Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনায় মানুষ কেন ঘরে থাকছে না

ছবি: রয়টার্স

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখে সেই কত যুগ আগে মিনতি করেছিলেন, ‘ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।’ বিশ্বব্যাপী আজ করোনাভাইরাস যখন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে, তখনো একই আকুতি করা হচ্ছে। নাগরিকদের প্রতি এই আকুতি জানাচ্ছে রাষ্ট্র। অবরুদ্ধ অবস্থা (লকডাউন) ঘোষণা করা হচ্ছে। পরামর্শ দিচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজের ঘরে থাকতে।

কিন্তু কিছু মানুষ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সংকল্প’ কবিতার মতোই পণ করেছেন, ‘থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে।’ এমন দুর্যোগের সময় এই মানুষেরা কেন এমন করছেন, তার মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

আরে, কিছু হবে না
কানাডার সাসকাচুয়ানের রেজিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গর্ডন আসমুন্ডসন করোনাভাইরাস বিষয়ে মানুষের প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। সেখানে তিনি তিন ধরনের প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। একদল অতি উদ্বিগ্ন, একদল একেবারে নিরাসক্ত আর মাঝামাঝি অবস্থানে আছে আরেক দল।

অতি উদ্বিগ্ন ব্যক্তিরা জিনিস মজুত করতে করতে দোকান খালি করে ফেলেছেন। মাঝের অবস্থানে থাকা লোকজন যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু করছেন। আর একেবারে নিরাসক্তরা ‘আরে, কিছু হবে না’ বলে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁরা মনে করেন, এই ভাইরাসে তাঁরা আক্রান্ত হবেন না। ফলে সামাজিক মেলামেশা বন্ধ রাখা বা ঘরের বাইরে বের না হওয়ার কোনো যুক্তি তাঁরা পান না। এ ধরনের উদাসী মানুষের জন্য করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে এই অধ্যাপক মনে করেন।

আমি তো অসহায় নই
মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করে জরুরি প্রয়োজন নয়, এমন জিনিসও কিনছেন কেন? কারণ, এ ধরনের মানুষ আসলে নিজেকে অসহায় মনে করছেন। কিন্তু বাইরে বোঝাতে চাইছেন—আমি অসহায় নই। আমার কাছে প্রয়োজনীয় সব আছে। তাই নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নানা জিনিস মজুত করে নিজেকে আশ্বস্ত করতে চাইছেন।

আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড কোয়ালিটির পরিচালক ভেইল রাইট মনে করেন, নিজের অসহায়ত্ব ঢাকতে মানুষ আসলে নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখাচ্ছেন। তাঁরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, পার্কে যাচ্ছেন, সমুদ্রসৈকতে যাচ্ছেন, আড্ডা দিচ্ছেন—যেন তিনি পাত্তা না দিলেই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মিথ্যা হয়ে যাবে।

এটা তো আমাদের সমস্যা না
করোনাভাইরাস প্রথম হানা দেয় চীনে। তো কিছু মানুষ তখন মনে করেছেন, চীন তো অনেক দূরে, আমার এখানে এই ভাইরাস আসবে কীভাবে? আমার সতর্ক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু তাঁরা একবারও চিন্তা করেননি, বিশ্বায়নের এই যুগে আমরা যখন একটা বিশ্বগ্রামের বাসিন্দা, তখন একেবারে কাছে চলে আসতে এই ভাইরাসের আর কত সময় লাগব?

ক্লিনিক্যাল মনোবিদ ও ‘দ্য সাইকোলজি অব পেনডেমিকস’ বইয়ের লেখক স্টিভেন টেইলর বলেন, একেবারে নিজের আশপাশের কেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগপর্যন্ত এ ধরনের মানুষ এটাকে সমস্যা হিসেবে মনে করতে চান না। ফলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নীতি মানেন না। নিজের দেশে কেউ আক্রান্ত হয়েছে জানলেও বিপদ যতক্ষণ না তাঁদের ওপরে এসে পড়ে, ততক্ষণ তাঁরা নিয়মের জালে নিজেদের জড়াতে চান না।

করোনা-করোনা শুনে ক্লান্ত
দুনিয়াজুড়েই এখন করোনা-আতঙ্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুকলে করোনার কথা, বন্ধু-স্বজনকে ফোন করলে করোনার কথা, খবর পড়ার জন্য পত্রিকা বা ওয়েবসাইট খুললে করোনার কথা—সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতিতে কিছু মানুষ অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়ে। অতশত না ভেবে নিত্যদিনের রুটিনে নিজেকে ধরে রাখতে চান তাঁরা।

এই প্রবণতা তরুণদের মধ্যে বেশি বলে মন্তব্য করেন ক্লিনিক্যাল মনোবিদ স্টিভেন টেইলর। তাঁর মতে, এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় হলো—বারবার বলা হচ্ছিল তরুণদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। এই তথ্য শুনে তরুণেরা ধরেই নিয়েছে তাঁরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবেন না। তাই দিব্যি তাঁরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের হাত ধরে যে পরিবারের অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন, সে কথা তাঁরা ভাবছেন না।

নিঃসঙ্গতা কারও পছন্দ না
ছোটবেলা থেকে আমরা পড়ে এসেছি—মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ একা থাকতে পারে না। অথচ করোনাভাইরাসকে দেখা হচ্ছে, কমিউনিটি ডিজিজ হিসেবে। অর্থাৎ, এটি সমাজের একজনের কাছ থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করে বিচ্ছিন্ন থাকতে বলা হয়। মানুষ এতটা দিন নিঃসঙ্গ আর বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে ভয় পায়। বিষণ্নতা তাদের চেপে ধরে। দম আটকে আসা পরিস্থিতি থেকে তাঁরা মুক্ত হতে বাইরে চলে যান।