প্রাথমিক তদন্তের পর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হবে
রাখাইনে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ করায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযান ও হত্যাযজ্ঞের বিচারে আইসিসি এ পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর পূর্ণ তদন্তের পথ খুলে গেল।
গত মাসে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বকে বিচারের আহ্বান জানিয়ে দেওয়া জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন মিয়ানমার প্রত্যাখ্যান করেছে।
মিয়ানমারে সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে’, সেটি তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশটির সেনাবাহিনী। ওই প্রতিবেদনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। কোনো রোহিঙ্গাকে হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, নারীদের ধর্ষণ বা লুটপাটের বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই তদন্ত প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছে এবং তা ‘হোয়াইট ওয়াশ’ করার প্রচেষ্টা বলে বর্ণনা করেছে।
গতকাল আইসিসির আইনজীবী ফাউতো বেনসোদা বলেছেন, বর্তমানে পুরো বিষয়টি প্রাথমিক পূর্ণ তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
বেনসোদা বলেন, প্রাথমিক তদন্তের পরে বিষয়টি আইসিসির আনুষ্ঠানিক তদন্তে রূপ নিতে পারে। এর মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘন, খুন, যৌন সহিংসতা, গুম, ধ্বংস ও লুটপাটের মতো বিষয় রয়েছে।
বেনসোদা বলেছেন, হেগভিত্তিক আদালত রোহিঙ্গাদের দুর্দশায় নির্যাতন বা অন্য অমানবিক কাজের যোগসূত্র আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখবেন।
মিয়ানমার আইসিসিতে স্বাক্ষর না করলেও বিচারকেরা রুল দিয়েছেন যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার চলবে, কারণ বাংলাদেশ আইসিসির সদস্য।
আজ বুধবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট মিয়ানমারের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। এমন সময় আইসিসির কাছ থেকে তদন্তের ঘোষণা এল।
হান্ট রাখাইনের উত্তরাঞ্চল পরিদর্শনে যাবেন। ওই অঞ্চল থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এ ছাড়া তিনি দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
এর আগে গতকাল সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের শীর্ষ জেনারেলদের বারবার অভিযুক্ত করে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। রোহিঙ্গা সংকটে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলেন, ‘রাজনীতি থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে সরানো উচিত বলে মন্তব্য করেছেন।
জাতিসংঘের ৪৪৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্ব পরিবর্তন করা উচিত। সেই সঙ্গে দেশটির প্রশাসনের ওপর বাহিনীটি যেন আর কোনো ধরনের প্রভাব না রাখে, সেই ব্যবস্থা করা উচিত।
সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, বৌদ্ধ জাতিগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির শাসনকর্তা কার্যত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। পার্লামেন্টে এক-চতুর্থাংশ আসন সেনাবাহিনীর দখলে এবং তিনটি মন্ত্রণালয়ও তাদের নিয়ন্ত্রণে। ২০১১ সালে দেশটিতে রাজনৈতিক সংস্কার শুরু হওয়ার পরও তারা দাপট ধরে রেখেছে।
জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রধান মারজুকি দারুসম্যান জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বলেছেন, নিষ্ঠুরতার স্তর অনুমান করা কঠিন। বেসামরিক জীবনের জন্য বিশাল অসম্মান।
প্রতিবেদনে জাতিসংঘে মিয়ানমারের দূত কাউ মো তুনকে প্রতিবেদন ‘একপেশে’ ও ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলায় সমালোচনা করা হয়েছে।