তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি

সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

প্রশ্ন: ওয়েবসাইট কী? ওয়েবসাইটের কাঠামো বলতে কী বোঝায়? বর্ণনা করো।

উত্তর:

ওয়েবসাইট: কোনো ওয়েব সার্ভারে রাখা ওয়েবপেজ, ছবি, অডিও, ভিডিও ও অন্যান্য ডিজিটাল তথ্যের সমষ্টিকে ওয়েবসাইট বলে, যা ইন্টারনেট বা ল্যানের মাধ্যমে প্রবেশ করা যায়। ওয়েবপেজ মূলত একটি এইচটিএমএল ডকুমেন্ট, যা এইচটিটিপি প্রটোকলের মাধ্যমে ওয়েব সার্ভার থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওয়েব ব্রাউজারে স্থানান্তরিত হয়।

ওয়েবসাইটের কাঠামো: যে অবকাঠামোতে একটি ওয়েবসাইটের সব তথ্য উপস্থাপন করা হয়, তাকে ওয়েবসাইটের কাঠামো বলা হয়। ওয়েবসাইটের কাঠামো তিনটি অংশে বিভক্ত। যথা:

১. হোমপেজ

২. মূল সেকশন বা মূল ধারার পেজ

৩. উপ-সেকশন বা উপধারার পেজ

১. হোমপেজ: হোমপেজ ব্রাউজার শুরুতে লোড করে। হোমপেজ হলো একধরনের সূচি। এই পেজে মূল প্রোগ্রাম, ব্যানার, অ্যানিমেশন যুক্ত থাকে। এখানে মেন্যু তৈরি করে অন্যান্য পেজের সঙ্গে যুক্ত করা থাকে।

২. মূল সেকশন বা মূল ধারার পেজ: হোমপেজের পরের ওয়েবপেজগুলোকে মূল সেকশন বলে। মূল সেকশন কয়েকটি পেজ নিয়ে গঠিত হয়।

৩. উপ-সেকশন বা উপধারার পেজ: মূল সেকশন আবার অনেকগুলো পেজের সঙ্গে যুক্ত। হোমপেজ থেকে মূল সেকশন এবং মূল সেকশন থেকে উপ-সেকশনে পেজের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং লেখার পরিমাণও বাড়তে থাকে।

উপরিউক্ত পেজগুলো বিভিন্নভাবে সাজানো থাকতে পারে। ওয়েবসাইটের বৈশিষ্ট্য অনুসারে তার বিভিন্ন পেজগুলো নিম্নোক্ত চারভাবে সাজানো যেতে পারে। যেমন:

১। ট্রি বা হায়ারারকিক্যাল

২। ওয়েব লিংকড বা নেটওয়ার্ক

৩। সিকুয়েন্স বা লিনিয়ার

৪। হাইব্রিড বা কম্বিনেশন

ট্রি বা হায়ারারকিক্যাল কাঠামো:

হায়ারারকি কাঠামোতে ওয়েবসাইটগুলো একটি হোমপেজকে কেন্দ্র করে বিন্যস্ত থাকে। হোমপেজ থেকে অন্য পেজগুলোয় আসা-যাওয়া বা নেভিগেট করার ব্যবস্থা থাকে। হায়ারারকি কাঠামোর সাইটগুলো একধরনের শৃঙ্খলা মেনে চলে বলে যেকোনো ব্যবহারকারীর জন্য এ কাঠামোটি অত্যন্ত সহজবোধ্য। এ কারণে প্রাতিষ্ঠানিক সাইটগুলোয় এই কাঠামো বেশি ব্যবহার করা হয়।

হায়ারারকি কাঠামোর দুটি ভাগ রয়েছে:

এক স্তরের হায়ারারকি কাঠামো

বহুস্তরের হায়ারারকি কাঠামো।

এক স্তরের হায়ারারকি কাঠামো:

এ কাঠামোয় প্রতিটি ওয়েবপেজ শটার বা তারার মতো একটি কেন্দ্রীয় পেজের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। যেকোনো পেজে যেতে হলে হোমপেজ থেকে যেতে হয়। এক পেজ থেকে অন্য পেজে যাওয়া যায় না।

বহুস্তরের হায়ারারকি কাঠামো:

এ কাঠামোয় একটি হোমপেজের সঙ্গে একাধিক সরল লিনিয়ার কাঠামো যুক্ত থাকে। এ ধরনের কাঠামোয় ওয়েবসাইটের পেজগুলোকে সহজেই শ্রেণিতে ও উপ-শ্রেণিতে ভাগ করা যায় বলে, বিশাল আকারের সাইটগুলো সুশৃঙ্খলভাবে সাজাতে এই কাঠামো ব্যবহার করা হয়।

ওয়েব লিংকড কাঠামো:

ওয়েব লিংকড কাঠামোয় সাইটের ওয়েবপেজগুলো প্রত্যেকে প্রত্যেকের সঙ্গে সংযোগ বা লিংক থাকে। ফলে যেকোনো পেজ থেকে যেকোনো পেজে আসা-যাওয়া করা সম্ভব হয়। অনেক সময় এই কাঠামোর সাইটগুলোয় অন্য সাইটের ওয়েবপেজের লিংক বা সংযোগ থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে ওয়েব লিংকড কাঠামোর সাইটগুলো বেশ জটিল আকার ধারণ করতে পারে। সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য এই কাঠামো ব্যবহার করা বেশ জটিল বলে এই কাঠামো দিয়ে তৈরি সাইটের প্রচলন সে রকম নেই বললেই চলে।

সিকোয়েন্স বা লিনিয়ার কাঠামো:

ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ওয়েবপেজে তথ্য বিন্যস্ত করে রাখার জন্য লিনিয়ার কাঠামো সবচেয়ে সহজ ও পরিচিত পন্থা। বই-পত্র, ম্যাগাজিন ইত্যাদিতে এই কাঠামো ব্যবহার করা হয়। লিনিয়ার কাঠামোয় ওয়েবপেজগুলো ধারাবাহিকভাবে পর পর সংযুক্ত থাকে। লিনিয়ার কাঠামোর আবার দুটি ভাগ রয়েছে:

সরল লিনিয়ার কাঠামো

যৌগিক লিনিয়ার কাঠামো।

সরল লিনিয়ার কাঠামো:

এ কাঠামোয় ওয়েবসাইটের ওয়েবপেজগুলো পর পর সংযুক্ত থাকে। ফলে একটি ওয়েব থেকে অন্যটিতে যেতে হলে ধাপে ধাপে যেতে হয়। সাধারণত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ বা শিক্ষামূলক সাইটে এই  কাঠামো ব্যবহার করা হয়।

যৌগিক লিনিয়ার কাঠামো:

এ কাঠামোয় ওয়েবসাইটের ওয়েবপেজগুলো পর পর সংযুক্ত থাকলেও, প্রতিটি পেজের সঙ্গে অন্য এক বা একাধিক পেজের সংযোগ থাকতে পারে।

হাইব্রিড বা কম্বিনেশন কাঠামো:

হাইব্রিড কাঠামো হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর কাঠামো। দুই বা দুয়ের বেশি কাঠামোর মিশ্রণে এই কাঠামো তৈরি হয়। বিশাল আকৃতি ও জটিল ওয়েবসাইট তৈরিতে এই কাঠামো বেশি ব্যবহূত হয়। হাইব্রিড কাঠামোর মূল ভিত্তি হিসেবে হায়ারারকি কাঠামোকেই বেছে নেওয়া হয়। হায়ারারকি কাঠামোর সঙ্গে লিনিয়ার কাঠামো বা ওয়েব লিংকড কাঠামোর সংমিশ্রণে হাইব্রিড কাঠামো গড়ে ওঠে। তবে অনেক সময় হায়ারারকি, ওয়েব লিংকড ও লিনিয়ার তিনটি কাঠামো মিলেই হাইব্রিড কাঠামো গঠন করা হয়।

এস এম হাবিব উল্লাহ, প্রভাষক

চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ