ছবি: প্রথম আলো
ছবি: প্রথম আলো

আন্তর্জাতিক নারী দিবস

সংসার সামলে ফ্রিল্যান্সিং করে আয়ও করছেন শাহ্‌ নাজ, রেশমা ও সুমাইয়া

আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ বছর নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন।’ আর এই স্লোগান নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে সমাজ ও পরিবারে ভূমিকা রেখে চলেছেন। বিভিন্ন পেশাজীবী নারীদের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করে ঘরে বসে আয়ও করছেন অনেক নারী। সংসার সামলে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করা নারীদের মধ্যে রয়েছেন শাহ্ নাজ পারভীন, রেশমা হক ও সুমাইয়া আক্তার। তাঁদের প্রতে৵কেরই একই স্বপ্ন বড় কিছু করার; ঘরে বসে থাকা নারীদের উৎসাহ দেওয়া—আমিও কিছু পারি। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে নিজেদের সফলতার পেছনের কাহিনি শুনিয়েছেন তাঁরা।

শাহ্ নাজ পারভীন

সাভারের বাসিন্দা শাহ্ নাজ পারভীন ছিলেন ব্যাংকার। স্বামী সাইফ খান ব্যবসায়ী। যমজ সন্তান হওয়ায় সন্তানদের দেখাশোনার জন্য শখের চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন তিনি; কিন্তু দমে যাননি শাহ্ নাজ পারভীন। ২০২৩ সালে ইউটিউবে একটি ভিডিওর মাধ্যমে জানতে পারেন বিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের খবর। এরপর অনলাইনে জুমে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এক্সপার্ট হিসেবে নিজেকে দক্ষ করে তোলেন। বর্তমানে শাহ্ নাজ পারভীন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, পিন্টারেস্ট ও লিংকডইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজনেস গ্রোথ নিয়ে কাজ করছেন। মার্কেন্ট্রিক্স নামে শাহ্ নাজ পারভীনের একটা বিজনেস পেজ রয়েছে। এই পেজের মাধ্যমেই  ঘরে বসে দেশ–বিদেশের ক্লায়েন্টদের সেবা দিয়ে থাকেন তিনি।

শাহ্‌ নাজ পারভীন

শাহ্ নাজ পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার গল্পটা মূলত শেষ থেকে শুরু হয়েছে। আমি কাজ করতাম ব্যাংকে। যমজ সন্তান হওয়ার পর তাদের যত্নের কথা মাথায় রেখে চাকরিটা ছেড়ে দিই। ভেবেছিলাম, ঘরে বসে কিছু করব। স্বামীও সমর্থন দিয়েছিলেন; কিন্তু কী করব ভাবছিলাম, তারপর মাথায় এল ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথা। কারণ, যমজ সন্তান রেখে আমার বাইরে গিয়ে চাকরি করা সম্ভব ছিল না। ২০২৩ সালে আমি ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে টুকটাক কাজ শুরু করি; কিন্তু কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম, শেখার আসলে অনেক বাকি। যা শিখেছি তা হয়তো মাত্র ২০ শতাংশ। এরপর উইট ইনস্টিটিউটের বৃত্তির আওতায় বিনা মূল্যে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হয়েছি।’

রেশমা হক

রেশমা হক। স্বামী শাহিদুল হক পেশায় ব্যাংকার। রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা রেশমা হক সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে ২০১৮ সালে ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করলেও বর্তমানে কাজ করছেন ডিজিটাল মার্কেটিং, সার্চইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও), ওয়েবসাইট তৈরিসহ ইউটিউব এসইও বিষয়ে। ১০ বছর বয়সী এক ছেলে ও ৬ বছর বয়সী এক মেয়ের দৈনন্দিন দেখাশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে প্রতি মাসে প্রায় ২৫ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি।

রেশমা হক

রেশমা হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডেটা এন্ট্রি ও ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে কিছুটা কাজ অনলাইনে শিখেছিলাম। খুব ইচ্ছা ছিল অফলাইনে সরাসরি প্রশিক্ষণ নেব। এরপর ফার্মগেটের একটি প্রতিষ্ঠানে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রশিক্ষণ নিই। বাচ্চা সামলে, বাসার কাজকর্ম গুছিয়ে আমাকে ক্লাস করতে আসতে হতো ফার্মগেটে। একসময় দরকার হলো ল্যাপটপের। নিজের কিছু জমানো টাকা ছিল, আর স্বামীকে বললাম কিছু টাকা দিয়ে একটা ল্যাপটপ কিনে দিতে। তখন স্বামী তাঁর অফিস কলিগদের সঙ্গে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলেন। তাঁরাও বললেন, করতে পারলে ভালো। বাসায় বসেই কাজ করা যায়। তখন একটা ল্যাপটপ আমাকে কিনে দিলেন তিনি। সেই ল্যাপটপ দিয়েই ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শুরু করি। এখন আমার মনের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে আমিও কিছু করতে পারি।’

সুমাইয়া আক্তার

সাভারের বাসিন্দা সুমাইয়া আক্তার তিতুমীর কলেজ থেকে ২০১৭ সালে গণিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন এসইও লিড জেনারেশন, ইউটিউব এসইও নিয়ে। প্রতি মাসে আয় করছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সুমাইয়ার বিয়ে হয়েছে প্রায় ১০ বছর আগে। স্বামী মো. মনিরুজ্জামান হাওলাদার পেশায় ব্যবসায়ী হলেও সুমাইয়া নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য ২০২৪ সালে রাজধানীর ফার্মগেটে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। প্রশিক্ষণ শেষে ফাইভার ও আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন তিনি; কিন্তু তার আগেই স্থানীয় এক প্রতিষ্ঠানের কাজ করে আয় করেন পাঁচ হাজার টাকা।

সুমাইয়া আক্তার

সুমাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু করতে পারছি না বলে অনেক দিন কেঁদেছি; কিন্তু ধৈর্য ধরে নিজের দক্ষতা বাড়িয়েছি। কাজ করছি। অনেক সময় অনেকে বলেছে, ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করে কিছু হয় না; কিন্তু আমি সেই কথায় কান না দিয়ে লেগে ছিলাম। ফ্রিল্যান্সিং কাজ মাত্র শুরু করলাম, শেষটা আশা করছি ভালোই হবে।