যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সঙ্গে মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে থাকা গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশযান ম্যাভেনের যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দীর্ঘ ১১ বছর সফল অভিযানের পর সম্প্রতি মহাকাশযানটির সঙ্গে পুরোপুরি যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে নাসা। বিজ্ঞানীরা এখন জরুরি ভিত্তিতে সমস্যা নির্ণয় ও যোগাযোগ পুনরুদ্ধার করার জন্য কাজ করছেন। নাসা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। সংকেত হারানোর আগে ম্যাভেনের সব সাব-সিস্টেম স্বাভাবিকভাবে কাজ করছিল।
নাসার তথ্যমতে, মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে থাকা যেকোনো মহাকাশযানের সঙ্গে স্বল্প সময়ের জন্য যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হওয়া নিয়মিত ঘটনা। তবে ম্যাভেন মহাকাশযানটি মঙ্গল গ্রহের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসার পরেও কোনো যোগাযোগ স্থাপন করা যাচ্ছে না। ২০১৩ সালে উৎক্ষেপণ করা ম্যাভেন ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করে। এর মূল লক্ষ্য ছিল মঙ্গল গ্রহের ওপরের বায়ুমণ্ডল ও সৌর বাতাস নিয়ে গবেষণা করা। ম্যাভেন বেশ কিছু নতুন তথ্য গত ১১ বছরে সংগ্রহ করেছে। ম্যাভেন প্রমাণ করেছে সূর্যের প্রভাবে সৌর বাতাস ধীরে ধীরে মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলকে মহাশূন্যে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এই বায়ুমণ্ডল ক্ষয়ের ফলেই মঙ্গল গ্রহ একসময়কার উষ্ণ ও আর্দ্র গ্রহ থেকে আজকের শুষ্ক ও শীতল গ্রহে পরিণত হয়েছে।
মঙ্গল গ্রহের একটি অদৃশ্য চুম্বকীয় লেজ আবিষ্কার করেছে ম্যাভেন। এই লেজ সৌর বাতাসের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার কারণে বেঁকে যায়। ম্যাভেন মঙ্গল গ্রহের প্রোটন অরোরা নামে এক বিরল ধরনের অরোরাও শনাক্ত করেছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। ম্যাভেন শুধু বৈজ্ঞানিক গবেষণা নয়, মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে থাকা রোভার কিউরিওসিটি ও পারসিভিয়ারেন্সের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ রিলে স্টেশন হিসেবে কাজ করছিল। ম্যাভেনের মাধ্যমে রোভার পৃথিবী থেকে নির্দেশাবলি পেত ও তাদের সংগৃহীত তথ্য পৃথিবীতে পাঠাত।
ম্যাভেনের সংকেত বিচ্ছিন্ন হলেও, নাসার আরও দুটি কার্যকর অরবিটার মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘুরছে। ২০০৫ সালে উৎক্ষেপণ করা মার্স রিকনসাঁস অরবিটার মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডল নিয়ে গবেষণা করছে। অন্যদিকে ২০০১ সালে উৎক্ষেপণ করা মার্স ওডিসি অরবিটার মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে থাকা মহাকাশযান, যা গ্রহটিতে ভূতাত্ত্বিক এবং জলবায়ুবিষয়ক গবেষণা করছে।
সূত্র: এনডিটিভি