
প্রাণীর অঙ্গ প্রতিস্থাপনে চিকিৎসকদের অভাবনীয় সাফল্য
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন প্রায় ১৩ জন মানুষ উপযুক্ত অঙ্গের অভাবে মারা যান। এই সংকট মেটাতে বিজ্ঞানীরা মানুষের পরিবর্তে শূকরের অঙ্গ ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন। এ বছরের জানুয়ারিতে টিম অ্যান্ড্রুজ নামে এক রোগীর শরীরে জিন-সম্পাদিত শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। তিনি ২৭১ দিন এই অঙ্গ নিয়ে বেঁচে ছিলেন, যা একটি নতুন রেকর্ড। শূকরের বিপাকপ্রক্রিয়া, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও অঙ্গের আকার মানুষের সঙ্গে অনেকটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ। মানুষের শরীর যাতে প্রাণীর অঙ্গ প্রত্যাখ্যান না করে, সে জন্য দাতা প্রাণীর ডিএনএ-তে বিশেষ পরিবর্তন আনা হয়।
তৃতীয় আন্তনাক্ষত্রিক পর্যটকের আগমন
ধূমকেতু ৩আই/অ্যাটলাস এ বছর আমাদের সৌরজগতে প্রবেশ করে। ২০১৭ সালের ওমুয়ামুয়া এবং ২০১৯ সালের বরিসভের পর ২০২৫ সালে আমাদের সৌরজগতে প্রবেশ করেছে তৃতীয় আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু ধূমকেতু ৩আই/অ্যাটলাস। এটি ঘণ্টায় ১ লাখ ৩৭ হাজার মাইল বেগে ভ্রমণ করছে। হাবল টেলিস্কোপের তথ্যমতে, এর নিউক্লিয়াসে নিকেল থাকলেও কোনো লোহা নেই, যা মহাকাশ বিজ্ঞানে অত্যন্ত বিরল। এ ছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই–অক্সাইড পাওয়া গেছে। ২০২৬ সালের মার্চ মাসে বৃহস্পতি গ্রহকে অতিক্রম করে এটি চিরতরে আমাদের সৌরজগৎ ছেড়ে চলে যাবে।
ডায়ার উলফ শাবক তৈরি এবং বিলুপ্ত প্রাণীকে ফিরিয়ে আনার বিতর্ক
প্রায় ১০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ডায়ার উলফ নামের প্রাগৈতিহাসিক নেকড়েকে ফিরিয়ে আনার দাবি করেছে বায়োটেক স্টার্টআপ কলোসাল বায়োসায়েন্স। বিজ্ঞানীরা ১৩ হাজার বছরের পুরোনো দাঁত থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে আধুনিক ধূসর নেকড়ের জিনোমে পরিবর্তন এনেছেন। এভাবে জন্ম নিয়েছে তিনটি শাবক রমুলাস, রেমাস ও খালিসি। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন এগুলো আসল ডায়ার উলফ নয়, বরং জিন সম্পাদিত সাধারণ নেকড়ে। এ ছাড়া বিলুপ্ত প্রাণী না ফিরিয়ে বর্তমানে বিপন্ন প্রাণীদের রক্ষার দিকে অর্থ ব্যয়ের পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।
টি-রেক্সের পরিচয় নিয়ে নতুন বিতর্ক
দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ এক ডাইনোসরের হাড়কে কিশোর টি-রেক্স মনে করা হতো। নতুন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে সেগুলো আসলে একটি আলাদা প্রজাতি ন্যানো টাইরানুস ল্যানসেনসিস। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ বছর বয়সেই এই ডাইনোসরটির হাড়ের বৃদ্ধি থেমে গিয়েছিল। অথচ টি-রেক্সের তুলনায় এটি আকারে অনেক ছোট এবং এর সামনের পাগুলো ছিল বেশ লম্বা ও শক্তিশালী। এই আবিষ্কার টি-রেক্সের বৃদ্ধি এবং বিবর্তন নিয়ে আগের ধারণাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
ডেনিসোভান মানুষের অবয়ব উন্মোচন
২০১০ সালে আবিষ্কৃত প্রাচীন মানব প্রজাতি ডেনিসোভানদের সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান ছিল সীমাবদ্ধ। কিন্তু ২০২৫ সালে ড্রাগন ম্যান নামক একটি খুলিকে ডেনিসোভানদের বলে শনাক্ত করা হয়েছে। প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার বছরের পুরোনো এই খুলির ডিএনএ এবং প্রোটিন বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ডেনিসোভানদের সঙ্গে এর সংযোগ খুঁজে পেয়েছেন। এই আবিষ্কার প্রমাণ করে যে ডেনিসোভান, নিয়ান্ডারথাল এবং আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষেরা আগে যা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়েও অনেক আগে প্রায় ১০ লাখ বছর আগে একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল।
এআই চ্যাটবটের সঙ্গে মানুষের নতুন ও উদ্বেগজনক সম্পর্ক
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই চ্যাটবটগুলো মানুষের কথোপকথন নকল করতে এতটাই দক্ষ হয়ে উঠেছে যে মানুষ এখন এগুলোর মধ্যে আবেগময় সমর্থন, রোমান্টিক সম্পর্ক, এমনকি থেরাপিও খুঁজছে। তবে মানুষের জীবনে এই প্রযুক্তির প্রবেশ অনেক ক্ষেত্রে আশঙ্কাজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক মানুষ তাদের নিঃসঙ্গতা কাটাতে এআইকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। এমআইটি গবেষকেরা একটি অনলাইন কমিউনিটি বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, অনেকে এআইয়ের কাছ থেকে ২৪ ঘণ্টা মানসিক সমর্থন পাওয়ার দাবি করলেও এটি মানুষের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর আবেগময় নির্ভরশীলতা তৈরি করছে। এআইয়ের ভুল ব্যবহারের এক করুণ উদাহরণ হিসেবে ১৬ বছর বয়সী কিশোর অ্যাডাম রেইনের আত্মহত্যার কথা জানা যায়। তার বাবা-মা দেখেছেন চ্যাটজিপিটি নিজেকে বিশ্বাসভাজন বন্ধু হিসেবে উপস্থাপন করে তাকে একাকী থাকতে উৎসাহিত করেছিল এবং আত্মহত্যার নোট লিখে দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিল। এই ঘটনায় চ্যাটবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
প্রায় ২ কোটি বছরের পুরোনো প্রোটিন উদ্ধার
প্রাচীন ডিএনএ আমাদের অতীত সম্পর্কে অনেক তথ্য দিলেও তা সময়ের সঙ্গে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু প্রোটিন অনেক বেশি স্থিতিশীল। এ বছর বিজ্ঞানীরা প্রায় ২ কোটি বছর পুরোনো প্রোটিন উদ্ধার করে রেকর্ড গড়েছেন। কানাডার আর্কটিক অঞ্চলের প্রচণ্ড ঠান্ডায় সংরক্ষিত একটি বিলুপ্ত গন্ডারের দাঁতের এনামেল থেকে এই প্রোটিন সংগ্রহ করা হয়েছে। এই অবশেষগুলো ২ কোটি ১০ লাখ থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ বছরের পুরোনো। এর আগে সবচেয়ে পুরোনো প্রোটিন ছিল ৩৫ লাখ বছরের। এই আবিষ্কার প্রমাণ করে ডিএনএ-এর চেয়েও প্রাচীন ইতিহাস জানতে প্রোটিন বিশ্লেষণ অনেক বেশি কার্যকর। গবেষকেরা মনে করছেন, হিমশীতল পরিবেশে সংরক্ষিত প্রোটিন ব্যবহারের মাধ্যমে ভবিষ্যতে হয়তো ডাইনোসরদের সময়কার বিবর্তনীয় সম্পর্ক আরও স্পষ্টভাবে বোঝা সম্ভব হবে।
সূত্র: স্মিথসোনিয়ান