মহাকাশ মানেই রহস্য। আর তাই তো বিচিত্র ধরনের গ্রহের দেখা মেলে সেখানে। এবার বিজ্ঞানীরা এমন এক গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন, যার আকার প্রচলিত সব ধারণা পাল্টে দিয়েছে। বৃহস্পতি গ্রহের সমান গ্রহটি গোল নয়, দেখতে অনেকটা লেবুর মতো। নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে ধরা পড়া অদ্ভুত গ্রহটির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মাইকেল ঝাং জানান, সেখানে এমন একধরনের বায়ুমণ্ডল আছে, যা আগে দেখা যায়নি। কার্বন সাধারণত অক্সিজেন বা নাইট্রোজেনের সঙ্গে মিশে থাকে, কিন্তু সেখানে কার্বন একদম বিশুদ্ধ আকারে রয়েছে, যা প্রায় অসম্ভব। কোনো গ্রহ কীভাবে এমন উপাদানে গঠিত হতে পারে, তা বিজ্ঞানীদের কাছে এখন বড় ধাঁধা।
‘পিএসআর জে২৩২২-২৬৫০বি’ নামের গ্রহটি পৃথিবী থেকে ৭৫০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। গ্যাসযুক্ত গ্রহটি কোনো সাধারণ নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে নয়, বরং একটি পালসার বা নিউট্রন স্টারের চারদিকে ঘুরছে। নিউট্রন স্টার মৃত নক্ষত্রের অতিঘন অংশ, যেখানে পুরো সূর্যের সমান ভর একটি ছোট শহরের আয়তনের মধ্যে সংকুচিত হয়ে থাকে। গ্রহের বিভিন্ন তথ্য দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারসে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, গ্রহটি তার নক্ষত্র থেকে মাত্র ১০ লাখ মাইল দূরে অবস্থিত। এত কাছে থাকায় নিউট্রন স্টারের প্রচণ্ড অভিকর্ষজ বল গ্রহটিকে টেনে লম্বাটে করে ফেলেছে, যা একে একটি নিখুঁত লেবুর আকৃতি দিয়েছে। ফলে সেখানে দিনের বেলায় তাপমাত্রা ২ হাজার ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছালেও রাতে তা ৬৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।
গ্রহটির বায়ুমণ্ডল অন্য যেকোনো এক্সোপ্ল্যানেটের চেয়ে আলাদা। সাধারণত ভিনগ্রহে পানি, মিথেন বা কার্বন ডাই-অক্সাইডের অণু পাওয়া গেলেও এখানে কার্বনের বিরল অণু ও হিলিয়াম পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এর বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ভস্ম বা ঝুলকালির মেঘ রয়েছে। গ্রহের ভেতরে প্রচণ্ড চাপে সেই কার্বন ঘনীভূত হয়ে হিরায় পরিণত হয়।
গ্রহটি বেশ দ্রুত তার নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে। ফলে সেখানে মাত্র ৭ দশমিক ৮ ঘণ্টায় এক বছর পূর্ণ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটস ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী পিটার গাও জানিয়েছেন, গ্রহটি শীতল হওয়ার সময় হয়তো কার্বন ও অক্সিজেন আলাদা হয়ে ভেতরে স্ফটিক আকার ধারণ করেছে। তবে সেখানে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন কেন নেই, সেই রহস্যের জট এখনো খোলেনি।
সূত্র: ডেইলি মেইল