এই হীরার আংটি দিয়ে বাগ্‌দান সেরেছেন জনপ্রিয় গায়িকা টেইলর সুইফট। এটির দাম ১০ লাখ ডলারের বেশি
এই হীরার আংটি দিয়ে বাগ্‌দান সেরেছেন জনপ্রিয় গায়িকা টেইলর সুইফট। এটির দাম ১০ লাখ ডলারের বেশি

বাগ্‌দানে হীরার আংটির প্রচলন কীভাবে হলো, এটি কেন এত দামি

ছেলেরা বাগ্‌দানের জন্য একটি হীরার আংটি কিনতে দশকের পর দশক ধরে বেশ অর্থ ব্যয় করেন। সামাজিক এ মানদণ্ড বা হীরার এই বিশেষ মর্যাদা, এটা কিন্তু হঠাৎ করেই হয়নি।

বরং এ গল্পের শুরু সেই ১৮৭০ সালে। ওই বছর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে নিজের ভাগ্য পরীক্ষার জন্য সিসিল রোডস রওনা দেন কেপ কলোনিতে। ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকার সময় বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকার নাম ছিল কেপ কলোনি।

কেপ কলোনিতে তখন খনি থেকে হীরা উত্তোলন ব্যবসা সবে ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করেছে। রোডস সেখানে গিয়ে হীরার খনির মালিকদের কাছে পানি সেচার পাম্প ভাড়া দেওয়া শুরু করেন। হীরা অনুসন্ধানের সময় খনি যাতে প্লাবিত না হয়, সে জন্য খনির ভেতর থেকে পাম্প দিয়ে পানি সেচা হয়।

পরবর্তী ২০ বছরে রোডস ও তাঁর সহযোগী চার্লস রাড শত শত, পরে হাজার হাজার ছোট ছোট খনি ও ‘ক্লেইম’ কেনা বা অধিগ্রহণ করতে শুরু করেন। ‘ক্লেইম’ বলতে ওই জমিকে বোঝানো হয়, যেখানে হীরা পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করা হয়। খনির মালিকেরা যখন দেউলিয়া হওয়ার মুখে পড়তেন, তখন অনেকটা নামমাত্র মূল্যে খনি বিক্রি করে দিতেন।

সেখানে অধিকাংশ খনি ছোট ছোট মালিকানায় ছিল। তাঁদের হাতে তেমন অর্থ থাকত না। অন্যদিকে রোডস ও রাডের হাতে বড় অঙ্কের পুঁজির জোগান ছিল। বিশেষ করে লন্ডনে তাঁদের যোগাযোগ থাকার সুবাদে রথসচাইল্ড ব্যাংকিং সাম্রাজ্যের সহায়তা তাঁরা পেতেন।

রোডস ও রাড তাঁদের কেনা জমিগুলো একত্র করে বড় খনিতে রূপান্তর করতে থাকেন। এতে খরচ কমে যায় এবং হীরা উত্তোলন কার্যক্রম আরও লাভজনক হয়ে ওঠে।

রোডস ও রাড তাঁদের কেনা জমিগুলো একত্র করে বড় খনিতে রূপান্তর করতে থাকেন। এতে খরচ কমে যায় এবং হীরা উত্তোলন কার্যক্রম আরও লাভজনক হয়ে ওঠে।

দুজন ‘ডি বিয়ার্স কনসোলিডেটেড মাইনস’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করেন। ডি বিয়ার্স নামটি এসেছিল তাঁদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া একটি খনির নাম থেকে।

১৮৮৮ সালের মধ্যে কোম্পানিটি দক্ষিণ আফ্রিকার হীরার খনি ও ক্লেইমগুলোতে প্রায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ নেয়।

১৯০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মোট রপ্তানি আয়ের ২৫ শতাংশের বেশি আসত হীরা রপ্তানি থেকে। সে সময় ডি বিয়ার্স দেশটির অর্থনীতির অন্যতম মূল চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়। কোম্পানিটি তখন বিশ্বে হীরার মোট সরবরাহের প্রায় ৯০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ করত।

রোডস নিজেই সে সময় একজন উল্লেখযোগ্য সাম্রাজ্যবাদী নেতায় পরিণত হন। ১৮৯০ সাল থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি কেপ কলোনির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ডি বিয়ার্স প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী নীতির ওপর ভর করে। দেশটিতে সে সময়ে শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের শাসন জারি ছিল।

নামমাত্র মজুরিতে হীরার খনিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন কৃষ্ণাঙ্গরা। আর ডি বিয়ার্সের শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় বিনিয়োগকারীরা মুনাফা ভোগ করতেন।

১৯০২ সালে রোডসের মৃত্যুর পর ডি বিয়ার্সের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় জার্মান বংশোদ্ভূত উদ্যোক্তা আর্নেস্ট ওপেনহেইমারের হাতে।

ওপেনহেইমার আর্থিক প্রণোদনা, কৌশলগত চাপ ও কূটনীতির সমন্বয় ব্যবহার করে অন্যান্য দেশের হীরা সরবরাহকারীদের শুধু লন্ডনভিত্তিক ডি বিয়ার্সের মালিকানাধীন সেন্ট্রাল সেলিং অর্গানাইজেশনের (সিএসও) মাধ্যমে হীরা বিক্রয় করতে রাজি করান।

ডি বিয়ার্সের প্রচারণার জোরে যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ের কনেদের হীরার আংটি পরার প্রবণতা ১৯৪০ সালে ১০ শতাংশ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশে পৌঁছে যায়। জাপানে এই সংখ্যা ১৯৬০ সালে ৫ শতাংশের কম ছিল, ১৯৮১ সালে তা বেড়ে ৬০ শতাংশে পৌঁছে।

১৯৩০–এর দশকে সিএসও কাটা হয়নি, এমন হীরা বিক্রির একক চ্যানেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

ফলে ডি বিয়ার্স হীরার বিশাল মজুত গড়ে তুলতে সক্ষম হয় এবং বিশ্ব বাজারে হীরা সরবরাহের ওপর প্রায় একক ও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে প্রতিষ্ঠানটি। এই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তারা বিশ্বব্যাপী হীরার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে।

হীরার ঘাটতি নিয়ে বিভ্রম তৈরির পাশাপাশি ডি বিয়ার্স এই রত্নের প্রতি বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির চেষ্টা করে যেতে থাকে। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি ফিলাডেলফিয়াভিত্তিক বিজ্ঞাপন সংস্থা এনডব্লিউ আয়ারকে এ কাজে নিয়োগ দেয়।

এক বছর পর হীরা নিয়ে প্রায় কিংবদন্তি হয়ে যাওয়া স্লোগানটি চালু হয়। সেটি হলো, ‘আ ডায়মন্ড ইজ ফরএভার’ (হীরা চিরস্থায়ী)।

ব্যাপক বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্রে প্রদর্শন ও তারকাদের ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি হীরাকে বিশেষ করে হিরার বাগ্‌দানের আংটিকে ‘চিরস্থায়ী ভালোবাসার’ প্রতীক হিসেবে নতুনভাবে উপস্থাপন করে। যেমন তারা বড় অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য তারকাদের হীরার গয়না ধার দিত। এই প্রচার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানের হীরার বাজারকে পুরোপুরি পাল্টে দেয়।

১৯৯০–এর দশকের শেষ দিকে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আরও বড় অভিযোগ ওঠে। ওইসব অভিযোগে বলা হয়, হীরা বাণিজ্যের মাধ্যমে অ্যাঙ্গোলা, সিয়েরা লিওন ও কঙ্গোয় রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের অর্থায়ন হচ্ছে, যা হীরার ওপর ভোক্তাদের মনোভাব আরও খারাপ করে তোলে।

২০১১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬৪ বছর ধরে চলা এই বিজ্ঞাপন বিশ্বব্যাপী অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। ‘অ্যাড এজ’ সাময়িকী ‘আ ডায়মন্ড ইজ ফরএভার’–কে ২০ শতকের সেরা বিজ্ঞাপনী স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

ডি বিয়ার্স এমন একটি সামাজিক মানদণ্ড তৈরি করেছিল, যেখানে বিয়ে বা বাগ্‌দানে হীরার আংটি প্রতিটি আধুনিক সমাজব্যবস্থায় প্রায় অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠে।

অথচ ডি বিয়ার্সের এই প্রচারের আগে, একজন প্রেমিক তাঁর ভবিষ্যৎ কনের জন্য লকেট, মুক্তার মালা বা পারিবারিক ঐতিহ্যবাহী গয়না দিতেন।

ডি বিয়ার্সের প্রচারের জোরে যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ের কনেদের হীরার আংটি পরার প্রবণতা ১৯৪০ সালে ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৮০ সালের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশে পৌঁছে যায়। জাপানে এই সংখ্যা ১৯৬০ সালে ৫ শতাংশের কম ছিল, ১৯৮১ সালে তা বেড়ে ৬০ শতাংশে পৌঁছে।

১৯৫০–এর দশকের শুরুতে একটি হীরার আংটির দাম সাধারণত ১৭০ ডলারের মতো ছিল। ডলারের বর্তমান মূল্য হিসাবে যা প্রায় ২ হাজার ৩০০ ডলারের মতো।

গবেষণাগারে উৎপাদিত হীরা ও হীরার মতো দেখতে অন্যান্য অনেক সস্তা পাথরে এখন বাজার সয়লাব। সেসব পাথর দেখতে এতটাই হীরার মতো যে জহুরির চোখ দিয়ে বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কেবল সেগুলোর পার্থক্য ধরা সম্ভব।

শুরুতে ডি বিয়ার্সের বিজ্ঞাপনগুলোতে বাগ্‌দানের আংটির জন্য এক মাসের বেতন খরচ করার পরামর্শ দিত। কিন্তু ১৯৮০–এর দশকে তারা নতুন স্লোগান তোলে। বিজ্ঞাপনে ভোক্তাদের দিকেই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলা হতে থাকে, কীভাবে আপনি দুই মাসের বেতন চিরকাল স্থায়ী করতে পারেন।

অথচ হীরা আবার বিক্রি করতে গেলে তার দাম অর্ধেক হয়ে যায়। সেখানে সোনার বেলায় পুরো উল্টো ঘটনা ঘটে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ডি বিয়ার্সের একটি হীরার খনি। ৩ মে, ২০১৭

বাজার নিয়ন্ত্রণে মনোপলি কৌশল

১৯৭০–এর দশকের শেষের দিক থেকে ডি বিয়ার্স প্রতিবছর প্রায় ৫ কোটি ক্যারেট হীরা বিক্রি শুরু করে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই হীরা বিক্রি করে তারা ২০০ কোটি ডলারের বেশি আয় করে।

তবে ১৯৮০–এর দশকের শুরু থেকে কোম্পানিটির সামনে নানা সংকট উপস্থিত হতে শুরু করে।

সে সময় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ত্বরান্বিত হয়, ডি বিয়ার্সের ওপর নজরদারি বাড়তে থাকে।

ডি বিয়ার্সের কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রতিবেদনগুলো চমকে ওঠার মতো ছিল। কোম্পানিটি খনির শ্রমিকদের খুবই কম মজুরি দিত, শ্রমিকদের নিরাপত্তা প্রশিক্ষণের সুযোগও ছিল কম। শ্রমিকেরা যেখানে থাকতেন, সেই জায়গাটি কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা থাকত এবং শ্রমিকদের তল্লাশির জন্য নিরাপত্তাচৌকি বসানো হয়েছিল।

ডি বিয়ার্সকে নিয়ে এই নেতিবাচক প্রচার প্রতিষ্ঠানটিকে বর্ণবৈষম্যের প্রধান সুবিধাভোগীদের একজন হিসেবে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে।

ডি বিয়ার্সের বিরুদ্ধে আগে থেকেই একচেটিয়া ব্যবসার অভিযোগ উঠেছিল। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মূল্য নির্ধারণে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়।

গ্র্যান্ড জুরির পক্ষ থেকে করা ওই অভিযোগের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠানটিকে নিষিদ্ধ করা হয়। তার পর থেকে গ্রেপ্তার হতে পারেন এই ভয়ে তাদের নির্বাহীরা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বন্ধ করে দেন।

১৯৯০–এর দশকের শেষ দিকে ডি বিয়ার্সের বিরুদ্ধে আরও বড় অভিযোগ ওঠে। ওইসব অভিযোগে বলা হয়, হীরা বাণিজ্যের মাধ্যমে অ্যাঙ্গোলা, সিয়েরা লিওন ও কঙ্গোয় রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের অর্থায়ন হচ্ছে, যা হীরার ওপর ভোক্তাদের মনোভাব আরও খারাপ করে তোলে।

সেসব প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো’ অপেক্ষাকৃত সহজে উত্তোলনযোগ্য খনিগুলো তাদের লক্ষ্যবস্তু করত। সেগুলো দখল করে সেখান থেকে উত্তোলিত হীরা কালোবাজারে বিক্রি করত এবং সেই অর্থ দিয়ে অস্ত্র কিনত। তারা শিশুদেরও ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজে ব্যবহার করত। সেখান থেকেই ‘ব্লাড ডায়মন্ড’ কথাটি প্রচলিত হয়।

ডি বিয়ার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তারা এসব ঘটনা জেনেও চোখ বন্ধ করে থেকেছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।

কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার ততদিনে হয়ে গেছে। ডি বিয়ার্সের বিক্রি দুই বছরে ২০ শতাংশের বেশি কমে যায়। তাদের হীরা বিক্রি ১৯৯৯ সালে প্রায় ৫৭০ কোটি ডলার থেকে কমে ২০০১ সালে ৪৪৫ কোটি ডলারে নেমে আসে।

ভারতের সুরাটে একটি হীরা প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটের গ্রেডিং বিভাগে একজন কারিগর পলিশ করা হীরার গ্রেড যাচাই করছেন, ৩ এপ্রিল, ২০২৫

হীরা কি তবে চিরস্থায়ী নয়

হীরা কি আসলেই চিরস্থায়ী, গত কয়েক বছরে এ প্রশ্ন জোরেশোরে উঠেছে। গবেষণাগারে উৎপাদিত হীরা ও হীরার মতো দেখতে অন্যান্য অনেক সস্তা পাথরে এখন বাজার সয়লাব। সেসব পাথর দেখতে এতটাই হীরার মতো দেখতে যে জহুরির চোখ দিয়ে বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কেবল সেগুলোর পার্থক্য ধরা সম্ভব। ফলে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে খনি থেকে উত্তোলিত প্রাকৃতিক হীরার আকর্ষণ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।

গত দুই বছরে হীরাশিল্পের জন্য বড় আঘাত হয়ে এসেছে এসব সস্তা কৃত্রিম হীরা বা হীরার মতো পাথর। এ ছাড়া মার্কিন ও চীনা ভোক্তাদের কাছে হীরার চাহিদা কমে যাওয়া, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা উচ্চ শুল্ক মিলিয়ে হীরা ব্যবসার জন্য একটি ধ্বংসাত্মক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

হীরার ব্যবসায় এই ধসের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অ্যান্টওয়ার্প ওয়ার্ল্ড ডায়মন্ড সেন্টার বলেছে, ২০২৪ সালে খনি থেকে উত্তোলিত পলিশ করা হয়নি এমন হীরার আমদানি ৩৫ শতাংশ কমে গেছে, আর বার্ষিক বাণিজ্য কমেছে ২৫ শতাংশ। যার অর্থমূল্য প্রায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ডলার থেকে ২ হাজার ৪৪০ কোটি ডলার।

ভারতে হীরার গয়না প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র সুরাটে কমপক্ষে ৫০ হাজার হীরাশ্রমিক ২০২৪ সালে বেকার হয়ে পড়েছেন। গত দুই বছরে অন্তত ৮০ জন ভারতীয় হীরাশ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন।

২০১১ সালে ওপেনহেইমার পরিবার ডি বিয়ার্সে থাকা তাদের শেয়ার লন্ডনভিত্তিক খনি সংস্থা ‘অ্যাঙ্গোলা আমেরিকান’–এর কাছে ৫০০ কোটি ডলারে বিক্রি করে দেয়।

এখন ‘অ্যাঙ্গোলা আমেরিকান’ও ক্ষয়িষ্ণু এই ব্যবসা থেকে বেরিয়ে তামা, লোহা ও বিরল খনিজের ব্যবসার দিকে মন দিতে চায়। তাই আবারও হীরা বিক্রির বাজারে উঠেছে ডি বিয়ার্স, বিক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে ৫০০ কোটি ডলার।

হীরার বাজারে এই অস্থিরতার পরও ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী ভোক্তাপর্যায়ে হীরার মোট বিক্রি প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে একটি সাধারণ মানের হীরার আংটির গড় দাম ৬ হাজার ৭৫০ ডলার।

ন্যাচারাল ডায়মন্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে একজন সাধারণ মানুষ প্রতি মাসে যে আয় করেন, সে হিসাবে একটি সাধারণ মানের হীরার আংটি কিনতে তাদের প্রায় দেড় মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। মধ্যম আয়ের একটি দেশে এটি প্রায় আট মাসের বেতনের সমপরিমাণ।

আর বিশেষ বিশেষ হীরার ক্ষেত্রে দাম সাধারণ মানুষের নাগালের অনেক বাইরে। যেমন লন্ডনে নাশপতি আকারের ২২৮ দশমিক ৩১ ক্যারাটের একটি হীরা দেখতে হলে আগে থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়। সেটির দাম তিন কোটি ডলারের বেশি বলে অনুমান করা হয়।