বিশ্বের সবচেয়ে বেঁটে ১০ পুরুষ

মানুষ নানা কারণে অস্বাভাবিক বেঁটে হয়ে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডিএনএ বা জিনগত ত্রুটির কারণে এমনটি হয়ে থাকে। পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবেও এ সমস্যা হতে পারে। জটিল অসুখের কারণেও অনেক সময় মানুষের বৃদ্ধি কম হতে পারে। এর অর্থ হলো, শারীরিক বৃদ্ধির ওপর ব্যক্তির নিজের কোনো হাত নেই। তবে উচ্চতায় ছোট হলেই মানুষ মনমানসিকতায় ছোট হবে, এমন কোনো কথা নেই। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ও জিনিউজ থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেঁটে ১০ পুরুষ সম্পর্কে একনজরে জেনে নেওয়া যাক।

চন্দ্র বাহাদুর ডাঙ্গি

চন্দ্র বাহাদুর ডাঙ্গি
ছবি: গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ওয়েবসাইট

নেপালের চন্দ্র বাহাদুর ডাঙ্গি ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বেঁটে। তাঁর উচ্চতা ২১ দশমিক ৫১ ইঞ্চি। ১৯৩৯ সালের ৩০ নভেম্বর তিনি নেপালের সালিয়ান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে খাটো মানুষ হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নেন। জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন রিমখোলি গ্রামে। সাধারণ জীবন যাপন করতেন। স্বভাবে শান্ত, নম্র ও হাসিখুশি ছিলেন। জীবনের শেষভাগে তিনি বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন এবং অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। ৭৫ বছর বয়সে ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসিত আমেরিকান সামোয়ার পাগো পাগোতে মারা যান চন্দ্র বাহাদুর ডাঙ্গি।

গুল মোহাম্মদ

চন্দ্র বাহাদুর ডাঙ্গির আগে বিশ্বের সবচেয়ে খর্বকায় মানুষের রেকর্ড ছিল গুল মোহাম্মদের দখলে। ভারতের নয়াদিল্লিতে ১৯৫৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণকারী গুলের উচ্চতা ছিল ২২ ইঞ্চি। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের জন্য ১৯৯০ সালের ১৯ জুলাই দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে তাঁর উচ্চতা মাপা হয়েছিল। তখন তাঁর ওজন ছিল ১৭ কেজি। ২০১২ সালে চন্দ্র বাহাদুরের দখলে যাওয়ার আগপর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে খাটো মানুষের রেকর্ড গুল মোহাম্মদের ছিল। দীর্ঘদিন হাঁপানি ও ব্রঙ্কাইটিসে ভোগার পর ১৯৯৭ সালে ৪০ বছর বয়সে তিনি দিল্লিতে মারা যান।

জুনরি বালাউইং

জুনরি বালাউইং

বিশ্বের তৃতীয় খর্বকায় মানুষ ছিলেন ফিলিপাইনের জুনরি বালাউইং। তাঁর উচ্চতা ছিল মাত্র ২৩ দশমিক ৬২ ইঞ্চি। ২০১২ সালে তাঁর ১৮তম জন্মদিনে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস জুনরিকে এই উচ্চতার স্বীকৃতি দিয়েছিল। তাঁর জন্ম জাম্বোয়াঙ্গা দেল নর্তে প্রদেশের সিন্দানগানে ১৯৯৩ সালের ১২ জুন। এক বছর বয়সের পর তাঁর বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ২০২০ সালের ২৮ জুলাই তিনি মারা যান।

ইস্তভান তোথ

ইস্তভান তোথ (হাঙ্গেরি) একসময় বিশ্বের সবচেয়ে খাটো ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর উচ্চতা ছিল মাত্র ২৬ ইঞ্চি (৬৫ সেমি)। তাঁর উচ্চতা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। ধারণা করা হয়, হরমোনজনিত কারণে তাঁর শারীরিক বৃদ্ধি হয়নি। ইস্তভান ২০১১ সালের মে মাসে ৪৮ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

আফশিন ঘাদরজাদেহ

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে খাটো সচল ব্যক্তির তকমা ইরানের আফশিন ঘাদরজাদেহের দখলে। তাঁর উচ্চতা ২৫ দশমিক ৬৯ ইঞ্চি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাঁকে এ স্বীকৃতি দেয়। তাঁর আগে এই রেকর্ড ছিল কলম্বিয়ার নাগরিক ডিজে এডওয়ার্ডের। আফশিন ২০০২ সালের ১৩ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন।

খাগেন্দ্র থাপা মাগা  

খাগেন্দ্র থাপা মাগা

নেপালের খাগেন্দ্র থাপা মাগার উচ্চতা ২৬ দশমিক ৩৭ ইঞ্চি। ২০১১ সালে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে খাটো সচল ব্যক্তির তকমা পেয়েছিলেন। জন্মগত কারণে তিনি খাটো ছিলেন। ২০১১ সালের জুনে তিনি এই খেতাব ফিলিপাইনের জুনরি বালাউইংয়ের কাছে হারান। পরের বছর তাঁর এই স্বীকৃতি চলে যায় ফিলিপাইনের জুনরি বালাউইংয়ের দখলে। নেপালের বাগলুং জেলায় ১৯৯২ সালের ৪ অক্টোবর জন্মগ্রহণকারী খাগেন্দ্র ২৭ বছর বয়সে ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি মারা যান।

ইউ-চিহ

খাগেন্দ্র থাপা মাগার আগে বিশ্বের সবচেয়ে খাটো ব্যক্তি ছিলেন ইউ-চিহ। ২০০৯ সালে এ খেতাব পেয়েছিলেন। তবে তাইওয়ানের এই ব্যক্তি ছিলেন অচল। তিনি তাইওয়ানের তাইপেই শহরে বসবাস করেন। ২০১০ সালে ইউ-চিহের কাছ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে খাটো মানুষের খেতাব কেড়ে নেন খাগেন্দ্র।

এডওয়ার্ড নিয়ো হার্নান্দেজ

এডওয়ার্ড নিয়ো হার্নান্দেজ

এডওয়ার্ড নিয়ো হার্নান্দেজকে ২০১০ সালের মার্চে বিশ্বের সবচেয়ে খাটো মানুষ ঘোষণা করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। তখন তাঁর উচ্চতা ছিল ২৭ দশমিক ৬৪ ইঞ্চি। এডওয়ার্ড নিয়োর জন্ম ১৯৮৬ সালের ১০ মে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আফশিন ঘাদরজাদেহ তাঁর রেকর্ড ভেঙে দেন।

ডর বাহাদুর খাপাঙ্গি

ডর বাহাদুর খাপাঙ্গি

নেপালের ডর বাহাদুর খাপাঙ্গিকে ২০২২ সালের মে মাসে বিশ্বের সবচেয়ে খাটো জীবিত কিশোরের স্বীকৃতি দেয় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। তখন তাঁর উচ্চতা ছিল ৭৩ দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটার। বয়স ১৭ বছর। ডর বাহাদুর ২০০৪ সালের ১৪ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কৃষক মা–বাবার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। রাজধানী কাঠমান্ডুর দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সিন্ধুলি জেলায় বসবাস করেন।

হে পিংপিং

হে পিংপিং একটা সময় পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে খাটো ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর উচ্চতা ছিল ২৯ ইঞ্চি। চীনের এই ব্যক্তি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখাতে পারেননি। তবে তিনি এই রেকর্ডে নথিভুক্ত হওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। এ জন্য তিনি ইউরোপ সফর করেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে। ২০১০ সালের মার্চে তাঁর মৃত্যু হয়। তখন তিনি টেলিভিশন শোতে অংশগ্রহণের জন্য ইতালির রাজধানী রোমে অবস্থান করছিলেন। সেখানে বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।