বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশে নেপথ্যের কারিগর এবং মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সাহসী যোদ্ধা বকুল মোস্তাফা আর নেই। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিজ বাসভবনে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২। তাঁর স্বামী সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার প্রথম আলোকে মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছেন। বকুল মোস্তাফার মৃত্যুতে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশের ডিজিটাল বিপ্লবের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে তাঁর নিজস্ব পরিচয় ছিল দীপ্যমান।
১৯৭১ সালের উত্তাল দিনগুলোতে যখন দেশমাতৃকার টানে বাংলার দামাল ছেলেরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছিলেন, তখন পিছিয়ে ছিলেন না নারীরাও। বকুল মোস্তাফা (তখন নাম ছিল আমেনা সুলতানা বকুল) সেই সময় সরাসরি রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। মোস্তাফা জব্বার বিভিন্ন সময় স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, ‘একাত্তরে আমার স্ত্রী বকুল কেবল ঘরের কাজ নয়, বরং রণাঙ্গনের প্রস্তুতি হিসেবে অস্ত্র চালনা শিখেছিলেন।’ তাঁর এই সাহসী ভূমিকা ওই সময় নারী ক্ষমতায়নের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে।
আশির দশকে বাংলাদেশে যখন কম্পিউটারের যাত্রা শুরু হয়, তখন বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তিবান্ধব করা ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। ‘বিজয়’ বাংলা সফটওয়্যার ও কি–বোর্ড উদ্ভাবনের দীর্ঘ লড়াইয়ে বকুল মোস্তাফার শ্রম ও মেধা জড়িয়ে আছে আষ্টেপৃষ্ঠে। তিনি আনন্দ কম্পিউটার্সের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিজয়ের ফন্ট উন্নয়ন এবং ডেটাবেজ তৈরির কাজে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।
একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবেও বকুল মোস্তাফা ছিলেন অনুকরণীয়। দেশের শুরুর দিকের কম্পিউটার ব্যবসা এবং আইটি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলের মাধ্যমে শিশুদের প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রচেষ্টার বাস্তবায়নে বকুল মোস্তাফা নিরলস কাজ করে গেছেন। তিনি বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে সৃষ্টি নামে কম্পিউটার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ছিলেন।
প্রচারণা থেকে বরাবরই দূরে থাকতেই পছন্দ করতেন এই নারী। তবে তাঁর কর্মক্ষেত্র শিক্ষা থেকে শুরু করে দেশের স্বাধীনতা ও প্রযুক্তি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তিনি দীর্ঘ আট বছর কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে গেছেন। তাঁর প্রয়াণে দেশ এক দেশপ্রেমিক ও প্রযুক্তিবান্ধব ব্যক্তিত্বকে হারাল।