনলাইন রেডিও, এর পেছনে থাকতে হবে সঠিক পরিকল্পনা। পরিকল্পনা ছাড়া হঠাৎ করে একটি স্টেশন তৈরি করা হলে সাধারণভাবে সেটি বেশি দিন চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় না।