প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি বোতলের পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা থাকে
প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি বোতলের পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা থাকে

প্রতিদিন বোতলে পানি পান করলে যে ক্ষতি হয়

আমাদের ব্যস্ত জীবনে, বিশেষ করে শহুরে জীবনে আমরা অনেকেই নিয়মিত বোতলে পানি পান করে থাকি। তবে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি বোতলের পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা থাকে। এসব খালি চোখে দেখা যায় না। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন প্লাস্টিকের বোতলে থাকা পানি পান করেন তারা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা নিজের শরীরে প্রবেশ করাচ্ছেন।

কানাডার কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরাল শিক্ষার্থী সারা সাজেদি মানুষের শরীরের ওপর প্লাস্টিকের বোতলের প্রভাব নির্ধারণের জন্য ১৪০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র পর্যালোচনা করেছেন। তার গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ খাবার ও পানীয়ের মাধ্যমে বছরে গড়ে ৩৯ হাজার থেকে ৫২ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গ্রহণ করে থাকে। তবে যাঁরা নিয়মিত বোতলজাত পানি পান করেন, তাঁরা বছরে অতিরিক্ত আরও প্রায় ৯০ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা শরীরে প্রবেশ করান। সাজেদি বলেন, জরুরি অবস্থায় প্লাস্টিকের বোতলের পানি পান করা ঠিক আছে, কিন্তু তা দৈনন্দিন জীবনের অংশ হওয়া উচিত নয়। মানুষের শরীরে এর তাৎক্ষণিক প্রভাব দেখা না দিলেও দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

মাইক্রোপ্লাস্টিক হলো প্লাস্টিকের এমন কণা যার আকার ১ মাইক্রোমিটার বা ১ মিলিমিটারের ১০০০ ভাগের এক ভাগ। এসব ৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এর চেয়েও ছোট কণাকে বলা হয় ন্যানো প্লাস্টিক। এই কণা খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু বোতল তৈরি, সংরক্ষণ, পরিবহনের সময় এগুলো অনবরত তৈরি হতে থাকে। নিম্নমানের প্লাস্টিক সূর্যালোক, তাপমাত্রার পরিবর্তন ও নাড়াচাড়ার কারণে খুব দ্রুত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় ভেঙে যায়। অন্যান্য প্লাস্টিক কণা খাদ্যচক্রের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলেও প্লাস্টিকের বোতল থেকে আসা কণাগুলো সরাসরি পানির সঙ্গে মিশে সরাসরি আমাদের পাকস্থলীতে চলে যায়। একবার শরীরের ভেতরে প্রবেশ করার পর এই সূক্ষ্ম প্লাস্টিক কণাগুলো রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পৌঁছাতে পারে। এটি শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে। কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মুখে ঠেলে দেয়। এর ফলে হরমোন ব্যবস্থায় ব্যাঘাত, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে। এমনকি বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের সঙ্গেও এর যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গেছে।

মাইক্রো ও ন্যানো প্লাস্টিক শনাক্ত করার জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি থাকলেও সেগুলোর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিছু পদ্ধতি অত্যন্ত ক্ষুদ্র কণা শনাক্ত করতে পারলেও রাসায়নিক গঠন বলতে পারে না। আবার কিছু পদ্ধতি গঠন বিশ্লেষণ করতে পারলেও ক্ষুদ্রতম কণা শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়। এ ছাড়া নির্ভুল পরীক্ষার সরঞ্জাম অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় বিশ্বের সব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই গবেষণা চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

সূত্র: ওয়্যারড