সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ জীববিজ্ঞান থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

প্রশ্ন:
ক. বংশগতি কাকে বলে?
খ. থ্যালাসেমিয়া বলতে কী বোঝায়?
গ. চিত্র-P-এর অনুলিপিকরণ বর্ণনা করো।
ঘ. বংশগতিতে চিত্র-P-এর ভূমিকা বিশে্লষণ করো।
উত্তর: ক. পিতা-মাতার বৈশষ্ট্যিগুলো বংশানুক্রমে সন্তানসন্তুতির দেহে সঞ্চারিত হওয়াকে বংশগতি বলে।
উত্তর: খ. থ্যালাসেমিয়া রক্তের লোহিত রক্তকণিকার এক অস্বাভাবিক অবস্থাজনিত রোগ। এই রোগে লোহিত রক্তকণিকাগুলো নস্ট হয়। ফলে রোগী রক্তশূন্যতায় ভোগে। এই রোগ বংশপরম্পরায় হয়ে থাকে। লোহিত রক্ত কণিকা দুই ধরনের প্রোটিন দ্বারা তৈরি। যথা: গে্লাবিউলিন এবং গে্লাবিউলিন। লোহিত রক্তকণিকায় এ দুটি প্রোটিনের জিন নষ্টের কারণে থ্যালাসেমিয়া হয়ে থাকে।
উত্তর: গ. চিত্র-P DNA অণুর ডাবল হেলিক্স। যে প্রক্রিয়ায় DNA ডাবল হেলিক্স অবিকল আরেকটি অণুর সৃষ্টি করে, তাকে DNA অণুর অনুলিপিকরণ বা প্রতিরূপ সৃষ্টি বলে। DNA-এর প্রতিরূপ সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি অর্ধসংরক্ষণশীল প্রতিরূপ সৃষ্টি নামে পরিচিত। DNA-এর প্রতিরূপ সৃষ্টি নিচের ধাপগুলোর মাধ্যমে অতি দ্রুত, অবিচ্ছিন্ন ও নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হয়।
১. হাইড্রোজেন বন্ডের বিলোপ সাধন: প্রতিরূপ সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে পিউরিন ও পাইরিসিডিন বেসের সংযোগকারী হাইড্রোজেন বন্ড ভেঙে যায়। ফলে, DNA অণুর একাংশ পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে পড়ে এবং প্রতিটি হেলিক্স ছঁাচ হিসেবে কার্যকর হয়।
২. সম্পুরক সৃষ্টি: পরস্পর থেকে পৃথক হওয়ার পর হেলিক্স বা সূত্র দুটি ছঁাচের মতো কাজ করে। নতুন হেলিক্স তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান অর্থাত্ শর্করা, বেস ও ফসফেট যথাসময়ে যথাস্থানে উপস্থিত হয় এবং সম্পূরক সূত্র সৃষ্টি হয়। সম্পূরক সৃষ্টির জন্য অবশ্য DNA পলিমারেজ নামক এনজাইম এবং ম্যাগনেসিয়াম আয়নের উপস্থিতি প্রয়োজন হয়।
৩. ছঁাচের বেগের অনুক্রম অনুসারে সম্পূরক বেসের বিন্যাস ও হাইড্রোজেন বন্ডের সৃষ্টি: নতুন সৃষ্ট সূত্র দুটিতে ছঁাচের বেগের অনুক্রম অনুসারে সম্পূরক বেসগুলো বিন্যস্ত থাকে। অর্থাত্, ছঁাচে যদি অ্যাডেনিন থাকে, তবে তার বিপরীতে সৃষ্ট নতুন সূত্রটিতে থাইসিন সংযোজিত হয়। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় ছঁাচে সাইটোসিন থাকলে তার বিপরীতে সৃষ্ট নতুন সূত্রে সম্পূরক বেস হিসেবে গুয়ানিন সংযোজিত হয়। অতঃপর ছঁাচের ও নতুন সৃষ্ট সম্পূরক বেসের মধ্যে পুনরায় হাইড্রোজেন বন্ডের আর্বিভাব হলে একটি DNA অণু থেকে দুটি DNA অণুর সৃষ্টি হয়।
উত্তর: ঘ. যে প্রক্রিয়ায় পিতা-মাতার আকার, আকৃতি, দেহের গঠন-প্রকৃতি, শারীরবৃত্ত, আচরণ ইত্যাদি নানাবিধ বৈশষ্ট্যি বংশানুক্রমিকভাবে তাদের সন্তানসন্ততির দেহে সঞ্চারিত হয়, তাকে বংশগতি বলে। যেসব বস্তুর মাধ্যমে পিতা-মাতার বৈশষ্ট্যি সন্তানসন্ততিতে বাহিত হয়, তাদের বংশগতি বস্তু বলা হয়। বংশগতি বস্তুর প্রধান উপাদান ক্রোমোসোম।
ক্রোমোসোমে রয়েছে চিত্র-P (DNA), যেখানে জিনগুলো সুসজ্জিত থাকে। জিনই হচ্ছে সব জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ধারক, যা পর্যায়ক্রমে বাহ্যিক চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তোলে। যেৌন জননে অংশগ্রহণকারী জীবের জননকোষ সৃষ্টির প্রাক্কালে মিয়োসিস বিভাজন ঘটে। এ সময় সমসংস্থ ক্রোমোসোমযুগল পৃথক হয়ে ভিন্ন ভিন্ন জননকোষে প্রবেশ করে। ক্রোমোসোমের সঙ্গে এর জিনগুলো জননকোষের মধ্যে এসে পড়ে। নিষেকের ফলে পুং ও স্ত্রী জননকোষ মিলিত হয়ে জাইগোট গঠন করে। এ জাইগোটের মধ্যে পিতা-মাতার জিনগুলো একত্র হয় এবং সন্তানসন্ততির বৈশষ্ট্যি প্রকাশ ঘটে। এভাবে বংশানুক্রমিকভাবে জীবন সঞ্চারিত হয়। সুতরাং, উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, বংশগতিতে চিত্র-P (DNA) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
মোহাম্মদ আক্তার উজ জামান, প্রভাষক
রূপনগর মডেল স্কুল ও কলেজ, ঢাকা