আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের হাতির সংখ্যা গত কয়েক দশকে কমছে। তবে সেখানে হাতি রক্ষায় ক্ষুদ্র মৌমাছির দারুণ এক সম্পর্কের তথ্য জানা গেছে। নানা কারণে হাতির সঙ্গে কৃষকদের সংঘাত বাড়ছে। সেই সংঘাত কমাতে বিজ্ঞানীরা মৌমাছি ব্যবহার করছেন। কেনিয়া, মোজাম্বিক, তানজানিয়া ও গ্যাবনের হাতিগুলো যেসব খামারের চারপাশে মৌমাছি রয়েছে, তা এড়িয়ে চলে। মৌমাছির ঝাঁকের কামড়ের বেদনাদায়ক স্মৃতি মনে রাখে বলে দূরে থাকে হাতিগুলো।
আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষ প্রায়ই হাতির চলাচলের পথ, নদী ও পানির উৎসের কাছে পৌঁছানোর পথকে চাষের জমি হিসেবে পরিবর্তন করে ফেলছেন। আবার হাতির একটি পালের এক রাতের আগমন কয়েক মিনিটের মধ্যে কৃষকদের কয়েক মাসের পরিশ্রম নষ্ট করে দিতে পারে। অনেক গ্রামীণ পরিবারের জন্য ফসল খাদ্য ও আয়ের প্রধান উৎস। যখন হাতিরা খেতের মধ্য দিয়ে যায়, তখন কৃষকদের মারাত্মক ক্ষতি হয়। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটির গবেষক ও বতসোয়ানায় বসবাসকারী বিজ্ঞানী টেম্প অ্যাডামস বলেন, ‘এত বড় একটি প্রাণী ও অনেক সংখ্যক প্রাণীর সঙ্গে বসবাস করা সত্যিই কঠিন। সেখানকার কৃষকদের জন্য সকালে উঠে তাদের উঠানে হাতি দেখা অস্বাভাবিক নয়। মানুষকে হাতির সঙ্গে সংঘাতমুক্তভাবে বসবাস করতে সাহায্য করছি আমরা।’
বতসোয়ানায় হাতির সংখ্যা বেশি হলেও মৌমাছির সংখ্যা কম। পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানীরা বন্য হাতিদের কাছে মৌমাছির গুঞ্জন রেকর্ড করে বাজায়। দেখা যায়, কিছু হাতি মৌমাছির গুঞ্জন শুনে দ্রুত ফিরে যায়, আবার কিছু হাতি সেখানেই থেকে যায়। বিজ্ঞানী অ্যাডামস বলেন, তথ্য বলছে মৌমাছির শব্দে মাঝারি বা শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখানো হাতির সংখ্যা বেশি ছিল। নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার তুলনায় ৫৩ দশমিক ৩ শতাংশ হাতির পরিবার গুঞ্জন শুনে প্রতিক্রিয়া দেখায়। মৌমাছির শব্দ বাজানোর সময় চারটি হাতির দল প্রায় ৬৫ ফুটের বেশি দূরে সরে যায়। বতসোয়ানার অনেক হাতি মৌমাছির কামড়ের অভিজ্ঞতা পায়নি, কিন্তু যারা পেয়েছিল, তারা দ্রুত পালিয়ে যায়।
উত্তর বতসোয়ানায় বন্য মৌমাছির সংখ্যা কম। কম মৌমাছির কারণে হাতির কামড় খাওয়ার সম্ভাবনা কম। সেখানকার শুষ্ক পরিবেশ, স্বল্প ফুল ফোটার মৌসুম, সীমিত কৃষিকাজ ও নির্ভরযোগ্য পানির উৎস না থাকার কারণে মৌমাছি কম রয়েছে। মৌমাছির উপস্থিতি বাড়ানোর মাধ্যমে হাতিকে লোকালয় থেকে দূরে নেওয়ার কাজ চলছে সেখানে। হাতি দূরে থাকে বলে কৃষকদের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে।
সূত্র: আর্থ ডটকম