মহাকাশ থেকে তোলা ছবি কীভাবে আমাদের অতি পরিচিত পার্থিব জীবন আর অসীম মহাবিশ্বের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারে, তার এক অনন্য নমুনা প্রকাশ করেছেন নভোচারীরা। পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ওপরে থাকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে তোলা বিরল সেই ছবিতে একই সঙ্গে ধরা পড়েছে রহস্যময় অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি ও পৃথিবীর দিগন্তে অরোরা বা মেরুজ্যোতির মৃদু আভা। নাসার নভোচারী ডন পেটিট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এই বিস্ময়কর ছবি শেয়ার করেছেন।
ছবির বাঁকানো দিগন্তরেখা বরাবর যে উজ্জ্বল আলোকবলয় দেখা যাচ্ছে, তা মূলত অরোরা ও এয়ারগ্লোর ফলাফল। সূর্য থেকে আসা শক্তিশালী ইলেকট্রন ও প্রোটন কণা যখন পৃথিবীর উপরিভাগের বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন পরমাণুর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখন একধরনের শক্তির বিচ্ছুরণ ঘটে। সেই ঘটনা নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো হিসেবে আমাদের চোখে ধরা দেয়। মহাকাশ থেকে এই দৃশ্যকে মনে হয় যেন পৃথিবীর অন্ধকার দিকটিকে জড়িয়ে থাকা এক রঙিন পর্দা।
ছবিতে থাকা বিন্দু বিন্দু আলোর ছোট-বড় নেটওয়ার্ক মূলত মানুষের জনবসতি বা শহরের আলো। শীতের রাতের এই দৃশ্য বেশ সুন্দর দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা এই কৃত্রিম আলোকচিত্র বিশ্লেষণ করে জনবসতির ধরন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের চিত্র বুঝতে পারেন। তবে পরিবেশবিজ্ঞানীরা এই ছবি থেকে আলোক দূষণ এবং এটি কীভাবে বন্য প্রাণী ও মানুষের ঘুমের চক্রের ক্ষতি করছে, তা নিয়েও গবেষণা করেন।
ছবির সবচেয়ে চমকপ্রদ অংশ হলো পৃথিবীর উজ্জ্বল বলয়ের ঠিক পাশেই থাকা অস্পষ্ট কিন্তু দীর্ঘাকার অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সবচেয়ে কাছের বড় সর্পিলাকার অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫ লাখ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। মহাকাশ স্টেশনের মতো নিম্ন কক্ষপথ থেকে এত দূরের কোনো বস্তুর স্পষ্ট ছবি তোলা অত্যন্ত কঠিন। বিজ্ঞানীদের ধারণা, কয়েক শ কোটি বছর পর আমাদের মিল্কিওয়ে ও অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি একে অপরের সঙ্গে মিশে যাবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া