তিন সন্তান নিয়ে প্রায় চার বছর পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন নিউজিল্যান্ডের টম ফিলিপস। পুলিশ হন্যে হয়ে পলাতক এই বাবাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। আজ সোমবার পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হলেন।
নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ বলেছে, নর্থ আইল্যান্ডের ওয়াইকাটো অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে টম ফিলিপসের বন্দুকযুদ্ধ হয়।
সাবেক সঙ্গীর সঙ্গে ঝগড়ার জেরে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তিন সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যান টম ফিলিপস। এ ঘটনা পুরো দেশের মনোযোগ কাড়ে, বিশেষ করে ওয়াইকাটো এলাকায় ও মারোকোপা শহরে। ফিলিপস এসব এলাকায় লুকিয়ে থাকতেন বলে সন্দেহ ছিল পুলিশের।
পুলিশ বলেছে, একটি দোকান ভেঙে সম্ভাব্য চুরির ঘটনায় সোমবার ভোরবেলা তাদের ডাকা হয়। দুই ব্যক্তি চার চাকার একটি বাইকে করে সেখানে এসেছিলেন।
পরিবারটি প্রায় চার বছর পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে ছিল। যদিও এ সময় তাদের বেশ কয়েকবার দেখা গেছে। যেমন গত মাসে সিসিটিভি ক্যামেরায় স্পষ্টভাবে ফিলিপস ও তাঁর এক সন্তানকে একটি দোকানে ঢুকতে দেখা যায়।
পুলিশ বলেছে, একটি দোকান ভেঙে সম্ভাব্য চুরির ঘটনায় আজ সোমবার ভোরবেলা তাদের ডাকা হয়। দুই ব্যক্তি চার চাকার একটি বাইকে করে সেখানে এসেছিলেন।
নিউজিল্যান্ড পুলিশের ভারপ্রাপ্ত উপকমিশনার জিল রজার্স বলেন, ‘আমাদের কাছে আগে থেকেই তথ্য ছিল, ওই এলাকায় টম ফিলিপসকে দেখা গেছে। তাই (ফোন পাওয়ার পর) ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়।
পুলিশ চার চাকার কোয়াড বাইকটি থামাতে রোড স্পাইক ব্যবহার করে। সেগুলো এড়াতে বাইকটি সড়ক থেকে সরে গিয়ে একটি ঢালু জায়গার দিকে চলে যাচ্ছিল।
আমি আজ সন্ধ্যায় অত্যন্ত স্বস্তির সঙ্গে আপনাদের জানাতে পারছি, বিকেল সাড়ে চারটার ঠিক পরপর আমরা টম ফিলিপসের বাকি সন্তানদের খুঁজে পেয়েছি।জিল রজার্স, নিউজিল্যান্ড পুলিশের ভারপ্রাপ্ত উপকমিশনার
পুলিশের মুখোমুখি হলে ফিলিপস একটি রাইফেল দিয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তার মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালান। গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা মাটিতে পড়ে যান এবং সহায়তার জন্য ফোন করেন।
রজার্স বলেন, ‘পুলিশের আরেকটি টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে অভিযুক্ত ফিলিপসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন।’
গুলিবিদ্ধ পুলিশ কর্মকর্তাকে হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে আনা হয়, তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
ওয়াইকাটো টাইমসে প্রকাশিত ঘটনাস্থলের ছবিতে দেখা যায়, ফিলিপস সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন, কয়েক মিটার দূরে একটি ঢালু জায়গায় একটি রাইফেল পড়ে আছে।
পুলিশের গাড়িগুলোতে বেশ কয়েকটি গুলির ছিদ্র দেখা যাচ্ছে।
রজার্স জানিয়েছেন, ঘটনার সময় ফিলিপসের সঙ্গে একটি শিশু ছিল। সে অক্ষত আছে। তাকে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে।
ঘটনার পর পুলিশ জরুরি ভিত্তিতে বাকি দুই শিশুকে খুঁজছিল। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, পুলিশ শিশু দুটিকে খুঁজে পেয়েছে।
পুলিশের উপকমিশনার জিল রজার্স বলেন, ‘আমি আজ সোমবার সন্ধ্যায় অত্যন্ত স্বস্তির সঙ্গে আপনাদের জানাতে পারছি, বিকেল সাড়ে চারটার ঠিক পরপর আমরা টম ফিলিপসের বাকি সন্তানদের খুঁজে পেয়েছি।’
শিশু দুটি সুস্থ আছে জানিয়ে রজার্স আরও বলেন, ফিলিপসের যে সন্তানটি পুলিশের হেফাজতে ছিল, সে বাকি দুজনকে খুঁজে বের করতে সহায়তা করেছে।
টম ফিলিপসের এমন পরিণতি কারও কাম্য ছিল না বলেও মন্তব্য করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
শিশু দুটি সুস্থ আছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ফিলিপসের যে সন্তানটি পুলিশের হেফাজতে ছিল, সে বাকি দুজনকে খুঁজে বের করতে সহায়তা করেছে।
তবে এই মামলা সম্পর্কে জানেন—এমন দুই পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরেই কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা ছিল, ফিলিপসের ঘটনা হয়তো বন্দুকযুদ্ধের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
পুলিশের ধারণা, অনেকে ফিলিপসকে পালিয়ে থাকতে সহায়তা করেছেন। লুকিয়ে থাকার সময় তাঁকে খাবার ও আশ্রয় দিয়েছেন।
পুলিশের কাছে মাঝেমধ্যে শিশুদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে নানা খবর আসত। শিশুদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে পড়তে পারে, এই আশঙ্কা থেকে পুলিশ পরিবারটিকে খুঁজে বের করতে পূর্ণ শক্তির প্রয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
তবে গত কয়েক সপ্তাহে খুব সম্ভবত ফিলিপস অন্যদের কাছ থেকে খুব একটা সহায়তা পাচ্ছিলেন না। এ কারণে তিনি আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। দোকান ভেঙে চুরি করা শুরু করেছিলেন।
এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘যদি আপনি মারোকোপা যান, দেখবেন শহরের অর্ধেক মানুষ তাঁকে সমর্থন করতেন এবং অর্ধেক মানুষ মনে করতেন, তিনি একজন অপরাধী।’
তবে বেশ কিছুদিন ধরে তাঁকে সহায়তাকারীর সংখ্যা দ্রুত কমছিল।
২০২১ সালে পালানোর পর ফিলিপস বেশ কয়েকটি অপরাধের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন বলে সন্দেহ ছিল পুলিশের। তাঁর বিরুদ্ধে ডাকাতি, মানুষকে আহত করা ও অবৈধভাবে অস্ত্র রাখার অভিযোগে মামলা করা হয়।
ফিলিপসের তিন সন্তানের মা ক্যাট বলেন, এসবের শেষ দেখে তিনি স্বস্তি বোধ করছেন।
ক্যাট দেশটির জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম আরএনজেকে সন্তানদের নিয়ে বলেন, ‘প্রায় চার বছর প্রতিদিন আমি ভীষণভাবে তাদের অভাব বোধ করেছি। আমি ভালোবাসা ও যত্ন নিয়ে তাদের বাড়িতে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় আছি। একই সঙ্গে আজকে যে ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য আমাদের দুঃখ হচ্ছে।’
ক্যাট সবার কাছে তাঁর পরিবারের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার অনুরোধ করেছেন। যেন শিশুগুলো ‘দীর্ঘ ও কষ্টকর যাত্রা’ শেষে একটি ‘স্থির ও স্নেহময় পরিবেশে’ নিজেদের আবার খুঁজে পেতে পারে।